০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’ ডিজনিতে ফিরছেন বিটিএসের জিমিন ও জাংকুক, আসছে ‘আর ইউ শিওর?!’ সিজন–২ স্নেক সাও-স্কেলড ভিপার: এক ভয়ঙ্কর সাপের জীবন এবং বৈশিষ্ট্য টেইলর শেরিডান কীভাবে টেলিভিশনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিট–কারখানায় পরিণত হলেন মোবাইলে ক্রোমে এআই মোড আরও সহজ করল গুগল রোলিং স্টোন স্পেশাল ও ডিজে স্নেকের গানে একদিনেই তিন ফ্রন্ট খুলল স্ট্রে কিডস হরর-কমেডি ‘মেকিং আ ব্রাইডসমেইড’ শেষ, এখন স্ট্রিমিং বিক্রির পথে কেক বানানোর কৌশল: ঘরে বসেই নিখুঁত বেকিংয়ের গাইড লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্র্যান্ডে–এরিভোর চমক, ক্লাসিক ডুয়েটেই মাত করল হলিউড মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (অন্তিম পর্ব-৩৬৫)

সিরিয়ার বিজয়ীরা ধর্ম নিরপক্ষেতাকে পছন্দ করছে না

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৩০:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 53

সারাক্ষণ ডেস্ক

জানুয়ারি ২৯ তারিখে দামাস্কাসের বিভিন্ন ক্যাফে জনাকীর্ণ ছিল। ইউরোপ ও তুরস্ক থেকে ফিরে আসা নির্বাসিত এবং দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসনের অধীনে থাকা সিরিয়ানরা একত্র হয়েছিলেন আহমেদ আল-শারার ভাষণ শোনার জন্য। তিনি আসাদ পতনের পর থেকে দেশটির কার্যত শাসক। কেউ কেউ হিজাব পরেছিলেন, আবার কেউ বিয়ার পান করছিলেন। তবে সকলেই শারার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শোনার জন্য আগ্রহী ছিলেন।

শেষ পর্যন্ত এটি সরাসরি সম্প্রচারিত জাতীয় ভাষণ ছিল না, বরং কিছুটা বিলম্বিত একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা যা পূর্বনির্ধারিত মিলিশিয়াদের একদল নির্বাচিত সদস্যদের সামনে রেকর্ড করা হয়েছিল। তার বক্তব্য ছিল আড়ম্বরপূর্ণ কিন্তু অস্পষ্ট। তিনি ঘোষণা করেন, “আমরা শৃঙ্খল ভেঙেছি এবং নির্যাতিতদের মুক্ত করেছি। আমরা সিরিয়ার কাঁধ থেকে অপমান ও লজ্জার ধুলো ঝেড়ে ফেলেছি।” এরপর, আল-কায়েদার সাবেক এই নেতা, যিনি এখন রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার চেষ্টা করছেন, নিজেকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।

তার বেশিরভাগ বক্তব্য আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। শারার নিয়োগ এবং তার প্রাথমিক আদেশগুলো ধাপে ধাপে সরকারি মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। এই ঘোষণাগুলোর মধ্যে ছিল তার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ, বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টির বিলুপ্তি এবং নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি না হওয়া পর্যন্ত একটি আইনসভার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।

কিন্তু ভাষণটি সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্টতা দেয়নি। বহুবার ঘোষণা করা হলেও বিলম্বিত জাতীয় সম্মেলনের কোনো সময়সূচি এতে উল্লেখ করা হয়নি, যেখানে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা ছিল। এছাড়াও, শারা কোন ধরনের রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছেন, সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য দেননি।

তিনি সারাদিন সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাদের নিরস্ত্র করতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। দামাস্কাস পতনের সাত সপ্তাহ পরও এই গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তার সহযোগীরা দাবি করছেন যে সমস্ত মিলিশিয়া বিলুপ্ত হয়ে নতুন জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে।

কিছু গোষ্ঠী এতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু কিছু এখনও বিরোধিতা করছে—বিশেষ করে সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কয়েকটি। আমেরিকা-সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়া ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (SDF), যারা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তারা শারার বিজয় সমাবেশে অনুপস্থিত ছিল। দক্ষিণের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে কট্টর ইসলামপন্থীরা শারার ক্রমবর্ধমান ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করছে।

শারা মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে তার নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রায় ১৫০টি গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করেছেন। কিছু আলোচনায় অনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি এসেছে, আবার কিছুতে উত্তপ্ত বিতর্ক এবং দরজা বন্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সেনাবাহিনী এখনো দূরের স্বপ্ন, তবে এটি জরুরি হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন অংশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়ছে। এদিকে পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিরিয়ার এই পরিবর্তনের মধ্যেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সময়ের ব্যাপার মাত্র। একসময় সিরিয়ার বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করা এই জিহাদী গোষ্ঠী আবার দেশটির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।

তবুও, শারা অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি করছেন। সিরিয়ানরা বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে শুরু করেছে। সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তার সাথে দেখা করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা ইতোমধ্যেই কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, যদিও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত প্রধান নিষেধাজ্ঞাগুলোর ব্যাপারে তারা এখনও অনড়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শারা সৌদি আরবে যাবেন—আসাদ পতনের পর এটি হবে তার প্রথম বিদেশ সফর এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। ইতোমধ্যে তিনি কাতারের আমিরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যিনি সিরিয়ার রাজধানীতে তাকে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাক্ষাৎ করবেন।

