০২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

কেন এখন ভারতে জাতিগত জনগণনা?

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
  • 43

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ভারতে ১৯৩১ সালের পর থেকে জাতিগত তথ্য জাতীয় পর্যায়ে সরকারিভাবে গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ বিশেষ করে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) ও দলিতদের প্রতিনিধিত্বের দাবি প্রবলভাবে উঠে আসছে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসসহ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো জাতিগত জনগণনার দাবি জোরদার করে। এরই প্রেক্ষিতে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার এই দাবি গ্রহণ করে জাতীয় গণনায় জাতিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয় — যা একদিকে সামাজিক দাবির প্রতিফলন, আবার অন্যদিকে রাজনৈতিক কৌশল।

মূল বিশ্লেষণ:

জাতিগত জনগণনা: রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রয়োগ

  • প্রতিনিধিত্বের দাবির অগ্রাধিকার: পিছিয়ে পড়া শ্রেণিরা বরাবরই অভিযোগ করে যে সরকারি কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে তাদের যথাযথ প্রতিফলন নেই। জাতিগত তথ্য ছাড়া এই দাবি প্রমাণ করাও কঠিন। সুতরাং, একটি জাতীয় জনগণনা এই দাবিকে তথ্যভিত্তিক শক্তি দেবে।
  • নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে: জাতি-উপজাতি সম্পর্কে পরিসংখ্যান থাকলে সরকার আরও লক্ষ্যভিত্তিক ও সাম্য-ভিত্তিক উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করতে পারবে, বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানে।

বিজেপির রাজনৈতিক চাল: বিরোধী তাস হাতছাড়া

  • বিরোধীদের হাত থেকে ইস্যু কেড়ে নেওয়া: কংগ্রেস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর কাছে জাতিগত জনগণনা ছিল রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য একটি কার্যকর অস্ত্র। বিজেপি এই দাবিকে মেনে নিয়ে সেই ইস্যুটিকেই নিজের শক্তিতে রূপান্তর করেছে।
  • সমগ্র সামাজিক ন্যায়’ মডেল প্রতিষ্ঠা: বিজেপি এখন শুধু জাতিগত প্রতিনিধিত্ব নয়, বরং উন্নয়ন, ধর্মীয় পরিচয়, প্রশাসনিক অন্তর্ভুক্তি—সবকিছুর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ন্যায়ের ধারণা তুলে ধরছে।

উচ্চবর্ণ ভোট ব্যাংকের দ্বিধা ও বিজেপির কৌশল

  • উচ্চবর্ণদের উদ্বেগ: কিছু উচ্চবর্ণ জনগোষ্ঠী জাতিগত জনগণনাকে ‘কাস্ট সিস্টেম’-এর আরও প্রতিষ্ঠা বলে মনে করে। কিন্তু বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, জাতীয়তাবাদ ও ‘উন্নত ভারত’ প্রতিশ্রুতি উচ্চবর্ণদের দল ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছে।

বিহার নির্বাচন: প্রথম পরীক্ষা ক্ষেত্র

  • বিহারে ২০২৫ সালের শেষ দিকে নির্বাচন। এই রাজ্যে জাতি-ভিত্তিক ভোট গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি এখানে প্রথমবারের মতো দেখাবে যে তার ‘সমগ্র সামাজিক ন্যায়’ মডেল বাস্তবে কতটা গ্রহণযোগ্য।
  • যদি বিজেপি এই নির্বাচনে সফল হয়, তবে এটি হবে জাতিগত জনগণনাভিত্তিক রাজনীতির ক্ষেত্রে তাদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ এবং এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা।

ভবিষ্যত প্রভাব: রাজনীতির ভারসাম্যে আমূল পরিবর্তন?

  • জাতিগত জনগণনা বিজেপির পক্ষেও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে যদি এতে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রমাণিত হয় এবং কোটা ও প্রতিনিধিত্বে নতুন চাপ তৈরি হয়।
  • তবে, যদি বিজেপি সফলভাবে তথ্য-ভিত্তিক উন্নয়ন, সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব ও হিন্দু ঐক্যের বার্তা মিশিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তবে এটাই হতে পারে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।

উপসংহার:

জাতিগত জনগণনা শুধুই একটি তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া নয়। এটি ভারতের রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায় বনাম রাজনৈতিক বাস্তবতার সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। বিজেপি এই গণনাকে নিজের কৌশলে পরিণত করে জাতি-ভিত্তিক রাজনীতির পটভূমিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাচ্ছে। বিহার নির্বাচন এই নতুন কৌশলের পরীক্ষামূলক মঞ্চ, যার ফলাফল ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিকে অনেকটাই রূপ দেবে।

কেন এখন ভারতে জাতিগত জনগণনা?

