০৩:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৬৭)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
  • 18
শশাঙ্ক মণ্ডল
চিনি গুড় শিল্প

তৃতীয় অধ্যায়

যশোর খুলনা ২৪ পরগনা বাখরগঞ্জ সহ অন্যান্য জেলায় শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস বের করার পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত ছিল। প্রতিটি গ্রামে গাছ থেকে রস বের করার কাজে শিউলিরা নিয়োজিত থাকত। কার্তিক মাসের দিকে খেজুর গাছের এক পাশের পাতা ছেটে গাছ পরিষ্কার করে অগ্রহায়ণ মাস থেকে রস বের করে সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় করার পদ্ধতি।

কৃষক পরিবার জানত। গুড় জ্বাল দেবার জন্য জালা ও মাটির ভাড় তৈরি এলাকার কুমাররা পটু ছিল। বিভিন্ন গ্রামের কুমাররা শীতকালে গৃহস্থদের রস জ্বালিয়ে গুড় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্র সরবরাহ করত। গ্রামে গঞ্জে অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠেছিল। কোট চাঁদপুর, কেশবপুর, চাঁদুড়িয়া, চৌগাছা, গোবরডাঙ্গা, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, টাকী, খুলনা জেলার দেবহাটা, কুশলিয়া, বড়দল, নবেকী, বাঘের হাট পটুয়াখালি গুড়ের গঞ্জ হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছিল।

বড় বড় চিনির কারখানাগুলি তাদের এজেন্ট বা ব্যাপারীর মারফত বিভিন্ন হাট থেকে গুড় কিনত সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে। অনেক সময় চাষিদের কাছ থেকে গুড় সংগ্রহের জন্য আশ্বিন কার্তিক মাসে চাষিদের কিছু টাকা অগ্রিম হিসাবে দিত। ব্যাপারীরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের দূরতম প্রান্তে খুলনার বিভিন্ন অংশে গুড় সংগ্রহ করার জন্য হাটে যেত এবং চাষিদের কাছ থেকে গুড় সংগ্রহ করত। খুলনার বড়দল, নবেকি সে যুগে গুড়ের হাট হিসাবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল।

শিবসা নদীর তীরে বড়দল হাট সপ্তাহে একদিন বসত। দূরদূরান্ত থেকে নৌকায় গুড় নিয়ে আসত ব্যাপারীরা। এই গুড় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বড় ব্যাপারীরা চালান দিত। যশোরের চিনিকলের মালিকরা তাদের এজেন্ট মারফত এসব হাট থেকে গুড় সংগ্রহ করত। শীতকালে গুড়কে কেন্দ্র করে কুমারদের ব্যবসা তেজী হয়ে উঠত।

নানা রকমের মাটির পাত্র নিয়ে তারা হাটে যেত। গুড় বিক্রয় করে চাষিরা তাদের প্রয়োজনমতো মাটির ভাড়, জ্বালা ইত্যাদি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরত। খেজুর গাছ থেকে রস ধরবার জন্য ভাড় থেকে শুরু করে রস জলা দেবার পাত্র, গুড় রাখার পাত্র নানা রকমের মাটির পাত্রের প্রচলন সে যুগে ছিল।

 

জুলাইয়ে সম্ভাব্য বন্যা: কোন এলাকায় বেশি ঝুঁকি

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৬৭)

১২:০০:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল
চিনি গুড় শিল্প

তৃতীয় অধ্যায়

যশোর খুলনা ২৪ পরগনা বাখরগঞ্জ সহ অন্যান্য জেলায় শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস বের করার পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত ছিল। প্রতিটি গ্রামে গাছ থেকে রস বের করার কাজে শিউলিরা নিয়োজিত থাকত। কার্তিক মাসের দিকে খেজুর গাছের এক পাশের পাতা ছেটে গাছ পরিষ্কার করে অগ্রহায়ণ মাস থেকে রস বের করে সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় করার পদ্ধতি।

কৃষক পরিবার জানত। গুড় জ্বাল দেবার জন্য জালা ও মাটির ভাড় তৈরি এলাকার কুমাররা পটু ছিল। বিভিন্ন গ্রামের কুমাররা শীতকালে গৃহস্থদের রস জ্বালিয়ে গুড় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্র সরবরাহ করত। গ্রামে গঞ্জে অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠেছিল। কোট চাঁদপুর, কেশবপুর, চাঁদুড়িয়া, চৌগাছা, গোবরডাঙ্গা, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, টাকী, খুলনা জেলার দেবহাটা, কুশলিয়া, বড়দল, নবেকী, বাঘের হাট পটুয়াখালি গুড়ের গঞ্জ হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছিল।

বড় বড় চিনির কারখানাগুলি তাদের এজেন্ট বা ব্যাপারীর মারফত বিভিন্ন হাট থেকে গুড় কিনত সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে। অনেক সময় চাষিদের কাছ থেকে গুড় সংগ্রহের জন্য আশ্বিন কার্তিক মাসে চাষিদের কিছু টাকা অগ্রিম হিসাবে দিত। ব্যাপারীরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের দূরতম প্রান্তে খুলনার বিভিন্ন অংশে গুড় সংগ্রহ করার জন্য হাটে যেত এবং চাষিদের কাছ থেকে গুড় সংগ্রহ করত। খুলনার বড়দল, নবেকি সে যুগে গুড়ের হাট হিসাবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল।

শিবসা নদীর তীরে বড়দল হাট সপ্তাহে একদিন বসত। দূরদূরান্ত থেকে নৌকায় গুড় নিয়ে আসত ব্যাপারীরা। এই গুড় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বড় ব্যাপারীরা চালান দিত। যশোরের চিনিকলের মালিকরা তাদের এজেন্ট মারফত এসব হাট থেকে গুড় সংগ্রহ করত। শীতকালে গুড়কে কেন্দ্র করে কুমারদের ব্যবসা তেজী হয়ে উঠত।

নানা রকমের মাটির পাত্র নিয়ে তারা হাটে যেত। গুড় বিক্রয় করে চাষিরা তাদের প্রয়োজনমতো মাটির ভাড়, জ্বালা ইত্যাদি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরত। খেজুর গাছ থেকে রস ধরবার জন্য ভাড় থেকে শুরু করে রস জলা দেবার পাত্র, গুড় রাখার পাত্র নানা রকমের মাটির পাত্রের প্রচলন সে যুগে ছিল।