তবে শারার শাসন এখনো অত্যন্ত নড়বড়ে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যদি তার প্রেসিডেন্সি কার্যকর হতে হয়, তবে তার অবশ্যই একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার, যে পরিকল্পনা শুধু তার যোদ্ধাদের নয়, বরং পুরো জনগণকেও উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করা উচিত।

জনপ্রিয় সংবাদ

সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’

সিরিয়ার বিজয়ীরা ধর্ম নিরপক্ষেতাকে পছন্দ করছে না

০৩:৩০:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ ডেস্ক

জানুয়ারি ২৯ তারিখে দামাস্কাসের বিভিন্ন ক্যাফে জনাকীর্ণ ছিল। ইউরোপ ও তুরস্ক থেকে ফিরে আসা নির্বাসিত এবং দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসনের অধীনে থাকা সিরিয়ানরা একত্র হয়েছিলেন আহমেদ আল-শারার ভাষণ শোনার জন্য। তিনি আসাদ পতনের পর থেকে দেশটির কার্যত শাসক। কেউ কেউ হিজাব পরেছিলেন, আবার কেউ বিয়ার পান করছিলেন। তবে সকলেই শারার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শোনার জন্য আগ্রহী ছিলেন।

শেষ পর্যন্ত এটি সরাসরি সম্প্রচারিত জাতীয় ভাষণ ছিল না, বরং কিছুটা বিলম্বিত একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা যা পূর্বনির্ধারিত মিলিশিয়াদের একদল নির্বাচিত সদস্যদের সামনে রেকর্ড করা হয়েছিল। তার বক্তব্য ছিল আড়ম্বরপূর্ণ কিন্তু অস্পষ্ট। তিনি ঘোষণা করেন, “আমরা শৃঙ্খল ভেঙেছি এবং নির্যাতিতদের মুক্ত করেছি। আমরা সিরিয়ার কাঁধ থেকে অপমান ও লজ্জার ধুলো ঝেড়ে ফেলেছি।” এরপর, আল-কায়েদার সাবেক এই নেতা, যিনি এখন রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার চেষ্টা করছেন, নিজেকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।

তার বেশিরভাগ বক্তব্য আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। শারার নিয়োগ এবং তার প্রাথমিক আদেশগুলো ধাপে ধাপে সরকারি মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। এই ঘোষণাগুলোর মধ্যে ছিল তার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ, বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টির বিলুপ্তি এবং নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি না হওয়া পর্যন্ত একটি আইনসভার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।

কিন্তু ভাষণটি সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্টতা দেয়নি। বহুবার ঘোষণা করা হলেও বিলম্বিত জাতীয় সম্মেলনের কোনো সময়সূচি এতে উল্লেখ করা হয়নি, যেখানে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা ছিল। এছাড়াও, শারা কোন ধরনের রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছেন, সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য দেননি।

তিনি সারাদিন সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাদের নিরস্ত্র করতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। দামাস্কাস পতনের সাত সপ্তাহ পরও এই গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তার সহযোগীরা দাবি করছেন যে সমস্ত মিলিশিয়া বিলুপ্ত হয়ে নতুন জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে।

কিছু গোষ্ঠী এতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু কিছু এখনও বিরোধিতা করছে—বিশেষ করে সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কয়েকটি। আমেরিকা-সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়া ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (SDF), যারা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তারা শারার বিজয় সমাবেশে অনুপস্থিত ছিল। দক্ষিণের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে কট্টর ইসলামপন্থীরা শারার ক্রমবর্ধমান ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করছে।

শারা মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে তার নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রায় ১৫০টি গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করেছেন। কিছু আলোচনায় অনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি এসেছে, আবার কিছুতে উত্তপ্ত বিতর্ক এবং দরজা বন্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সেনাবাহিনী এখনো দূরের স্বপ্ন, তবে এটি জরুরি হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন অংশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়ছে। এদিকে পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিরিয়ার এই পরিবর্তনের মধ্যেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সময়ের ব্যাপার মাত্র। একসময় সিরিয়ার বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করা এই জিহাদী গোষ্ঠী আবার দেশটির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।

তবুও, শারা অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি করছেন। সিরিয়ানরা বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে শুরু করেছে। সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তার সাথে দেখা করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা ইতোমধ্যেই কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, যদিও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত প্রধান নিষেধাজ্ঞাগুলোর ব্যাপারে তারা এখনও অনড়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শারা সৌদি আরবে যাবেন—আসাদ পতনের পর এটি হবে তার প্রথম বিদেশ সফর এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। ইতোমধ্যে তিনি কাতারের আমিরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যিনি সিরিয়ার রাজধানীতে তাকে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাক্ষাৎ করবেন।

তবে শারার শাসন এখনো অত্যন্ত নড়বড়ে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যদি তার প্রেসিডেন্সি কার্যকর হতে হয়, তবে তার অবশ্যই একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার, যে পরিকল্পনা শুধু তার যোদ্ধাদের নয়, বরং পুরো জনগণকেও উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করা উচিত।