সারাক্ষণ ডেস্ক
কয়েক বছর ধরেই নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। গত দুই বছরে এ সংকট আরও গভীর হয়েছে। ডলারের তীব্র সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচার অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণের মাত্রা কেবল জোরালো করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সাধারণ মানুষ রীতিমতো পিষ্ট হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে অর্থনীতির একটি ভালো চেহারা দেখানোর চেষ্টা হলেও তা জনজীবনে স্বস্তি আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণ রেখে বিদায় নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল, সংকট নিরসনে সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া এবং তা বাস্তবায়নে যে দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখানোর প্রয়োজন ছিল, সেটিও করতে পারেনি সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার। বরং স্বজনতোষী বিভিন্ন পদক্ষেপ ও গোষ্ঠীর স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যস্ত ছিল এই সরকার, যার সুবিধা পেয়েছেন মূলত গুটিকয় ব্যবসায়ী আর ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়–পরিজন। অনেকটাই বিকল হয়ে পড়েছিল পুরো অর্থনীতি।
টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থেকেও অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিতে পারেনি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যেই সেসব উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক খাতে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ব্যাংক দখল করে নামে–বেনামে ঋণ নেওয়ার দিন শেষ হয়েছে।
গত এক মাসে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে শ্বেতপত্র প্রণয়নে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আজ জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করবে। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ নাগরিক কমিটি প্রকাশ করা হবে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ও সহস্রাধিক শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক দফার দ্বিতীয় ধাপ তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে নতুন রাজনৈতিক ভাষা ও জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে সমাজে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সঙ্গে মত আদান-প্রদানের মাধ্যমে নতুন ঐতিহাসিক বোঝাপড়ায় উপনীত হওয়া এবং সেই মোতাবেক বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও লিগ্যাসি বহন করে এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় নাগরিক কমিটি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর দেশের ৬৪ জেলা ও ১২ মহানগর এবং এরপর থানা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এ কমিটি।’
বিহার, পাঞ্জাবসহ শিল্পায়নে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রপাতি স্থাপনে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। জমি কেনার ক্ষেত্রেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ সরকারি সুবিধা। রাজ্যগুলোয় স্থাপিত শিল্প-কারখানায় নারী শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধেও ভারত সরকার অংশ নেবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পোশাক রফতানির বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য থেকে এসব নীতি সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রফতানিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এমন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। রাজ্যভিত্তিক শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধা ঘোষণা ছাড়াও দেশটি গত ১০-১৫ বছরে পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে অবস্থান টেকসই করতে নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশকে পেছনে ফেলারও লক্ষ্য রয়েছে তাদের। এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে পোশাক রফতানিতে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে পারেনি ভারত। এখনো বাংলাদেশের চেয়ে অর্ধেকেরও কম অর্থমূল্যের পোশাক রফতানি করছে দেশটি।
নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার রক্তমাখা বিপ্লব। ১৫ বছরের বেশি সময়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন উড়ে যায় ৩৬ দিনের গণ-আন্দোলনে। ৫ই আগস্ট নতুন এক বাংলাদেশের দেখা পায় বিশ্ব। হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনমুক্ত হয় দেশ। তার তিন দিনের মাথায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ, শঙ্কা-ষড়যন্ত্রের চাপ সামলে এক মাস
পার করেছে নতুন সরকার। সরকার পতনের পর সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিয়ে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে নতুন সরকার। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
প্রবাসীরা পাঠানো রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে সরকারের প্রথম মাসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা কাটতে শুরু করেছে। সচল হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বৈদেশিক সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব নেতাদের স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতার আশ্বাসে আস্থা ফিরছে জনমনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক মাস কোনো মূল্যায়নের সময় নয়। তবে এ পর্যন্ত নেয়া সরকারের উদ্যোগ সন্তোষজনক। সামনে আরও কাজ করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে। সামনের এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মানুষের আস্থা ফেরানোর মতো আরও উদ্যোগ দৃশ্যমান করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ সরকারের এক মাস মেয়াদের বিষয়ে বলেন, একমাস আসলে মূল্যায়নের সময় না। সরকার একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। প্রশাসন, পুলিশ সব জায়গায় একটা শূন্যতা ছিল। সরকার এখন ঘর গোছানোর কাজ করছে। এর মধ্যে আর্থিক খাতে কিছু ভালো নিয়োগ হয়েছে। যা আমাদের আশা জাগাচ্ছে।
Leave a Reply