আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
হঠাৎ আমার ডানদিকে একসঙ্গে অনেকগুলো পায়ের শব্দে ফিরে তাকাতে বাধ্য হলুম। দেখলুম, আগের সেই অশ্বারোহী বাহিনীটা ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের একটা মেঠো রাস্তায় মোড় নিয়ে আগের চেয়ে জোরে ছুট লাগাল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে ভাস্কা আমার দিকে একটা হাত ছড়িয়ে দিয়ে সজোরে নাড়ল, তারপর একলাফে ঝোপটা ডিঙিয়ে তাঁরবেগে উৎরাই বেয়ে নামতে লাগল। ওর দেখাদেখি আমিও প্রাণপণে ছুটে নামতে লাগলুম। খাদের একদম নিচে গড়িয়ে নেমে আমি দেখলুম ঝোপগুলোর পাশেই দুটো লোক পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে মারামারি করছে। ওদের মধ্যে একজন দেখলুম চুবুক, অপর জন সেই শত্রুর সেপাইটা। কী করে যে আমি জায়গাটায় পৌঁছেছিলুম তা মনে নেই।
শুধু মনে পড়ে, গিয়ে দেখলুম, চুবুক তলায় পড়ে আছেন আর শ্বেতরক্ষীর হাতটা প্রাণপণে চেপে ধরে আছেন, আর শ্বেতরক্ষীটা তার খাপ থেকে পিস্তল বের করার জন্যে টানাটানি লাগিয়েছে। শত্রুটাকে রাইফেলের কু’দো দিয়ে মাথায় না ঘা মেরে আমি রাইফেলটা ফেলে ওর পা দুটো ধরে টানতে লাগলুম। লোকটা ছিল ষণ্ডা জোয়ান। এক লাথিতে ও আমায় উল্টে ফেললে। কিন্তু পড়ে গিয়েও আমি ওর হাতটা চেপে ধরে আঙুলে কামড় বসালুম। শ্বেতরক্ষীটা চিৎকার করে উঠে ঝাঁকি দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল। এমন সময় একেবারে আচমকা দুন্দাড় করে ঝোপঝাড় মাড়িয়ে ভেঙে কোমর পর্যন্ত জলে-ভেজা পোশাকে উদয় হল ভাস্কার। ড্রিলের মাঠে রপ্ত-করা অভ্যন্ত কায়দায় কাঁদো চালিয়ে ও লাফিয়ে পড়ল শ্বেতরক্ষীর ওপর আর তাকে অজ্ঞান করে ফেলে দিল।
এরপর কাশতে-কাশতে আর থুথু ফেলতে-ফেলতে ঘাস ছেড়ে উঠে পড়লেন চুক।
ধরা-ধরা গলায় ঝাঁকি দিয়ে ‘ভাস্কা’ বলে ডেকে তিনি ঘাস-চিবুতে-ব্যস্ত ঘোড়াটাকে দেখিয়ে দিলেন।
‘আহা,’ বলে মাটিতে-গড়িয়ে-পড়া লাগামটা তুলে নিয়ে ভাস্কা ঘোড়াটাকে কাছে টানল।
‘ওটারেও লিয়ে চল,’ হাঁ-করে নিশ্বাস টানতে-টানতে চুবুক এবার অচৈতন্য গাইদামাককে দেখিয়ে দিলেন।
সঙ্গে সঙ্গে ভাস্কা কাজে লেগে গেল।
‘হাত দুটা বে’ধে দ্যাও দেখি!’
আমার রাইফেলটা কুড়িয়ে নিয়ে চুবুক বেয়োনেটের দুই টানে ওর চামড়ার রুবেল্টটা কেটে ফেললেন আর সেই বেল্ট দিয়ে অচৈতন্য সৈনিকের কনুই দুটো বোধে দিলেন।
Leave a Reply