১০:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৮৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • 66

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মুর্শিদাবাদ চিরদিনই রেশমের ব্যবসায়ের জন্য বিখ্যাত; সুতরাং সুবিধাক্রমে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করিলে তাহাতে যে বিশেষ উন্নতি হইবে, ইহা বড় আশ্চর্য্যের কথা নহে। মহারাষ্ট্রীয়দিগের আক্রমণের সময় হরকৃষ্ণ কান্দী হইতে পলায়ন করিয়া, বোয়ালিয়া নামক স্থানে বাসস্থান নির্দেশ করিতে বাধ্য হন। বোয়ালিয়া ভাগীরথীর পূর্ব্বতীরে অবস্থিত ছিল। মহারাষ্ট্রীয়গণ ভাগীরথীর পশ্চিম তীর অধিকার করিয়া অনেক দিন আপনাদের শাসনে রাখিয়াছিল এবং তাহাদের অত্যাচারে বাঙ্গলায় প্রজাগণের দুর্দশার একশেষ হইত।

কান্দী ভাগী-রথীর পশ্চিম তীরে হওয়ায় হরকৃষ্ণ তাহা পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন। ইরকৃষ্ণ অনেক টাকা নজরানা দিয়া মুর্শিদাবাদের নবাবের নিকট হইতে বোয়ালিয়া গ্রাম নিজস্ব করিয়া লন; তাহার সঙ্গে সঙ্গে আরও কতিপয় গ্রাম গ্রহণ করিয়াছিলেন। বোয়ালিয়া তদবধি কান্দী রাজবংশীয়দের সম্পত্তিমধ্যে পরিগণিত হয়। বোয়ালিয়া হইতে পুনর্ব্বার তাঁহারা কান্দীতে আসিয়া বাস করেন।

হরকৃষ্ণের পুত্র মুরলীধর হইতে নারায়ণ সিংহ, গৌরাঙ্গ সিংহ ও বিহারী সিংহ ভ্রাতৃত্রয়ের উৎপত্তি হয়। ইঁহাদের মধ্যে গৌরাঙ্গ সিংহ নিজ ক্ষমতাগুণে নবাবসরকারে কার্য্য প্রাপ্ত হন। তাঁহার নাম হইতে কান্দীবংশীয়দের যশঃ প্রথমতঃ বাঙ্গলার সর্ব্বত্র রাষ্ট্র হয়। গৌরাঙ্গ সিংহ কাননগো বঙ্গাধিকারী মহাশয়দিগের অধীনতায় কার্য্য করেন। তৎকালে কাননগো মহাশয়দিগকে যাবতীয় জমাজমির নির্দেশসম্বন্ধীয় কাগজপত্র রাখিতে হইত। গৌরাঙ্গ সিংহের ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যুৎপত্তি থাকায়, তিনি তাঁহাদের অধীন কর্মচারী হইয়া নিজের প্রভুত ক্ষমতাবলে যথেষ্ট প্রতিপত্তি লাভ করেন এবং মজুমদার উপাধি প্রাপ্ত হন।

\গৌরাম সিংহ অত্যন্ত ভাগ্যবান্ পুরুষ ছিলেন। তিনি বহুল পরিমাণে অর্থ উপার্জনদ্বারা অনেক মহাল, তালুক ও লাখরাজভূমি ক্রয় করিয়া প্রচুর সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া উঠেন। দেবসেবা প্রভৃতিতে তাঁহার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, তিনি এক সময়ে কান্দীতে একটি সুন্দর অট্টালিকা নির্মাণ করিবার ইচ্ছা করিয়া, নবাব সিরাজ উদ্দৌলার হীরাঝিলের উপরিস্থিত এন্তাজ-মহাল প্রাসাদের কর্ণিসের অনুকরণে স্বীয় অট্টালিকা প্রস্তুত করেন। সিরাজ এই সংবাদ শুনিয়া সেই অট্টালিকা ভগ্নস্তূপে পরিণত করিতে আদেশ দিয়া গৌরাঙ্গ সিংহকে বন্দী করিয়া আনিতে বলেন। তৎকালে সাধারণ লোকে নবাব বাদশাহদিগের অনুকরণ করিতে পারিত না; করিলে, তাহাদিগকে যথেষ্ট লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হইত, এরূপ দৃষ্টান্ত অনেক শুনিতে পাওয়া যায়।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৮৭)

