মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা, দেড় ঘণ্টা রণক্ষেত্র বোয়ালমারী
সারাক্ষণ রিপোর্ট
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বিকালে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
দেড় ঘণ্টা ধরে রণক্ষেত্র পৌরসভা এলাকা
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের কারণে বোয়ালমারী পৌরসভা, ওয়াপদা মোড় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে।
দুজনেই বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। সোমবার বিএনপি ২৩৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এই আসনের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে।
ধানের শীষ হাতে মিছিল, ইটপাটকেল ছোড়া
বেলা ৩টার দিকে শামসুদ্দিনের সমর্থকরা ওয়াপদা মোড়ে এবং নাসিরুলের সমর্থকরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মোড়ে জড়ো হন। তাদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠিতে বাঁধা ধানের শীষের প্রতীক।
বিকাল ৪টার দিকে নাসিরুলের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে ওয়াপদা মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন, অপরদিকে শামসুদ্দিনের সমর্থকরা কলেজমুখী হয়। পৌরসভার সামনে এলে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। নাসিরুলের সমর্থকরা সংখ্যায় বেশি থাকায় শামসুদ্দিনের পক্ষ পিছু হটে ওয়াপদা মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়।
পুলিশের উপস্থিতিতেও আগুন ও ভাঙচুর
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিব্বির আহমেদ ও থানার ওসি মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হামলা বেড়ে গেলে তারা স্থান ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এরপর নাসিরুলের সমর্থকরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থাকা অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভবনের নিচতলায় থাকা শামসুদ্দিন মিয়ার কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। আশপাশের দোকানেও হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে বলে জানা যায়।
ফায়ার সার্ভিস বাধার মুখে ফিরে যায়
বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চলে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মুখে পুলিশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গেলেও বাধা ও হামলার মুখে ফিরে আসেন।
বিএনপি নেতাদের পারস্পরিক অভিযোগ
বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “প্রশাসনকে জানিয়ে আমরা ওয়াপদা মোড়ে অনুষ্ঠান করছিলাম। এ সময় নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা ১০টি মোটরসাইকেল ও আমার কার্যালয়ে আগুন দেয়। এতে আমার ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ছবিও ভাঙচুর করা হয়েছে।”
অন্যদিকে বিএনপি নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম দাবি করেন, “আমি তখন মধুখালীতে ছিলাম। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়, একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওরা শপিং কমপ্লেক্সের উপরে উঠে আমাদের সমর্থকদের ইট ছুড়ে মারলে কয়েকজন আহত হন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা হামলা চালায়।”
সেনাবাহিনী নামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ফিরে এসে আগুন নেভায়।
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, “বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
#ফরিদপুর #বোয়ালমারী #বিএনপি #সংঘর্ষ #অগ্নিসংযোগ #রাজনীতি #মনোনয়ন #বাংলাদেশ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















