০৯:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৬) চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ

প্যাক্স আমেরিকানার সমাপ্তি? বড় শক্তির রাজনীতির নতুন যুগ

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫
  • 39

টিম মার্শাল

আরেকটি দিন, আরেকটি ট্রাম্পবাণী, আরেকটি যুগের সূচনা। আমরা এখন এমন এক নতুন বাস্তবতায় — “পোস্ট-পোস্ট-কোল্ড ওয়ার” যুগে — যার চেহারা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে পুরনো নিশ্চিত ধারা আর নেই। তাই প্রশ্ন উঠছে: প্যাক্স আমেরিকানার সমাপ্তি ও আমেরিকান শতকের অবসান কি এখন ঘটতে যাচ্ছে? ইউরোপ কি সামরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে? রাশিয়া কি হুমকি?

এই পরিবর্তনের পটভূমি বোঝা জরুরি।

সব আঞ্চলিক শৃঙ্খলা বা সাম্রাজ্যের মতোই, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক ব্যবস্থারও একটা শেষ সময় ছিল। রোমান, অটোমান, ব্রিটিশ ও সোভিয়েত সাম্রাজ্যও তাদের সময়ে এই সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। ১৮১৫ সালে ইউরোপে শক্তির ভারসাম্য রাখতে যে ‘কনসার্ট অব ইউরোপ’ তৈরি হয়েছিল, সেটিও একসময় ভেঙে পড়ে। এমন ব্যবস্থাগুলো স্থায়ী নয়; যখন এগুলো ভেঙে যায়, তখনই মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই “নির্জনবাসী” (আইসোলেশনিস্ট) নীতি ফিরিয়ে আনতে চায়, নাকি এটি তার অস্থায়ী “কমলা রঙের যুগ”? জর্জ ওয়াশিংটনের ১৭৯৬ সালের বিদায়ী ভাষণেই নিঃসঙ্গতাবাদের বীজ ছিল। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ যতটুকু সম্ভব কম রাখো।” ইউরোপ সম্পর্কে তাঁর মত ছিল: “কেন আমাদের ভাগ্য ইউরোপের কোনো অংশের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে তাদের উচ্চাশা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্বার্থ, খামখেয়াল বা খেয়ালের ফাঁদে আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে জড়াব?”

এরপর ১৪০ বছরেরও বেশি সময় কেটে যায়, তারপরই আসলে ইউরোপের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। ১৯১৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অন্য দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় বটে, তবে আনুষ্ঠানিক মিত্র না হয়ে “অ্যাসোসিয়েটেড পাওয়ার” হিসেবে যোগ দিয়েছিল। তারা তখন শুধু “গণতন্ত্র রক্ষার” জন্যই নয়, বরং একজন ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষের অধীনে সমগ্র ইউরোপ চলে গেলে নিজের পূর্ব উপকূলের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে, এই আশঙ্কাতেও বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করে। একই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, যদিও তখন আনুষ্ঠানিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান বহুপক্ষীয় একটি শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যাতে পুঁজিবাদ ও উদার গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদ পরবর্তী যুগ নিশ্চিত হয়। পরবর্তী মার্কিন নেতারাও একমত ছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে না থেকে সহমনা দেশগুলোর নেতৃত্বে থাকলে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্তিশালী হবে।

কিন্তু এখন বিশ্ব বদলে গেছে, আর সেই সঙ্গে বদলেছে আমেরিকার অগ্রাধিকার। সোভিয়েত রাশিয়া ঠান্ডা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে, আর চীনের ক্ষমতা দ্রুত বেড়েছে। ফলে রাশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ইউরোপের জন্য রয়ে গেছে।

ভূগোল, ইতিহাস ও আধুনিক রাজনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলেই বোঝা যায়, রাশিয়া তাদের খর্ব হওয়া মর্যাদা মেনে নেবে না। তবু ইউরোপ তাদের সামরিক প্রস্তুতি অবহেলা করে আমেরিকানদেরই খরচ বহন করতে দিয়েছে। ১৯৫৯ সালেই প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যা বলেছিলেন, সেটি ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছেন – ইউরোপীয়রা যেন “আঙ্কেল স্যামকে বোকা বানিয়ে খালাস” হতে চাইছে। তাই যখন ইতিহাসের চাকা ঘুরে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ব্রাসেলসে ইউরোপীয়দের বলেন যে “কঠোর কৌশলগত বাস্তবতা আমাদের বাধ্য করছে ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আর কেন্দ্রে না রাখতে,” তখন ইউরোপীয়রা বিস্মিত হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরস্পরশ্রেয় মূল্যবোধকে এক সুদূর প্রকল্প হিসেবে না দেখে, খরচ-সুবিধার হিসাবেই মূলত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করেন। ইউক্রেন রক্ষায় তাঁর অবস্থান এর একটি উদাহরণ। উপনিবেশবাদী মনোভাব নিয়ে হামলা চালানো একজন আগ্রাসীর বিরুদ্ধে (যদিও ইউক্রেনের গণতন্ত্রে দুর্বলতা আছে) রক্ষামূলক অবস্থানে থাকা কেবল নীতিগত নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সম্পদ দখলের হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে অন্যরা ভাবতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের কাছে এটি মূলত সম্পদ ও চুক্তির বিষয়। তিনি হয়তো ইউরোপীয়দের প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অবহেলার সমালোচনায় সঠিক, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘে দুইবার রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয় (ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে), তখনই স্পষ্ট হয় যে আমরা এক নতুন সময়ে পৌঁছে গেছি।

