০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’ ডিজনিতে ফিরছেন বিটিএসের জিমিন ও জাংকুক, আসছে ‘আর ইউ শিওর?!’ সিজন–২ স্নেক সাও-স্কেলড ভিপার: এক ভয়ঙ্কর সাপের জীবন এবং বৈশিষ্ট্য টেইলর শেরিডান কীভাবে টেলিভিশনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিট–কারখানায় পরিণত হলেন মোবাইলে ক্রোমে এআই মোড আরও সহজ করল গুগল রোলিং স্টোন স্পেশাল ও ডিজে স্নেকের গানে একদিনেই তিন ফ্রন্ট খুলল স্ট্রে কিডস হরর-কমেডি ‘মেকিং আ ব্রাইডসমেইড’ শেষ, এখন স্ট্রিমিং বিক্রির পথে কেক বানানোর কৌশল: ঘরে বসেই নিখুঁত বেকিংয়ের গাইড লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্র্যান্ডে–এরিভোর চমক, ক্লাসিক ডুয়েটেই মাত করল হলিউড মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (অন্তিম পর্ব-৩৬৫)

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 69

শশাঙ্ক মণ্ডল

প্রথম অধ্যায়

এ ধরনের অসংখ্য অতীতের স্মারক সমগ্র সুন্দরবনের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে।জাদু মারণ উচাটন বশীকরণ ঝাড়ফুক মন্ত্র আদিম মানব সংস্কৃতির আচার-আচরণগুলি আজকের যুগে এসে ভিড় করেছে। এ এলাকার মানুষের মধ্যে এর ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে মানুষ বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করেছে দীর্ঘকাল ধরে এসব আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে। অসংখ্য লৌকিক দেবদেবী তার প্রতিদিনের আরাধ্য অসংখ্য উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে আদিম সংস্কৃতির চিহ্ন সংগোপনে সুন্দরবনের মানুষ এখনও ধারণ করে রেখেছে। তাই নৃতত্ত্ববিদদের কাছে সুন্দরবনের মানুষ এখনও এক জীবন্ত গবেষণাগার। টোটেম সংস্কৃতির প্রভাব মানুষের আচার-আচরণ জীবনচর্যার মধ্যে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হচ্ছে।

অতীতের স্মৃতি হিসাবে তার উপাধিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেজি, শিয়াল, কাঁটা, হাতি বাঘ আরও অনেক কিছু। পুরনো উপজীবিকাগুলি উপাধির মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে- কেউ ছিল ঘরামি ঘর ছাওয়া ছিল যাদের পেশা, কেউ কর্মকার কেউ বা পাইক, লস্কর, বরকন্দাজ আরও কত কিছু। অনেক গ্রামের নামের সাথে বৌদ্ধ স্মৃতি জড়িয়ে আছে- ভিখের আটি, মঠবাড়ি, মঠের দীঘি; হাবড়ার নিকটে কামারথুবা, হাটথুবা প্রভৃতি থুবাযুক্ত পাঁচ ছয়খানি গ্রামের উৎস স্তূপ। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাসভূমি ছিল। হুমায়ূন কবীরের মন্তব্য মনে পড়ে- “বঙ্গের বহু মুসলমান, ধর্মান্তরিত বৌদ্ধ। বঙ্গের আঠারো ভাটি অঞ্চলেও একদা বঙ্গালধর্মী বৌদ্ধ সহজমত ছড়ানো ছিল”।

কালক্রমে এসব অঞ্চলে শাহ আলি পীর গোরাচাদঁ, বড় খাঁ গাজী প্রমুখ পীরদের আস্তানায় পরিণত হয়- এভাবে বৌদ্ধধর্ম মিশ্রিত হল পীরগাজীদের ধর্মপদ্ধতির সাথে। অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মত এই এলাকার ইসলামি ধারার এক অংশকে স্পর্শ করে আছে সহজতান্ত্রিক বৌদ্ধধারা।বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষেরা দলে দলে এসে সুন্দরবনে বসবাস শুরু করেছে সমগ্র ব্রিটিশ রাজত্ব জুড়ে। সর্ব ধর্ম মত পথ সমুদ্রসঙ্গমে মিলে মিশে একাকার। মগের মুলুক সুন্দরবন ব্রিটিশ রাজত্বের পূর্বে- মগজলদস্যুদের অত্যাচার আর পরবর্তীকালে জমিদার,লাটদার, ইজারাদার, গাঁতিদার প্রভৃতি সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের অবাধ মৃগয়াক্ষেত্র। জঘন্যতম সামন্ততান্ত্রিক অত্যাচারের লীলাভূমি সুন্দরবন। সুন্দরবনের ডাঙায় বাঘ জলে কুমির- অত্যাচার শোষণের সব দুয়ার খোলা।

জমিদারদের লেঠেল বাহিনী, গ্রামের মহাজন, নানারকমের বিধি-বিধানের যাঁতাকলে মানুষগুলি বাঁধা; অসহায় এসব মানুষের রক্ষাকর্তা দেবতা, পীর, গাজী, ওঝা, গুনীন- এঁরাই মাঝে মাঝে বরাভয় দেন। ধর্মের বিভেদ ঘুচে যায়- বনে এলে ভাই ভাই। তাই পীরের দরজা সব ধর্মের ভক্তের জন্য খোলা। বাংলার অন্যত্র সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ, ধর্ম নিয়ে বিরোধ কিন্তু এখানে সব একাকার। পীর গোরাচাঁদের উৎসবে প্রথমে দুধ আনার দায়িত্ব পায় গোপেরা তারপর মুসলমানেরা পীরের ছিন্নি দেবার অধিকারী। ভেদাভেদ দূর হয় এভাবে; দক্ষিণ রায় আর বনবিবি সাম্রাজ্য ভাগ করে নেয়। পাশাপাশি তাদের অবস্থান। শাস্ত্র ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি মানুষদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলে না। পৌরাণিক দেবদেবীরা আছেন কিন্তু কিছুটা যেন কোণঠাসা। প্রাধান্য পান লৌকিক দেবদেবী, এদের পূজাবিধি এরা এদের মতো করে নেয়, যতটা সহজ সরল করা যায় তারই প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১০)

