অনুবাদ : ফওজুল করিম
এ সম্পর্কে একজন ফরাসী পর্যবেক্ষকের অভিমত:
“দেশী ভারতীয়রা যদিও বা বুঝতে পারত যে তাজা পাতা থেকে ভাল নীল হয়, তাহলেও তারা তাদের সনাতন উৎপাদন পদ্ধতি পাল্টাতো না। বঙ্গদেশে ইউরোপীয়রা নীল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশ না নিলে নীল উৎপাদন তার শৈশবস্থা অতিক্রম করতে
পারত না। পন্ডিচেরি বন্দরে নীলের উপর অতিরিক্ত হারে শুল্ক আরোপ করা হত বলে পন্ডিচেরিতে ইউরোপীয় নীলকরদের আকর্ষণ করা ছিল দুরূহ। এর ফলে বাস্তবে যা হত তা হল ফরাসী পুঁজি পন্ডিচেরির বাইরে বৃটিশ এলাকায় ধাবিত এর “কিছু সংখ্যক ফরাসী নীলকর নীলের ব্যবসা থেকে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে ছিল একথা ঠিক। তবে, তারা তাদের উৎপাদিত নীল রফতানি করত পন্ডিচেরি থেকে নয় বরং মাদ্রাজ বন্দর (বৃটিশ ভারত) দিয়ে। তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ববিকে এনেছিল মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে। এভাবে তারা পন্ডিচেরির উচ্চ হারের শুল্ক এড়িয়ে যেত। ৭৯
পন্ডিচেরি বন্দর কর্তৃপক্ষ প্যারিস মন্ত্রণালয়ে শুল্ক হার কমানোর জন্য অনেক দেনদরবার করেন যাতে রফতানিকারকদের কাছে পন্ডিচেরি বন্দর বেশ লাভবান হয়। কিন্তু এতে কোনো ফলোদয় হয়নি। এর ফলে ১৮২৪ সালে পন্ডিচেরির ১৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নীলকুঠির সংখ্যা ছিল ৫৭। পন্ডিচেরিতে নীলের উৎপাদন যা ছিল ওই কারখানাগুলোতে নীল উৎপাদিত হত তার তিন গুণ।
পিয়ের-পল দারাক কেন?
এই সব কারণে বাংলার নীল শিল্প ও নীলের ব্যবসার সাফল্যের কারণগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন ছিল এবং এই শিক্ষা দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের ফরাসী উপনিবেশে কাজে লাগানো যায় কিনা তাও দেখার প্রয়োজন ছিল। এদিক থেকে বিবেচনা করলে পিয়ের-পল দারাকের নিয়োগ মনে হয় খুবই যুক্তিসঙ্গত।
১৭৭১ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সে দারাক”-এর জন্ম। ফ্রান্সের জিরন্তে তিনি ছিলেন। বন বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর। নৌবাহিনী ও ফরাসী উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ে ১৮১৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে এই মর্মে মন্ত্রণালয়কে তিনি অনুরোধ করেন যে তাকে যেন উত্তম আশা অন্তরীপের পূর্বে যে কোনো ফরাসী উপনিবেশে একটি তত্ত্বাবধানকারীর চাকুরি দেয়া হয়। সেই বছরের শেষের দিকে তাকে ঢাকার ফরাসী উপনিবেশের প্রধানের পদে নিয়োগ করা হয়। বেশ কয়েক বছর তিনি ঢাকার ফরাসী উপনিবেশের দায়িত্বে থাকেন। এর ফলে বাংলাদেশে অনুসৃত ফরাসী নীতি সম্পর্কে তাঁর সম্যক জ্ঞান হয়। এ ছাড়াও নীলের চাষ ও উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর ভাল অভিজ্ঞতা গড়ে ওঠে।
Leave a Reply