এই ভিন্ন অবস্থান এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলও লক্ষ্য করেছে। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন আর জাপান ভাবছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বেইজিংয়ের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো সমঝোতার বিনিময়ে তাদের স্বার্থ বিসর্জন দেবে কি না।

ফলে শুরুতেই যে কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছিল, সেগুলো ফিরে দেখি। প্যাক্স আমেরিকানার সমাপ্তি? এখনো পুরোপুরি নয়। যদি ইউরোপীয়রা ব্যয় বহন করতে পারে এবং বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো টিকে থাকতে পারে। অন্যথায় ওয়াশিংটন মিত্র ও যুদ্ধকৌশল বেছে নেবে নিজের সুবিধামতো। আমেরিকান শতকের সমাপ্তি? তাও এখনই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখনো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে। বিশ্বের সেরা দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাতটি যুক্তরাষ্ট্রে, আর শীর্ষ দশটি প্রযুক্তি কোম্পানির আটটিই সেখানে। ইউরোপ সামরিকভাবে এককাট্টা হতে পারবে কি? অতি দ্রুত কিছু উদ্যোগ হলেও সেটি হয়তো আবার ধীরগতির হয়ে পড়বে। রাশিয়া কি হুমকি? আমেরিকার জন্য তেমন নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রমাণ করেছে, রাশিয়ান বাহিনী ইউরোপের আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা রাখে না।

তারপরও, দশকের পর দশক পুরোনো যে স্বপ্ন — ন্যাটোকে ভেঙে ইউরোপকে আধিপত্যে আনা — রাশিয়া এখন সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছাতে চায়। আমরা এখন ফের বড় শক্তির রাজনীতির যুগে ফিরেছি, আর সামনের অন্তত চার বছর “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিতে কাটতে পারে। ইউরোপ যদি আবার চোখ বুজে বসে থাকে, তাহলে এই সময় হয়তো আরও দীর্ঘ হবে।

 

ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা

প্যাক্স আমেরিকানার সমাপ্তি? বড় শক্তির রাজনীতির নতুন যুগ

০৮:০০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫

টিম মার্শাল

আরেকটি দিন, আরেকটি ট্রাম্পবাণী, আরেকটি যুগের সূচনা। আমরা এখন এমন এক নতুন বাস্তবতায় — “পোস্ট-পোস্ট-কোল্ড ওয়ার” যুগে — যার চেহারা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে পুরনো নিশ্চিত ধারা আর নেই। তাই প্রশ্ন উঠছে: প্যাক্স আমেরিকানার সমাপ্তি ও আমেরিকান শতকের অবসান কি এখন ঘটতে যাচ্ছে? ইউরোপ কি সামরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে? রাশিয়া কি হুমকি?

এই পরিবর্তনের পটভূমি বোঝা জরুরি।

সব আঞ্চলিক শৃঙ্খলা বা সাম্রাজ্যের মতোই, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক ব্যবস্থারও একটা শেষ সময় ছিল। রোমান, অটোমান, ব্রিটিশ ও সোভিয়েত সাম্রাজ্যও তাদের সময়ে এই সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। ১৮১৫ সালে ইউরোপে শক্তির ভারসাম্য রাখতে যে ‘কনসার্ট অব ইউরোপ’ তৈরি হয়েছিল, সেটিও একসময় ভেঙে পড়ে। এমন ব্যবস্থাগুলো স্থায়ী নয়; যখন এগুলো ভেঙে যায়, তখনই মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই “নির্জনবাসী” (আইসোলেশনিস্ট) নীতি ফিরিয়ে আনতে চায়, নাকি এটি তার অস্থায়ী “কমলা রঙের যুগ”? জর্জ ওয়াশিংটনের ১৭৯৬ সালের বিদায়ী ভাষণেই নিঃসঙ্গতাবাদের বীজ ছিল। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ যতটুকু সম্ভব কম রাখো।” ইউরোপ সম্পর্কে তাঁর মত ছিল: “কেন আমাদের ভাগ্য ইউরোপের কোনো অংশের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে তাদের উচ্চাশা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্বার্থ, খামখেয়াল বা খেয়ালের ফাঁদে আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে জড়াব?”

