ফ্রান্সেস মাও , ৯ মে ২০২৫( বিবিসি)
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, পাকিস্তান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে জম্মু, উধমপুর (ভারত‑নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর) এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটে অবস্থিত তিনটি ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, তারা এসব ঘাঁটিতে পাকিস্তানের হামলার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জম্মু শহরে একাধিক বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো অভিযান চালাইনি। আমরা আঘাত হেনে পরে তা অস্বীকার করব না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার ভারত দাবি করে, বুধবার রাতে পাকিস্তান তার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার যে চেষ্টা করেছিল, তারা সেটি প্রতিহত করে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হেনেছে। ইসলামাবাদ এই পদক্ষেপকে আরেকটি ‘আক্রমণাত্মক কাজ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
বুধবার ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দ্রুত উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানানো হয়। সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও পাল্টা হামলার ঘটনার ফলে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত দুই দশকে এটি দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সশস্ত্র মুখোমুখি অবস্থান।

ভারত জানায়, গত মাসে ভারত‑নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার বদলা হিসেবে তারা বুধবার পাকিস্তান ও পাকিস্তান‑নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরজুড়ে নয়টি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। ওই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন—যাদের বেশির ভাগই ভারতীয় পর্যটক। পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন দিয়েছে—ভারতের এই অভিযোগ ইসলামাবাদ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
কাশ্মীর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু; অঞ্চলটি নিয়ে তারা দুইবার যুদ্ধও করেছে।ভারত‑নিয়ন্ত্রিত অংশে কয়েক দশকের বিদ্রোহে হাজারো প্রাণহানি ঘটেছে।
বুধবার ভোরে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করার পর বিশ্বজুড়ে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান ওঠে। কিন্তু বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষই নতুন করে সামরিক তৎপরতার অভিযোগ তোলে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান,ভারত পাঠানো ড্রোনগুলোকে একাধিক স্থানে প্রতিহত করা হয়েছে—লাহোর, গুজরاওয়ালা, চকওয়াল, রাওয়ালপিন্ডি, আটক, বাহাওয়ালপুর, মিয়ানওয়ালী, চোর ও করাচির উপকণ্ঠে। তিনি বলেন, সিন্ধু প্রদেশে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও লাহোরে চার সেনা আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর লাহোরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কর্মীদের ভবনের ভেতরেই অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তান রাতভর উত্তর ও পশ্চিম ভারতে একাধিক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করলে ভারত পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দিল্লির বক্তব্য, ‘বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে লাহোরের একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিরস্ত করা হয়েছে।’ পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বতন্ত্রভাবে কোনো পক্ষের বক্তব্যই যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন,‘আমাদের উদ্দেশ্য উত্তেজনা বাড়ানো নয়; আমরা শুধুমাত্র প্রথম আক্রমণের জবাব দিচ্ছি।’
এরই মধ্যে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল থেকে ভারতীয় বিমান হামলা ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাবর্ষণে পাকিস্তান ও পাকিস্তান‑নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনী জানায়,পাকিস্তানের গুলিতে কাশ্মীরের বিতর্কিত এলাকায় ১৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন নারী ও পাঁচজন শিশু রয়েছে।
ভারত প্রথমে পাহালগামের হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও ৭ মে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর‑ই‑তৈয়বাকে দায়ী করে। ভারতীয় পুলিশের দাবি, হামলাকারীদের দুজন পাকিস্তানের নাগরিক; তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে বলছে, ২২ এপ্রিলের হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বুধবার গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের হামলায় নিহতদের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি পুনরায় দাবি করেন, পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে—যেটিকে তিনি ‘চূর্ণকারী জবাব’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বৃহস্পতিবার রাতে জম্মুতে বিস্ফোরণের খবরের পর ভারতীয় সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, আকনূর, সাম্বা ও কাঠুয়া শহরেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে; অনেক নারী ও শিশু ইতোমধ্যে জম্মুর আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে সংঘাত আরও বিস্তৃত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
Sarakhon Report 



















