এই যে অন্তর্বিবাদে আমাদের সর্ব্বনাশ হইতেছে, প্রজাহিতৈষী রাজপ্রতিনিধি-গণের তাহার প্রতি দৃষ্টি আছে কি? যে সিরাজ ইংরেজ ঐতিহাসিক- গণের মতে ভয়ানক অত্যাচারী বলিয়া কথিত, তাহারও হিন্দুর প্রতি অনুরাগ দেখিলে অবাক্ হইতে হয়; সুতরাং তাহার সময়ে এরূপ অন্তবি-বাদের সম্ভাবনা ছিল না। যাহা হউক, সিরাজের রাজত্বের ভাল মন্দ বলিবার আবগুক নাই; তাহা যখন বিস্তৃতি-সাগরে ডুবিয়া গিয়াছে, তখন আর সে কথা তুলিয়া কাজ নাই।
তবে ইংরেজ ঐতিহাসিক-বর্ণিত অত্যাচারী সিরাজের রাজত্বে যে একটু আধটু আলোক ছিল, ইংরেজ-রাজত্ব সর্ব্বাংশে সুখকর হইয়াও তাহাতে সে টুকুর কেন অভাব হয় বুঝিতে পারি না। তাই স্বতঃই মনে উক্ত প্রশ্নের উদয় হইয়া থাকে। মহরম উপলক্ষে মুর্শিদাবাদ উৎসবময়। ধরণীগর্ভস্থিত সিরাজ সে উৎসব দেখিতেছে না।
জ্যোৎস্নাময়ী রজনীর কৌমুদীস্নাত ভাগীরথী-শোভা তাহার নয়নপথে পতিত হইতেছে না। কেবল চারিদিকে ঘনী-ভূত অন্ধকার তাহাকে বেষ্টন করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। আঁধার ভিন্ন আর কিছুই তাহার নিকটে নাই। তাহার সেই বিখণ্ডিত দেহের পরি-ণাম কি হইয়াছে, কি করিয়া বলিব? তিবে এতদিন যে মাটি হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহার আত্মীয় স্বজন এমন কেহ নাই যে, তাহার জন্য দুই এক বিন্দু অশ্রু বিসর্জন করে।
সকলেই একে একে অনন্তনিদ্রায় অভিভূত। খোশবাগের বৃক্ষান্ধকারে চিরদিনই তাহাকে অবস্থিতি করিতে হইবে। কেহ দেখিতে আসিবে না, কেহ কাঁদিতে আসিবে না। কেবল ভাগীরথীর কলধ্বনি ও ভ্রান্ত বায়ুচ্ছাসের হু হু রব ব্যতীত আর কোনও শব্দ তাহার নিকটে পঁহুছিবে কি না জানি না। আঁধারের জন্য যাহার জন্ম, তাহাকে অনন্ত জীবন আঁধারেই থাকিতে হইবে।
সমাপ্ত
শ্রী নিখিলনাথ রায় 


