এরপর ১৪০ বছরেরও বেশি সময় কেটে যায়, তারপরই আসলে ইউরোপের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। ১৯১৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অন্য দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় বটে, তবে আনুষ্ঠানিক মিত্র না হয়ে “অ্যাসোসিয়েটেড পাওয়ার” হিসেবে যোগ দিয়েছিল। তারা তখন শুধু “গণতন্ত্র রক্ষার” জন্যই নয়, বরং একজন ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষের অধীনে সমগ্র ইউরোপ চলে গেলে নিজের পূর্ব উপকূলের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে, এই আশঙ্কাতেও বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করে। একই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, যদিও তখন আনুষ্ঠানিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান বহুপক্ষীয় একটি শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যাতে পুঁজিবাদ ও উদার গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদ পরবর্তী যুগ নিশ্চিত হয়। পরবর্তী মার্কিন নেতারাও একমত ছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে না থেকে সহমনা দেশগুলোর নেতৃত্বে থাকলে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্তিশালী হবে।

কিন্তু এখন বিশ্ব বদলে গেছে, আর সেই সঙ্গে বদলেছে আমেরিকার অগ্রাধিকার। সোভিয়েত রাশিয়া ঠান্ডা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে, আর চীনের ক্ষমতা দ্রুত বেড়েছে। ফলে রাশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ইউরোপের জন্য রয়ে গেছে।

ভূগোল, ইতিহাস ও আধুনিক রাজনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলেই বোঝা যায়, রাশিয়া তাদের খর্ব হওয়া মর্যাদা মেনে নেবে না। তবু ইউরোপ তাদের সামরিক প্রস্তুতি অবহেলা করে আমেরিকানদেরই খরচ বহন করতে দিয়েছে। ১৯৫৯ সালেই প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যা বলেছিলেন, সেটি ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছেন – ইউরোপীয়রা যেন “আঙ্কেল স্যামকে বোকা বানিয়ে খালাস” হতে চাইছে। তাই যখন ইতিহাসের চাকা ঘুরে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ব্রাসেলসে ইউরোপীয়দের বলেন যে “কঠোর কৌশলগত বাস্তবতা আমাদের বাধ্য করছে ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আর কেন্দ্রে না রাখতে,” তখন ইউরোপীয়রা বিস্মিত হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরস্পরশ্রেয় মূল্যবোধকে এক সুদূর প্রকল্প হিসেবে না দেখে, খরচ-সুবিধার হিসাবেই মূলত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করেন। ইউক্রেন রক্ষায় তাঁর অবস্থান এর একটি উদাহরণ। উপনিবেশবাদী মনোভাব নিয়ে হামলা চালানো একজন আগ্রাসীর বিরুদ্ধে (যদিও ইউক্রেনের গণতন্ত্রে দুর্বলতা আছে) রক্ষামূলক অবস্থানে থাকা কেবল নীতিগত নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সম্পদ দখলের হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে অন্যরা ভাবতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের কাছে এটি মূলত সম্পদ ও চুক্তির বিষয়। তিনি হয়তো ইউরোপীয়দের প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অবহেলার সমালোচনায় সঠিক, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘে দুইবার রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয় (ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে), তখনই স্পষ্ট হয় যে আমরা এক নতুন সময়ে পৌঁছে গেছি।

এই ভিন্ন অবস্থান এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলও লক্ষ্য করেছে। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন আর জাপান ভাবছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বেইজিংয়ের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো সমঝোতার বিনিময়ে তাদের স্বার্থ বিসর্জন দেবে কি না।

ফলে শুরুতেই যে কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছিল, সেগুলো ফিরে দেখি। প্যাক্স আমেরিকানার সমাপ্তি? এখনো পুরোপুরি নয়। যদি ইউরোপীয়রা ব্যয় বহন করতে পারে এবং বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো টিকে থাকতে পারে। অন্যথায় ওয়াশিংটন মিত্র ও যুদ্ধকৌশল বেছে নেবে নিজের সুবিধামতো। আমেরিকান শতকের সমাপ্তি? তাও এখনই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখনো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে। বিশ্বের সেরা দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাতটি যুক্তরাষ্ট্রে, আর শীর্ষ দশটি প্রযুক্তি কোম্পানির আটটিই সেখানে। ইউরোপ সামরিকভাবে এককাট্টা হতে পারবে কি? অতি দ্রুত কিছু উদ্যোগ হলেও সেটি হয়তো আবার ধীরগতির হয়ে পড়বে। রাশিয়া কি হুমকি? আমেরিকার জন্য তেমন নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রমাণ করেছে, রাশিয়ান বাহিনী ইউরোপের আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা রাখে না।

তারপরও, দশকের পর দশক পুরোনো যে স্বপ্ন — ন্যাটোকে ভেঙে ইউরোপকে আধিপত্যে আনা — রাশিয়া এখন সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছাতে চায়। আমরা এখন ফের বড় শক্তির রাজনীতির যুগে ফিরেছি, আর সামনের অন্তত চার বছর “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিতে কাটতে পারে। ইউরোপ যদি আবার চোখ বুজে বসে থাকে, তাহলে এই সময় হয়তো আরও দীর্ঘ হবে।