০৪:০০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শশাঙ্ক মণ্ডল

প্রথম অধ্যায়

এ ধরনের অসংখ্য অতীতের স্মারক সমগ্র সুন্দরবনের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে।জাদু মারণ উচাটন বশীকরণ ঝাড়ফুক মন্ত্র আদিম মানব সংস্কৃতির আচার-আচরণগুলি আজকের যুগে এসে ভিড় করেছে। এ এলাকার মানুষের মধ্যে এর ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে মানুষ বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করেছে দীর্ঘকাল ধরে এসব আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে। অসংখ্য লৌকিক দেবদেবী তার প্রতিদিনের আরাধ্য অসংখ্য উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যে আদিম সংস্কৃতির চিহ্ন সংগোপনে সুন্দরবনের মানুষ এখনও ধারণ করে রেখেছে। তাই নৃতত্ত্ববিদদের কাছে সুন্দরবনের মানুষ এখনও এক জীবন্ত গবেষণাগার। টোটেম সংস্কৃতির প্রভাব মানুষের আচার-আচরণ জীবনচর্যার মধ্যে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হচ্ছে।

অতীতের স্মৃতি হিসাবে তার উপাধিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেজি, শিয়াল, কাঁটা, হাতি বাঘ আরও অনেক কিছু। পুরনো উপজীবিকাগুলি উপাধির মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে- কেউ ছিল ঘরামি ঘর ছাওয়া ছিল যাদের পেশা, কেউ কর্মকার কেউ বা পাইক, লস্কর, বরকন্দাজ আরও কত কিছু। অনেক গ্রামের নামের সাথে বৌদ্ধ স্মৃতি জড়িয়ে আছে- ভিখের আটি, মঠবাড়ি, মঠের দীঘি; হাবড়ার নিকটে কামারথুবা, হাটথুবা প্রভৃতি থুবাযুক্ত পাঁচ ছয়খানি গ্রামের উৎস স্তূপ। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাসভূমি ছিল। হুমায়ূন কবীরের মন্তব্য মনে পড়ে- “বঙ্গের বহু মুসলমান, ধর্মান্তরিত বৌদ্ধ। বঙ্গের আঠারো ভাটি অঞ্চলেও একদা বঙ্গালধর্মী বৌদ্ধ সহজমত ছড়ানো ছিল”।

কালক্রমে এসব অঞ্চলে শাহ আলি পীর গোরাচাদঁ, বড় খাঁ গাজী প্রমুখ পীরদের আস্তানায় পরিণত হয়- এভাবে বৌদ্ধধর্ম মিশ্রিত হল পীরগাজীদের ধর্মপদ্ধতির সাথে। অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মত এই এলাকার ইসলামি ধারার এক অংশকে স্পর্শ করে আছে সহজতান্ত্রিক বৌদ্ধধারা।বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষেরা দলে দলে এসে সুন্দরবনে বসবাস শুরু করেছে সমগ্র ব্রিটিশ রাজত্ব জুড়ে। সর্ব ধর্ম মত পথ সমুদ্রসঙ্গমে মিলে মিশে একাকার। মগের মুলুক সুন্দরবন ব্রিটিশ রাজত্বের পূর্বে- মগজলদস্যুদের অত্যাচার আর পরবর্তীকালে জমিদার,লাটদার, ইজারাদার, গাঁতিদার প্রভৃতি সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের অবাধ মৃগয়াক্ষেত্র। জঘন্যতম সামন্ততান্ত্রিক অত্যাচারের লীলাভূমি সুন্দরবন। সুন্দরবনের ডাঙায় বাঘ জলে কুমির- অত্যাচার শোষণের সব দুয়ার খোলা।

জমিদারদের লেঠেল বাহিনী, গ্রামের মহাজন, নানারকমের বিধি-বিধানের যাঁতাকলে মানুষগুলি বাঁধা; অসহায় এসব মানুষের রক্ষাকর্তা দেবতা, পীর, গাজী, ওঝা, গুনীন- এঁরাই মাঝে মাঝে বরাভয় দেন। ধর্মের বিভেদ ঘুচে যায়- বনে এলে ভাই ভাই। তাই পীরের দরজা সব ধর্মের ভক্তের জন্য খোলা। বাংলার অন্যত্র সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ, ধর্ম নিয়ে বিরোধ কিন্তু এখানে সব একাকার। পীর গোরাচাঁদের উৎসবে প্রথমে দুধ আনার দায়িত্ব পায় গোপেরা তারপর মুসলমানেরা পীরের ছিন্নি দেবার অধিকারী। ভেদাভেদ দূর হয় এভাবে; দক্ষিণ রায় আর বনবিবি সাম্রাজ্য ভাগ করে নেয়। পাশাপাশি তাদের অবস্থান। শাস্ত্র ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি মানুষদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলে না। পৌরাণিক দেবদেবীরা আছেন কিন্তু কিছুটা যেন কোণঠাসা। প্রাধান্য পান লৌকিক দেবদেবী, এদের পূজাবিধি এরা এদের মতো করে নেয়, যতটা সহজ সরল করা যায় তারই প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়।