সারাক্ষণ রিপোর্ট
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবেনিজে ২১ বছরে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। শনিবার সিডনিতে লেবার পার্টির বিজয় সমাবেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানরা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান উপায়ে—একে অপরের দেখভাল করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়।’
তিনি আরও বলেন,‘আমাদের কাউকে নকল করতে হয় না, ধার করতে হয় না। আমাদের অনুপ্রেরণা দেশের মধ্যেই, আমাদের মূল্যবোধে ও জনগণের মাঝে।’
ট্রাম্প অনুকরণ করে ব্যর্থ বিরোধী নেতা ডাটন
অ্যালবেনিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ও লিবারেল পার্টির নেতা পিটার ডাটনের জোট নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে এবং তিনি নিজেও তার ২৪ বছরের সংসদীয় আসন হারিয়েছেন।লেবার পার্টি তার প্রচারে ডাটনকে আখ্যা দেয় “ডজি ডাটন” হিসেবে এবং অভিযোগ তোলে, তিনি ও তার দল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক কৌশল অনুকরণ করছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের অনুকরণ একসময় অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণশীল রাজনীতিতে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হলেও ট্রাম্পের বৈশ্বিক ট্যারিফ নীতির পর তা নেতিবাচকে রূপ নেয়।
‘ট্রাম্পেট অব প্যাট্রিয়টস’ নামের ছোট দলের বিপর্যয়
ট্রাম্প নীতিতে অনুপ্রাণিত এক ছোট দল ‘ট্রাম্পেট অব প্যাট্রিয়টস’, যা ধনকুবের ক্লাইভ পামারের বিপুল অর্থায়নে পরিচালিত হলেও, মাত্র ২% ভোট পেয়েছে। ফলে দলটি কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের মত: বড় জয় লেবারের, লিবারেলদের জন্য ধাক্কা
মেলবোর্নের মনাশ ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিষয়ের লেকচারার জারেহ গাজারিয়ান বলেন, “ডজি ডাটন” ট্যাগের প্রভাব কতটা পড়েছে বলা কঠিন। তবে এটি নিঃসন্দেহে লেবার পার্টির বড় জয় এবং লিবারেল পার্টির জন্য তীব্র আঘাত।
আন্তর্জাতিক অভিনন্দনবার্তা: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অ্যালবেনিজেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বন্ধু। আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা অর্জনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, যিনি নিজেও মধ্য-বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ, অ্যালবেনিজেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বন্ধুত্ব আজও অটুট এবং এটি প্রমাণ করে দূরত্বের বন্ধনও দৃঢ় হতে পারে।‘
সংসদে আসন বৃদ্ধির পথে লেবার
লেবার পার্টি বর্তমানে ১৫১ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে ৭৮টি আসন ধরে রেখেছে। সাধারণত দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল কিছু আসন হারায়, কিন্তু এবার লেবার পার্টি তাদের সংখ্যা বাড়ানোর পথে রয়েছে।
জীবনযাত্রার ব্যয় ও জ্বালানী নীতি
নির্বাচনী প্রচারে প্রধান ইস্যু ছিল মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি নীতি। উভয় দলই স্বীকার করেছে, দেশটি জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটে রয়েছে। লিবারেল পার্টি সরকারী ব্যয় অপচয়কে মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে দায়ী করেছে এবং ২০% সরকারি চাকরি কমিয়ে ব্যয় হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।