বয়স পেরিয়েছে বিরানব্বই। তবু থামেননি। এখনো গিটার কাঁধে তুলে মঞ্চে ওঠেন উইলি নেলসন। আমেরিকার দীর্ঘ পথ, মানুষের আশা, ক্ষয় আর ভালোবাসার গল্প যেন তাঁর কণ্ঠে নতুন করে বেঁচে ওঠে। নিউইয়র্কের আশপাশে অনুষ্ঠান থাকলে তিনি থাকেন নিজের বাসেই। ব্যান্ডের সদস্যরা শহরের হোটেলে ঘুমালেও নেলসনের দিন চলে নিজের ছন্দে। ডমিনো খেলা, হালকা ব্যায়াম, একটু ঘুম আর তারপর আবার গান। শরীর নিয়ে তাঁর মন্তব্য সাদামাটা, আজ সকালে ঘুম ভেঙেছে, এটুকুই যথেষ্ট।
নিউ জার্সি থেকে ক্যামডেনের মঞ্চ
সেপ্টেম্বরের এক রাতে ক্যামডেনের বড় মঞ্চে ওঠেন নেলসন। কালো পোশাকে ব্যান্ড, হাতে খড়ের কাউবয় টুপি। পর্দার আড়াল থেকে শুরু হয় সেই পরিচিত গান, যেখানে অভিবাসীদের গল্প, সংগ্রাম আর আশ্রয়ের আকুতি ভেসে আসে। গান শেষ হতেই মঞ্চের পর্দা সরে যায়, শুরু হয় পুরোনো উদ্বোধনী সুর, পেছনে উড়ে ওঠে বিশাল পতাকা। এই দৃশ্য শুধু সংগীত নয়, আমেরিকার বর্তমান সময়ের সঙ্গেও যেন কথা বলে।
গানই তাঁর ওষুধ
ফুসফুসের জটিল রোগে ভুগছেন নেলসন। কোভিডের ধাক্কা সামলে ফিরেছেন। তবু গান ছাড়েননি। চিকিৎসকের ব্যায়াম বাদ দিলেও গান তাঁর কাছে শ্বাস নেওয়ার মতো। কন্যার ভাষায়, গানই হয়তো তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কখনো পুরো কনসার্টে থাকতে না পারলে ছেলেরা তাঁর জায়গায় মঞ্চ সামলায়। তবু কয়েক মাস পর আবার নিজেই ফিরে আসেন।
মঞ্চই তাঁর ঘর
শৈশব থেকে জীবনের বড় অংশ কেটেছে পথে পথে। কাজ যেখানে, সেখানেই ছিল ঘর। টেক্সাসে কখনো বাসন মাজা, কখনো গ্যাস পাম্প, কখনো রেডিওতে কাজ। নিজের লেখা গান সামান্য টাকায় বিক্রি করেছেন পরিবারের বাজার চালাতে। ঘর বদল ছিল নিয়তি। সেই সময় লেখা গানেই ঘরের খোঁজ, একাকীত্ব আর ক্ষয় ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত তিনি বুঝেছেন, তাঁর ঘর কোনো এক জায়গা নয়। মঞ্চই তাঁর বসার ঘর। প্রতিটি কনসার্টে একই কার্পেট, একই জায়গায় যন্ত্র, একই ছন্দ। বাস বদলালেও ভেতরটা থাকে আগের মতো।
পরিবারই ব্যান্ড
উইলি নেলসন অ্যান্ড ফ্যামিলি নামটাই সব বলে দেয়। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে একই মানুষদের নিয়ে পথচলা। কেউ মারা গেছেন, কেউ অসুস্থ, তবু সেই পরিবার ভাঙেনি। সাউন্ড এখন আগের চেয়ে সরল। কথার মতো গান, ছন্দের সঙ্গে কবিতা। এক ঘণ্টার একটু বেশি সময়ে দুই ডজন গান, মাঝখানে খুব কম কথা। তাড়াহুড়ো নেই, তবু সময়ের শাসন মানতে হয়।
কৃষকের পাশে দাঁড়ানো
এই যাত্রা শুধু গান নয়। কৃষকের ঋণ, গ্রাম হারানোর যন্ত্রণা নেলসনের নিজের জীবন থেকেই দেখা। ছোটবেলায় তুলা ক্ষেত, দারিদ্র্য, পরিবারের সংগ্রাম। সেই স্মৃতি থেকেই কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আন্দোলন। বহু বছর আগে শুরু করা সহায়তা উদ্যোগ এখনো চলছে। কৃষি ঋণ আবার পাহাড়সম, গ্রামে আত্মহত্যা বাড়ছে। নেলসনের কাছে এটি রাজনীতি নয়, নিজের গল্প।
আমেরিকার বড় তাঁবু
নেলসনের কনসার্টে কাউবয়, হিপি, শহরের মানুষ সবাই একসঙ্গে। বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়ান গানের ভেতর দিয়ে। ঘৃণা নয়, অন্যায়ের দিকে আঙুল তোলাই তাঁর ভঙ্গি। তিনি বলেন, মানুষ কয়েক ঘণ্টা একসঙ্গে গান গেয়ে বাড়ি ফেরে, মন হালকা করে। এই শক্তির আদান প্রদান তাঁর কাছে আসল।
শেষ না হওয়া যাত্রা
নতুন গান রেকর্ড হচ্ছে, নতুন অ্যালবাম আসছে। স্টুডিওতে অল্প টেকেই গান শেষ করেন। বয়স গতি কেড়েছে, কিন্তু অপেক্ষার ক্ষমতা দিয়েছে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেষ গান শেষে টুপি ছুড়ে বিদায় জানান। গিটার হাতে তাঁর যাত্রা যেন এখনো শেষ মহাসড়ক ধরে চলছেই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















