শ্রী নিখিলনাথ রায়
নন্দকুমার উল্লেখ করেন যে, হেষ্টিংস স্পষ্টাক্ষরে তাঁহাকে বলিয়াছেন যে, এখন হইতে আমি তোমার শত্রু হইলাম এবং তোমার অনিষ্ট করিতে ক্ষান্ত হইব না। তাহার পর, মোহন প্রসাদ নামে নন্দকুমারের একজন শত্রু হেষ্টিংসের বাটীতে গতায়াত করিত। এই মোহনপ্রসাদের সহিত তাঁহার জামাতা ও বর্তমান কুঞ্জযাটা রাজবংশের আদি-পুরুষ জগৎচাঁদও যোগদান করিয়াছিলেন। নন্দকুমার দুঃখের সহিত বলিয়াছেন, যে জগৎচাঁদকে আমি পুত্রের ক্ষায় বাটীতে প্রতিপালন করিয়াছি, আজ সেও আমার অনিষ্টসাধনে উদ্যত।
হেষ্টিংস মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাব রায়ের বিরুদ্ধে নন্দকুমারকে নিযুক্ত করিলে, নন্দকুমার তাঁহাদের বিরুদ্ধে এক এক তালিকা প্রস্তুত করিয়া দেন। মহম্মদ রেজা খাঁ নিজামতের রত্নখচিত অলঙ্কার, হস্তী ও অশ্বা ব্যতীত প্রায় বিশ কোটা টাকা আত্মসাৎ করেন। দুর্ভিক্ষের সময় চাউল একচেটিয়া করিয়া রাখিয়া, উচ্চদরে বিক্রয় করেন, ইত্যাদি অনেক কথার উল্লেখ করিয়াছিলেন। সেতাবরায়ের বিরুদ্ধেও ৯০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার এক তালিকা প্রস্তুত হয়। রেজা খাঁ ও সেতাব রায় উভয়েই এই বিপদ হইতে উদ্ধারের জন্ম হেষ্টিংস, নন্দকুমার ও অন্যান্য দুই একজনকে উৎকোচ দিতে প্রতিশ্রুত চন।
নন্দকুমার সে কথা গবর্ণরকে জানাইয়াছিলেন। রেজা খাঁ তাঁহাকে দুই লক্ষ ও হেষ্টিংসকে দশ লক্ষ এবং সেতাব রায়ও তাঁহাকে এক লক্ষ, হেষ্টিংসকে চারি লক্ষ ও রীড নামে কোম্পানীর আর একজন কর্মচারীকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাহিয়াছিলেন। ইহার পর তাঁহাদিগকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কাশীর রাজা বলবন্ত’সংহ দুইটি পরগণা স্বরাজাভুক্ত কারয়া লন। তাঁহার নিকট হইতে ২৪ লক্ষ টাকা কোম্পানীর পাওনা হইয়াছিল।
হেষ্টিংস প্রথমে নন্দকুমারের জামাতা রাধাচরণকে বলবস্তের পুত্র চেৎ সিংহের নিকট হইতে সে টাকা আদায়ের জন্য আদেশ দেন; পরে স্বয়ং। কাীতে উপস্থিত হইয়া, চেৎসিংহের সঙ্গিত সাক্ষাতের পর কোম্পানীর পাওনা টাকা ছাড়িয়া দেন। বাহারবন্দ পরগণা বলপূর্ব্বক রাণী ভবানীর নিকট হইতে লইয়া কৃষ্ণকান্ত নন্দীর পুত্র লোকনাথকে দেওয়া হয়। দিল্লীর বাদশাহ নন্দকুমারকে রাজসম্মানের চিহ্নস্বরূপ একখানি ঝালর- দার পাল্কী প্রদান করেন; পাটনার শাসনকর্তা তাহা আটক করিয়া রাখেন। হেষ্টিংস সেখানি কলিকাতায় পাঠাইতে লিখিলে, তাহা কলি- কাতায় উপস্থিত হয়। কিন্তু তিনি সেখানি নন্দকুমারকে না দিয়া তাহা নিজ ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করেন।
Sarakhon Report 



















