শ্রী নিখিলনাথ রায়
এই হুমায়ু মঞ্জিল পূর্ব্বে কোম্পানীর বিচারালয় ছিল। মোবারকমঞ্জিল সুন্দর উদ্যান-মধ্যস্থিত একটি রমণীয় প্রাসাদ। তাহার ন্যায় মনোহর স্থল মুর্শিদাবাদে অতি অল্পই আছে। এই স্থানে কষ্টিপ্রস্তরনির্ম্মিত একখানি গোলাকার মসনদ আভ্যন্তরীণ চত্বর প্রাঙ্গণে অবস্থিত ছিল। এই মসনদ শা সুজার সময়ে নির্মিত হয়। ইহা রাজমহল হইতে ঢাকায়, পরে তথা হইতে মুর্শিদাবাদে আনীত হইয়াছিল। নবাব নাজিমগণ পূর্ব্বে ইহাতে উপবেশন করিতেন; এক্ষণে তাহা কলিকাতায় ভিক্টোরিয়া স্মৃতি-মন্দিরে অবস্থিতি করিতেছে।
হুমায়ুজা ১৮৩৮ খৃঃ অব্দে প্রাণত্যাগ করেন। হুমায়ু’জার পর তাঁহার পুত্র মনসুর আলি বা ফেরুছজা নিজামতের গদীতে উপবেশন করিয়াছিলেন। মনসুর আলিই বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব-নাজিম। তাঁহার সময়ে মুর্শিদাবাদের বর্তমান এমামবারা নিৰ্ম্মিত হয়। এই এমামবারা হুগলীর বিখ্যাত এমামবারা অপেক্ষাও বৃহৎ। বর্তমান এমামবারা পুরাতন এমামবারার নিকটেই নিম্মিত হইয়াছে। পুরাতন এমামবারা সিরাজ উদ্দৌলা-কর্তৃক নির্মিত হয়। সিরাজের এমামবারা মুর্শিদাবাদের মধ্যে একটি সুন্দর অট্টালিকা বলিয়া বিখ্যাত ছিল।
মহরমের সময় তথায় দশ দিবস মহা ধুমধাম হইত; মীরজাফর প্রভৃতিও মহরমের সময় তথায় গমন করিতেন। সিরাজের এমামবারার অনুকরণে মুর্শিদাবাদের অনেক সম্ভ্রান্ত লোকের বাটীতে এমামবারা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। সিরাজের এমামবারা নষ্ট হইয়া যাওয়ার, নবাব নাজিম মনসুর আলি খাঁ ১৮৪৭ খৃঃ অব্দে নূতন এমামবারা নির্মাণ করেন। কথিত আছে যে, নূতন এমামবারা ৮।১০ মাস মধ্যে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। কেবল মুসলমানদিগের দ্বারা ইহার নির্মাণক্রিয়া সম্পাদিত হয়। মনসুর আলি খাঁর সময় হইতেই মুর্শিদাবাদের সমস্ত গৌরবের অন্তর্ধান ঘটে।
তাঁহার সময়ে গবর্ণমেন্ট নিজামতের সম্মানের অনেক লাঘব করিয়া দেন। নবাব নাজিমের ১৯ তোপ ১৩ তোপে পরিণত হয়। মোবারক উদ্দৌলার সময় হইতে যে ১৬ লক্ষ টাকা নিজামত বৃত্তির জন্য চলিয়া আসিতেছিল, তন্মধ্যে নবাব নিজ ব্যয়ের জন্য ৭ লক্ষ টাকা পাইতেন। উক্ত ১৬ লক্ষ টাকা গবর্ণর জেনারেল ইচ্ছা করিলে কমাইতে পারিবেন বলিয়া প্রকাশ করা হয়; কিন্তু মনসুর আলির জীবনে গবর্ণমেন্ট তাহার লাঘব করিতে ইচ্ছা করেন নাই। পূর্ব্বে কেল্লামধ্যে নবাবের অনুমতি ব্যতীত কেহ প্রবেশ করিতে পারিত না; গবর্ণমেন্ট নবাব-নাজিমকে সে ক্ষমতা হইতেও বঞ্চিত করেন।
Leave a Reply