সারাক্ষণ রিপোর্ট
দ্রুত উত্থান
মার্কো রুবিওকে একসময় মনে করা হতো ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনামূলক দুর্বল সদস্যদের একজন। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (অন্তর্বর্তী), ইউএসএইডের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্কাইভের ভারপ্রাপ্ত প্রধান—মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হাতে পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এতটাই বেড়েছে যে, কোনো সমস্যায় পড়লেই ট্রাম্প এখন রুবিওকে ফোন দেন।
চার পদে একসঙ্গে
ট্রাম্প একসময় নির্বাচনি লড়াইয়ে রুবিওকে ‘লিল মার্কো’ বলে ব্যঙ্গ করলেও এখন তাঁকে প্রধান সংকট-সমাধানকারীর ভূমিকায় দেখছেন। রুবিও যেমন নিজস্ব মতবাদ গুটিয়ে নিয়ে প্রেসিডেন্টের নীতি বাস্তবায়নে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেছেন, তেমনি ক্যাবিনেটের অন্যান্য প্রভাবশালী সদস্যদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখছেন, যার মধ্যে রয়েছেন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ স্যুজি ওয়াইলস।
নীতিগত ইউটার্ন
সিনেটর থাকাকালে রুবিও মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিষয়ক কড়া অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের অধীনে তিনি এসব ‘ওয়োক’ প্রকল্পে অর্থ অপচয় বন্ধে উদ্যোগী হয়েছেন। ইউক্রেনকে সমর্থনের বদলে তিনি কূটনৈতিক সমঝোতার পথে জোর দিয়েছেন এবং চীনের উত্থানকে মেনে নিয়ে বহুমেরু বিশ্ব বাস্তবতাকে স্বীকার করার কথা বলেছেন। এই রূপান্তরকে কেউ কেউ কৌশলী নমনীয়তা বললেও সমালোচকেরা তাঁকে ‘ট্রাম্পের অনুগত ভৃত্য’ আখ্যা দিচ্ছেন।
সমর্থন বনাম সমালোচনা
সমর্থকেরা মনে করেন, ৩৫ বছর বয়সে ফ্লোরিডা হাউসের স্পিকার হওয়া রুবিও ভোটারের চাহিদা বোঝার অসাধারণ ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। তবে সমালোচকেরা যুক্তি দেন, অতিরিক্ত নমনীয় হয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজস্ব সম্ভ্রম হারানোর ঝুঁকি নিয়েছেন। সাবেক কূটনীতিক অ্যাডাম ইরেলি সতর্ক করে বলেছেন, “একবার পা মুছিয়ে নিতে দিলেই ওয়াশিংটনে ভবিষ্যৎ হারাতে হয়—রুবিও এখন তেমনই একটি দোরমাট।”
কর্মস্থলে ক্ষমতার খেলা
অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবিও পছন্দমতো লোক বসিয়েছেন, আবার মতবিরোধ হলে ঘনিষ্ঠ মাগা-সমর্থিত কর্মকর্তাকেও সরিয়ে দিয়েছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টে এলন মাস্কের দ্রুত বাজেট কাটছাঁট প্রস্তাবও তিনি শুনে ফেলেছেন, যদিও ইউএসএইডে আগের সঙ্কোচন থামাননি। তাঁর লক্ষ্য—‘চাপ বজায় রেখে নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন’।
একই সঙ্গে দুই গুরুদায়িত্বের চাপ
একই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাকার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে হাতেগোনা—হেনরি কিসিঞ্জারের সময়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কূটনীতিকেরা আশঙ্কা করছেন, রুবিওর এই দ্বৈত ভূমিকা দুই দপ্তরের কার্যকারিতা ক্ষয় করতে পারে এবং তাঁকে একই দিনে বিদেশ সফর ও ওভাল অফিসের পাশে উপস্থিত থাকার দ্বৈত চাপে ফেলবে।
শেষ কথা
রুবিওর দ্রুত উত্থান ট্রাম্প যুগে টিকে থাকার পাঠও বটে: ব্যক্তিগত অভিমত নীরবে গুছিয়ে নিন, প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা জোর দিয়ে প্রচার করুন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের একটু-আধটু প্যাঁচ দিয়ে নিজের অবস্থান সুরক্ষিত রাখুন। কিন্তু এ উত্থানের মূল্য কতটা, তা হয়তো সময়ই বলবে।