০২:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

ইন্ডাস পানি চুক্তি স্থগিত: পাকিস্তানের অস্তিত্ব সংকট ও আন্তর্জাতিক ফোরাম শক্তিহীন

  • Sarakhon Report
  • ০৩:১৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
  • 71

সারাক্ষণ রিপোর্ট

পাহালগামের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সিদ্ধান্ত

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যার জন্য ভারত পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করে। এর জবাবে ভারত ১৯৬০ সালের ইন্ডাস পানি চুক্তি স্থগিত করে। এ চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ইন্ডাস, ঝেলম ও চেনাব নদীর ওপর নির্ভর করে, যা দেশের পানীয় জল, কৃষিকাজ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রধান উৎস। ভারতের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে মারাত্মক এক কূটনৈতিক, পরিবেশগত ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।

পাকিস্তানের সংকট: খাদ্যকৃষি ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে

কৃষির ওপর সরাসরি প্রভাব:

ইন্ডাস অববাহিকার পানি পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমির সেচে ব্যবহৃত হয়। পানি প্রবাহ কমে গেলে গম,চাল, তুলা,আখসহ প্রধান কৃষিপণ্য উৎপাদন ধসে পড়বে।

পানীয় জলের ঘাটতি:

পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষ ইন্ডাস-নির্ভর পানীয় জলের ওপর নির্ভরশীল। পানি সরবরাহ হঠাৎ কমে গেলে শহরগুলোতে মানবিক সংকট তৈরি হবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয়:

ইন্ডাস নদী অববাহিকায় পাকিস্তানের অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। পানি না থাকলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাবে, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সামাজিক অস্থিরতা:

চাষাবাদ ধ্বংস হলে গ্রামীণ অর্থনীতি ধসে পড়বে। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বাড়বে, শহরগুলোতে জনসংখ্যার চাপ এবং বেকারত্ব সংকট তৈরি হবে।

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বিবাদমান রাষ্ট্রের সংকট সমাধানে অক্ষমতা

বিশ্বব্যাংক, যেটি চুক্তির মূল গ্যারান্টর, এখনও পর্যন্ত এ সংকটে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। জাতিসংঘও দ্বিপাক্ষিকতা ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে না।

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ড. সান্দ্রা মিলার,যিনি হেগ-ভিত্তিক “Institute for Transboundary Justice”-এ কর্মরত, তিনি বলেন:

“ইন্ডাস সংকট আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে বাস্তব সমাধান আনতে কার্যকর নয়। এ ধরনের চুক্তি রক্ষা করতে শুধু কাগুজে গ্যারান্টি নয়, বাস্তব রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন:

“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে যদি একটি দেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্নে পৌঁছে যায়, সেটি গোটা অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর। এ পরিস্থিতি কেবল ভারত-পাকিস্তান নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোর ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে।”

রাজনৈতিক পদক্ষেপ না হলেমানবিক বিপর্যয় অনিবার্য

ভারতের সিদ্ধান্ত এক তরফা হলেও তা একটি বড় কূটনৈতিক কৌশলের অংশ। পাকিস্তান জলবায়ু পরিবর্তন ও সীমিত অর্থনৈতিক সক্ষমতার মধ্যে পড়ে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে পারছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বিপাক্ষিকতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের দোহাই দিয়ে চুপ থেকেছে। আর এ নীরবতা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট ডেকে আনতে পারে—বিশেষ করে একটি পরমাণু অস্ত্রধারী অঞ্চলে।

চুক্তির স্থগিতকরণ এক নতুন জল-রাজনীতির শুরু

ভারত-পাকিস্তান পানি যুদ্ধ এখন আর সম্ভাবনা নয়, বাস্তবতা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কূটনৈতিক যুদ্ধ মূলত সন্ত্রাসবাদ লালনকারী দেশগুলোকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে। যে আসলে কোনটা সঠিক- সন্ত্রাসবাদকে লালন না সৎ প্রতিবেশী হিসেবে একের অপরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সহযোগী হওয়া উচিত। শুধু প্রতিবেশী বিরোধীতা ও সন্ত্রাসবাদ লালন এর বিপরীতে এ ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা তাই এক নতুন রাজনীতি ও সন্ত্রাস দমনের উপায়ের পথে হাঁটা শুরু বলেও চিহ্নিত হতে পারে। আবার এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে দেখা যাবে যখন এক পক্ষ সন্ত্রাসের জবাবে পানি বন্ধ করে দিলে আরেক পক্ষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

যদি সন্ত্রাস লালনকারীদেশগুলো ও সন্ত্রাস কবলিত দেশগুলো বাস্তবতায় এসে না দাঁড়ায় তাহলে পৃথিবীর নানান এলাকাতে এ ধরনের কূটনৈতিক যুদ্ধ ও রাজনীতি মূলত আঞ্চলিক সংকট এর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

