শ্রী নিখিলনাথ রায়
উক্ত জনশ্রুতি সত্য কি মিথ্যা বলা যায় না; তবে তৎকালে সাধারণের মনে যে ঐরূপ সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছিল, তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই! মীরণের দেহ রাজমহলে সমাহিত করা হয়। রাজমহলের যে স্থানে মীরণের সমাধি আছে, তাহাকে সরিফাবাজার কহে। সমাধিটি একটি জঙ্গলময় উদ্যানবাটিকার মধ্যে অবস্থিতি করিতেছে। সমাধিটি অদ্যাপি বর্তমান আছে বটে, কিন্তু তাহার প্রতি কাহারও তাদৃশ যত্ন না থাকায়, তাহা অধিক দিন পর্যন্ত বর্তমান থাকিবে বলিয়া বোধ হয় না। পূর্ব্বে এই সমাধিভবনটি প্রাচীরবেষ্টিত ছিল এবং ইহাতে লোকজনের বাসস্থানও ছিল।
এক্ষণে তৎসমুদায় ভগ্নস্তূপে পরিণত হইয়াছে; স্থানে স্থানে তৎসমুদায়ের চিহ্নমাত্র দেখিতে পাওয়া যায়। সমাধিটির যত্ন করিবার জন্য জাফরাগঞ্জের নবাব কর্তৃক একট লোক নিযুক্ত আছে বটে, কিন্তু তাহার প্রতি কোনই যত্ন লক্ষিত হয় না।। মারণের সমাধির প্রতি মীরণ-বংশীয়দিগের অধিকতর যত্নবান্ হওয়াই উচিত। নবাব-নাজিমদিগের সমাধিভবন পশ্চিম মুখে রাজপথের উপরই অব- স্থিত। এই বিস্তৃত সমাধিভবন নবাববংশীয়দিগের সমাধির দ্বারা এরূপ পরিপূর্ণ হইয়াছে যে, তথায় তিলমাত্রও স্থান নাই।
তথায় ভ্রমণ করিতে করিতে এইরূপ শঙ্কা উপস্থিত হয় যে, পাছে মৃতদেহের প্রতি কোনরূপ অসম্মান প্রদর্শিত হইয়া পড়ে। সমাধিভবনের মধ্যস্থলে একটি শ্রেণীতে সমস্ত নবাব-নাজিমগণ শায়িত আছেন। এই শ্রেণীর পূর্ব্ব সীমায় একটি আবৃত স্থানে গতিয়ারা বেগম নাম্নী নবাববংশীয় কোন সম্ভ্রান্ত মহিলার সমাধি। তাহার পশ্চিম হইতে একটি শ্রেণীতে ক্রমান্বয়ে দ্বাদশটি সমাধি আছে। পূর্ব্ব দিক হইতে আরম্ভ করিলে, প্রথমে মীরজাফরের পিতা সৈয়দ আহম্মদ নজফীর সমাধি দৃষ্ট হয়। তাহার পশ্চিমে মীরজাফরের ভ্রাতা ও রাজমহলের নবাব কাজম আলি খাঁর সমাধি।
তাহার পশ্চিমেই নবাব জাফর আলি খাঁ বা ইতিহাসপরিচিত মীরজাফর খ। শায়িত। মীরজাফরের নূতন পরিচয় দিবার আর আবশ্যক নাই; তাঁহাকে বঙ্গবাসিমাত্রেই সবিশেষ অবগত আছেন। মীরজাফর সম্ভ্রান্তবংশসম্ভূত; এই বংশ সৈয়দ বলিয়া পরিচিত। সৈয়দগণ মহম্মদ হইতে আপনাদিগের উৎপত্তি বলিয়া প্রকাশ করিয়া থাকেন। হীনাবস্থ হওয়ায়, জাফর প্রথমতঃ আলিবন্দী খাঁর সংসারে প্রতিপালিত হন। আলিবদ্দী তাঁহাকে সম্রান্তবংশোদ্ভব জানিয়া স্বীয় বৈমাত্রেয় ভগিনী শা খানমের সহিত তাঁহার বিবাহ দেন। শা খানমই মীরণের মাতা। মীরকাশেম শা খানমের।
Leave a Reply