তৃতীয় অধ্যায়
সুন্দরবন এলাকার উত্তরাংশে ব্রিটিশ রাজত্বে চিনি ও গুড় শিল্প এক উল্লেখযোগ্য শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কৃষকরা বেশি করে এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তা উনিশ শতকের শুরুতে লক্ষ করা যাচ্ছিল। চিনি শিল্পে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হত প্রধানত খেজুর গাছ থেকে। অবশ্য অনেক জমিতে সে যুগে আখ চাষ করা হত।
১৭৯১ এর পরে এই এলাকায় আখের চাষ কমেছে। ৭৬ মন্বন্তর এর পরবর্তী বছরগুলিতে বিশেষ করে ১৭৮৬-৮৮ এর বন্যার পরবর্তীকালে চাষিরা ধান চাষের দিকে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছিল। আখের চাষ কম হলেও খেজুর গাছকে কেন্দ্র করে এই বিরাট এলাকায় উনিশ শতকের শেষ দশক পর্যন্ত এই শিল্পের বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন যশোর জেলায় বেশ কয়েকজন সাহেব কয়েকটি চিনিকল প্রতিষ্ঠা করেন। কোটচাঁদপুরে ‘দি ধোবা সুগার ফ্যাকটরিতে’ ইউরোপীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় এবং পাশ্চাত্য দেশীয় পদ্ধতিতে চিনি উৎপাদনের চেষ্টা হয়। ১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে এই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
মিঃ মিডহাউস কোটচাঁদপুরের এই কারখানা কিনে নেন। Westland-এর রিপোর্টে জানা যাচ্ছে ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দেও ঐ কারখানা চলছে। Glatstone Wylee Co. ১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দে চৌগাছাতে চিনির কারখানা খোলে এবং মালকেনার জন্য কেশবপুর ক্রিমোহিনী, ঝিঙ্গেগাছা, নারকেলবেড়িয়া, কোটচাদপুর, চাঁদুড়িয়া, সাড়াপুল, বাদুড়িয়াতে আড়ত খোলে। ১৮৫০-এর দিকে এই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তাহেরপুরে খেজুরের গুড় থেকে মদ তৈরির জন্য একটা কারখানা সাহেবরা প্রতিষ্ঠা করে।
কিন্তু ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি চিনি শিল্পের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। দেশীয় বণিকরা এই শিল্পে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। দেশীয় শিল্পীরা ছোট ছোট কারখানার মাধ্যমে চিনি শিল্পের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করে।
Sarakhon Report 



