ইন্ডাস পানি চুক্তি স্থগিত: পাকিস্তানের অস্তিত্ব সংকট ও আন্তর্জাতিক ফোরাম শক্তিহীন

০৩:১৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

পাহালগামের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সিদ্ধান্ত

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যার জন্য ভারত পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করে। এর জবাবে ভারত ১৯৬০ সালের ইন্ডাস পানি চুক্তি স্থগিত করে। এ চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ইন্ডাস, ঝেলম ও চেনাব নদীর ওপর নির্ভর করে, যা দেশের পানীয় জল, কৃষিকাজ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রধান উৎস। ভারতের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে মারাত্মক এক কূটনৈতিক, পরিবেশগত ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।

পাকিস্তানের সংকট: খাদ্যকৃষি ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে

কৃষির ওপর সরাসরি প্রভাব:

ইন্ডাস অববাহিকার পানি পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমির সেচে ব্যবহৃত হয়। পানি প্রবাহ কমে গেলে গম,চাল, তুলা,আখসহ প্রধান কৃষিপণ্য উৎপাদন ধসে পড়বে।

পানীয় জলের ঘাটতি:

পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষ ইন্ডাস-নির্ভর পানীয় জলের ওপর নির্ভরশীল। পানি সরবরাহ হঠাৎ কমে গেলে শহরগুলোতে মানবিক সংকট তৈরি হবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয়:

ইন্ডাস নদী অববাহিকায় পাকিস্তানের অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। পানি না থাকলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাবে, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সামাজিক অস্থিরতা:

চাষাবাদ ধ্বংস হলে গ্রামীণ অর্থনীতি ধসে পড়বে। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বাড়বে, শহরগুলোতে জনসংখ্যার চাপ এবং বেকারত্ব সংকট তৈরি হবে।

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বিবাদমান রাষ্ট্রের সংকট সমাধানে অক্ষমতা

বিশ্বব্যাংক, যেটি চুক্তির মূল গ্যারান্টর, এখনও পর্যন্ত এ সংকটে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। জাতিসংঘও দ্বিপাক্ষিকতা ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে না।

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ড. সান্দ্রা মিলার,যিনি হেগ-ভিত্তিক “Institute for Transboundary Justice”-এ কর্মরত, তিনি বলেন:

“ইন্ডাস সংকট আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে বাস্তব সমাধান আনতে কার্যকর নয়। এ ধরনের চুক্তি রক্ষা করতে শুধু কাগুজে গ্যারান্টি নয়, বাস্তব রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন:

“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে যদি একটি দেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্নে পৌঁছে যায়, সেটি গোটা অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর। এ পরিস্থিতি কেবল ভারত-পাকিস্তান নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোর ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে।”

রাজনৈতিক পদক্ষেপ না হলেমানবিক বিপর্যয় অনিবার্য

ভারতের সিদ্ধান্ত এক তরফা হলেও তা একটি বড় কূটনৈতিক কৌশলের অংশ। পাকিস্তান জলবায়ু পরিবর্তন ও সীমিত অর্থনৈতিক সক্ষমতার মধ্যে পড়ে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে পারছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বিপাক্ষিকতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের দোহাই দিয়ে চুপ থেকেছে। আর এ নীরবতা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট ডেকে আনতে পারে—বিশেষ করে একটি পরমাণু অস্ত্রধারী অঞ্চলে।

চুক্তির স্থগিতকরণ এক নতুন জল-রাজনীতির শুরু

ভারত-পাকিস্তান পানি যুদ্ধ এখন আর সম্ভাবনা নয়, বাস্তবতা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কূটনৈতিক যুদ্ধ মূলত সন্ত্রাসবাদ লালনকারী দেশগুলোকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে। যে আসলে কোনটা সঠিক- সন্ত্রাসবাদকে লালন না সৎ প্রতিবেশী হিসেবে একের অপরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সহযোগী হওয়া উচিত। শুধু প্রতিবেশী বিরোধীতা ও সন্ত্রাসবাদ লালন এর বিপরীতে এ ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা তাই এক নতুন রাজনীতি ও সন্ত্রাস দমনের উপায়ের পথে হাঁটা শুরু বলেও চিহ্নিত হতে পারে। আবার এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে দেখা যাবে যখন এক পক্ষ সন্ত্রাসের জবাবে পানি বন্ধ করে দিলে আরেক পক্ষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

যদি সন্ত্রাস লালনকারীদেশগুলো ও সন্ত্রাস কবলিত দেশগুলো বাস্তবতায় এসে না দাঁড়ায় তাহলে পৃথিবীর নানান এলাকাতে এ ধরনের কূটনৈতিক যুদ্ধ ও রাজনীতি মূলত আঞ্চলিক সংকট এর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।