০৭:০০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ভারতে ১৯৩১ সালের পর থেকে জাতিগত তথ্য জাতীয় পর্যায়ে সরকারিভাবে গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ বিশেষ করে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) ও দলিতদের প্রতিনিধিত্বের দাবি প্রবলভাবে উঠে আসছে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসসহ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো জাতিগত জনগণনার দাবি জোরদার করে। এরই প্রেক্ষিতে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার এই দাবি গ্রহণ করে জাতীয় গণনায় জাতিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয় — যা একদিকে সামাজিক দাবির প্রতিফলন, আবার অন্যদিকে রাজনৈতিক কৌশল।

মূল বিশ্লেষণ:

জাতিগত জনগণনা: রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রয়োগ

  • প্রতিনিধিত্বের দাবির অগ্রাধিকার: পিছিয়ে পড়া শ্রেণিরা বরাবরই অভিযোগ করে যে সরকারি কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে তাদের যথাযথ প্রতিফলন নেই। জাতিগত তথ্য ছাড়া এই দাবি প্রমাণ করাও কঠিন। সুতরাং, একটি জাতীয় জনগণনা এই দাবিকে তথ্যভিত্তিক শক্তি দেবে।
  • নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে: জাতি-উপজাতি সম্পর্কে পরিসংখ্যান থাকলে সরকার আরও লক্ষ্যভিত্তিক ও সাম্য-ভিত্তিক উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করতে পারবে, বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানে।

বিজেপির রাজনৈতিক চাল: বিরোধী তাস হাতছাড়া

  • বিরোধীদের হাত থেকে ইস্যু কেড়ে নেওয়া: কংগ্রেস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর কাছে জাতিগত জনগণনা ছিল রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য একটি কার্যকর অস্ত্র। বিজেপি এই দাবিকে মেনে নিয়ে সেই ইস্যুটিকেই নিজের শক্তিতে রূপান্তর করেছে।
  • সমগ্র সামাজিক ন্যায়’ মডেল প্রতিষ্ঠা: বিজেপি এখন শুধু জাতিগত প্রতিনিধিত্ব নয়, বরং উন্নয়ন, ধর্মীয় পরিচয়, প্রশাসনিক অন্তর্ভুক্তি—সবকিছুর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ন্যায়ের ধারণা তুলে ধরছে।

উচ্চবর্ণ ভোট ব্যাংকের দ্বিধা ও বিজেপির কৌশল

  • উচ্চবর্ণদের উদ্বেগ: কিছু উচ্চবর্ণ জনগোষ্ঠী জাতিগত জনগণনাকে ‘কাস্ট সিস্টেম’-এর আরও প্রতিষ্ঠা বলে মনে করে। কিন্তু বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, জাতীয়তাবাদ ও ‘উন্নত ভারত’ প্রতিশ্রুতি উচ্চবর্ণদের দল ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছে।

বিহার নির্বাচন: প্রথম পরীক্ষা ক্ষেত্র

  • বিহারে ২০২৫ সালের শেষ দিকে নির্বাচন। এই রাজ্যে জাতি-ভিত্তিক ভোট গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি এখানে প্রথমবারের মতো দেখাবে যে তার ‘সমগ্র সামাজিক ন্যায়’ মডেল বাস্তবে কতটা গ্রহণযোগ্য।
  • যদি বিজেপি এই নির্বাচনে সফল হয়, তবে এটি হবে জাতিগত জনগণনাভিত্তিক রাজনীতির ক্ষেত্রে তাদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ এবং এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা।

ভবিষ্যত প্রভাব: রাজনীতির ভারসাম্যে আমূল পরিবর্তন?

  • জাতিগত জনগণনা বিজেপির পক্ষেও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে যদি এতে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রমাণিত হয় এবং কোটা ও প্রতিনিধিত্বে নতুন চাপ তৈরি হয়।
  • তবে, যদি বিজেপি সফলভাবে তথ্য-ভিত্তিক উন্নয়ন, সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব ও হিন্দু ঐক্যের বার্তা মিশিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তবে এটাই হতে পারে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।

উপসংহার:

জাতিগত জনগণনা শুধুই একটি তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া নয়। এটি ভারতের রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায় বনাম রাজনৈতিক বাস্তবতার সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। বিজেপি এই গণনাকে নিজের কৌশলে পরিণত করে জাতি-ভিত্তিক রাজনীতির পটভূমিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাচ্ছে। বিহার নির্বাচন এই নতুন কৌশলের পরীক্ষামূলক মঞ্চ, যার ফলাফল ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিকে অনেকটাই রূপ দেবে।