ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
ক্যালেন্ডার বর্ষপঞ্জী চর্চা
মেইজ বা ভুট্টা এবং তার সঙ্গে জড়িত আকাশ,জ্যোতির্বিদ্যার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জী চর্চা বা বিদা। মায়াদের ক্যালেন্ডার গঠন ছিল বিশেষ বেশিষ্ট্যপূর্ণ। এই বর্ষপঞ্জী তারা নিজেরাই স্বকীয় গাণিতিক সূত্র অনুযায়ী তৈরি করত। প্রধানত মায়াদের মধ্যে তিন রকম ক্যালেন্ডারের ব্যাবহার দেখা যেত। প্রথমটি ছিল দীর্ঘ গণনা। এটি মায়ারা ব্যবহার করত সময়ের খাতিকে চিহ্নিত করার কাজে। অর্থাৎ এই ক্যালেন্ডার তাদের অতীত এবং ভবিষ্যতের জাতিহীন গণনার সাহায্য করত। সাধারণ থালেন্ডার তাদের অতী বর্ষপঞ্জীর নাম হল হাআহব।
এই বর্ষপঞ্জীতে ১ বছর হল ৩৬০ দিনের কিন্তু এই হিসেবের মধ্যে একটি ভাগ ছিল। কুডি দিন নিয়ে একটি ভাগ এবং এমন ভাগের সংখ্যা হল ১৮টি। এক্ষেত্রে প্রতি হাআহব বছরের সঙ্গে ৫ দিন যোগ করার নিয়ম ছিল এবং এইভাবে সৌর বছরের সঙ্গে একটা মিল বেঁধে রাখা হত। দ্বিতীয় ক্যালেন্ডারে ৎজোলকিন-এর ব্যবহার দেখা যেত রীতি-আচার অনুষ্ঠানে। এক্ষেত্রে ২০টি কাল ভাগ করা হত। প্রতিটি ভাগ ১৩ দিনের।
এই বর্ষটির দিনসীমা সাধারণ হিসেবেই হত ২৬০ দিনের। এই বর্ষপঞ্জীর কোনো নির্দিষ্ট ব্যবহার না পাওয়া গেলেও অনুমান করা হয় শুক্র গ্রহের কক্ষপথ পরিক্রমা করার সঙ্গে এর হয়ত যোগ ছিল। কারণ এই কক্ষঘূর্ণণে সময় লাগে ২৬৩ দিন। এ প্রসঙ্গে আরো একটি তথ্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ৎজোলকিন বর্ষপঞ্জীর মোট ২০টি কালখণ্ডের আলাদা করে নাম ছিল। এবং এই নামগুলির সম্ভাব্য অর্থও ছিল। এগুলি এরকম:
ক্রমিক সংখ্যা নাম অর্থ
১ ইমিশ শালুক
২ ইক বাতাস
৩ আহকবাহল রাত্রি
৮ কাহন শস্য
৫ চিকচাহন সাপ
৬ সিমি মৃত্যুপ্রধান
৭ মাহনিক হাত
৮ লাহমাহত শুক্র গ্রহ
৯ মুলুক জল
১০ ওক কুকুর
১১ চুয়েন ব্যাঙ
১২ এব খুলি
১৩ বেন শস্যর বোঁটা
১৪ ইশ্ জাগুয়ার
১৫ মেন ঈগল
১৬ সিব শামুক
১৭ কাহ্বান মাটি
১৮ এতশনাহহ্ব পাথরের অস্ত্র
১৯ কাথাউআহাহ পাওয়া যায়নি
২০ আহাউ অধিপতি
উপরে উল্লেখ করা ২০টি কালপর্বের নাম ও তার অর্থ পর্যবেক্ষণ করে আমরা বলতে পারি আদতে মূল শব্দগুলি ছিল তাদের জনজীবনে ব্যবহৃত নানা শব্দ এবং সেই শব্দের অর্থও ছিল। অর্থাৎ বর্ষপঞ্জী রচনার সময়েও তারা জীবনযাত্রার বাস্তবতাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি।
(চলবে)
মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৪৬)