১১:০০:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মুর্শিদাবাদ চিরদিনই রেশমের ব্যবসায়ের জন্য বিখ্যাত; সুতরাং সুবিধাক্রমে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করিলে তাহাতে যে বিশেষ উন্নতি হইবে, ইহা বড় আশ্চর্য্যের কথা নহে। মহারাষ্ট্রীয়দিগের আক্রমণের সময় হরকৃষ্ণ কান্দী হইতে পলায়ন করিয়া, বোয়ালিয়া নামক স্থানে বাসস্থান নির্দেশ করিতে বাধ্য হন। বোয়ালিয়া ভাগীরথীর পূর্ব্বতীরে অবস্থিত ছিল। মহারাষ্ট্রীয়গণ ভাগীরথীর পশ্চিম তীর অধিকার করিয়া অনেক দিন আপনাদের শাসনে রাখিয়াছিল এবং তাহাদের অত্যাচারে বাঙ্গলায় প্রজাগণের দুর্দশার একশেষ হইত।

কান্দী ভাগী-রথীর পশ্চিম তীরে হওয়ায় হরকৃষ্ণ তাহা পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন। ইরকৃষ্ণ অনেক টাকা নজরানা দিয়া মুর্শিদাবাদের নবাবের নিকট হইতে বোয়ালিয়া গ্রাম নিজস্ব করিয়া লন; তাহার সঙ্গে সঙ্গে আরও কতিপয় গ্রাম গ্রহণ করিয়াছিলেন। বোয়ালিয়া তদবধি কান্দী রাজবংশীয়দের সম্পত্তিমধ্যে পরিগণিত হয়। বোয়ালিয়া হইতে পুনর্ব্বার তাঁহারা কান্দীতে আসিয়া বাস করেন।

হরকৃষ্ণের পুত্র মুরলীধর হইতে নারায়ণ সিংহ, গৌরাঙ্গ সিংহ ও বিহারী সিংহ ভ্রাতৃত্রয়ের উৎপত্তি হয়। ইঁহাদের মধ্যে গৌরাঙ্গ সিংহ নিজ ক্ষমতাগুণে নবাবসরকারে কার্য্য প্রাপ্ত হন। তাঁহার নাম হইতে কান্দীবংশীয়দের যশঃ প্রথমতঃ বাঙ্গলার সর্ব্বত্র রাষ্ট্র হয়। গৌরাঙ্গ সিংহ কাননগো বঙ্গাধিকারী মহাশয়দিগের অধীনতায় কার্য্য করেন। তৎকালে কাননগো মহাশয়দিগকে যাবতীয় জমাজমির নির্দেশসম্বন্ধীয় কাগজপত্র রাখিতে হইত। গৌরাঙ্গ সিংহের ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যুৎপত্তি থাকায়, তিনি তাঁহাদের অধীন কর্মচারী হইয়া নিজের প্রভুত ক্ষমতাবলে যথেষ্ট প্রতিপত্তি লাভ করেন এবং মজুমদার উপাধি প্রাপ্ত হন।

\গৌরাম সিংহ অত্যন্ত ভাগ্যবান্ পুরুষ ছিলেন। তিনি বহুল পরিমাণে অর্থ উপার্জনদ্বারা অনেক মহাল, তালুক ও লাখরাজভূমি ক্রয় করিয়া প্রচুর সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া উঠেন। দেবসেবা প্রভৃতিতে তাঁহার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, তিনি এক সময়ে কান্দীতে একটি সুন্দর অট্টালিকা নির্মাণ করিবার ইচ্ছা করিয়া, নবাব সিরাজ উদ্দৌলার হীরাঝিলের উপরিস্থিত এন্তাজ-মহাল প্রাসাদের কর্ণিসের অনুকরণে স্বীয় অট্টালিকা প্রস্তুত করেন। সিরাজ এই সংবাদ শুনিয়া সেই অট্টালিকা ভগ্নস্তূপে পরিণত করিতে আদেশ দিয়া গৌরাঙ্গ সিংহকে বন্দী করিয়া আনিতে বলেন। তৎকালে সাধারণ লোকে নবাব বাদশাহদিগের অনুকরণ করিতে পারিত না; করিলে, তাহাদিগকে যথেষ্ট লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হইত, এরূপ দৃষ্টান্ত অনেক শুনিতে পাওয়া যায়।