সারাক্ষণ রিপোর্ট
নতুন গবেষণার মূল অনুসন্ধান
• ঢাকা‑ভিত্তিক ২৭৬টি ইটভাটায় চালানো র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল্ড ট্রায়াল (২০২২‑২৩) দেখিয়েছে, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও স্বল্প‑মেয়াদি আর্থিক সহায়তা পেলে মালিকেরা স্বেচ্ছায় পরিচ্ছন্ন ও জ্বালানি‑সাশ্রয়ী পদ্ধতি গ্রহণ করতে রাজি হন।
• গড়ে জ্বালানি খরচ ২৩ শতাংশ কমে, কার্বন ডাই‑অক্সাইড ও সূক্ষ্ম কণা (PM2.5) নিঃসরণ ২০ শতাংশ হ্রাস পায়।
• প্রতিটন কার্বন কমাতে আনুমানিক ব্যয় ২.৮৫ মার্কিন ডলার; বিনিয়োগের অর্থনৈতিক মুনাফা প্রচলিত সমাধানের তুলনায় প্রায় ৬৫ গুণ বেশি।
কেন ইটভাটা দূষণ গুরুত্বপূর্ণ
বাংলাদেশে ইটভাটা শিল্প গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুদূষণের অন্যতম বড় উৎস। প্রচলিত কাঁচা ইট পোড়ানোর সময় কয়লার পাশাপাশি কাঠের গুঁড়া ও ধান‑কাটা পোড়ানো হয়, যা ব্যাপক CO₂ ও PM2.5 ছড়ায়। স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশ—তিন ক্ষেত্রেই এর ক্ষতিকর প্রভাব স্পষ্ট, অথচ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি দুর্বল।
গবেষণার ধরন ও অংশগ্রহণ
• উদ্যোগটি আইসিডিডিআর,বি, বস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথ, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও নগর উন্নয়ন সংগঠন ‘Green Delta S&L’‑এর গবেষকদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হয়।
• ২০২২‑২৩ মৌসুমে অংশগ্রহণকারী ভাটাগুলোকে উন্নত ইট সাজানো‑বাহন, দক্ষ জ্বালানি মিশ্রণ (কয়লার বদলে খুদ‑কাঠ ও ধানের ভূষি) ও কম‑ধোঁয়া চিমনি প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পরিবেশ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ফলাফল
• ছয় মাসের ব্যবধানে ৬৫ শতাংশ ভাটা নতুন পদ্ধতি পুরোপুরি মেনে চলে।
• জ্বালানি সাশ্রয়ের ফলে খরচ কমে, পাশাপাশি উচ্চমানের ইটের উৎপাদন বাড়ে—যা বাজারে দ্রুত বিক্রি হয়।
• গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, সব ভাটা এই কৌশল নিলে একটি মৌসুমেই জাতীয় CO₂ নিঃসরণ ২৪ লাখ টন পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
আর্থিক সুফল ও ব্যয়‑সাশ্রয়
• উন্নত প্রযুক্তির মোট খরচ সামান্য হলেও মুনাফা দ্রুত বাড়ে এবং মালিকেরা দুই‑তৃতীয়াংশের বেশি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ফেরত পান ছয় মাসের কম সময়ে।
• ১ টন CO₂ কমাতে ২.৮৫ ডলার ব্যয়ে ১৮৫ ডলার সমমূল্যের ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে রোধ হয়—অর্থাৎ, কল্যাণ‑মূল্যে ৬৫ গুণ সাশ্রয়।
নীতিনির্ধারক ও শিল্পখাতের জন্য সুপারিশ
• ভাটার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য‑ঝুঁকি সামাল দিতে কারিগরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিরাপত্তা‑উপকরণ নিশ্চিত করা জরুরি।
• বিদ্যমান পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগের বদলে ভর্তুকি‑ভিত্তিক উদ্ভাবনী তহবিল ও স্বল্পসুদ ঋণ সহজলভ্য করলে দ্রুত স্কেলের সুবিধা মিলবে।
• ভারত, নেপাল ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশে একই ধরনের ভাটায় এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের বড় সুযোগ রয়েছে।
গবেষক দল ও অংশীদার প্রতিষ্ঠান
আইসিডিডিআর,বি‑র সহযোগী বিজ্ঞানী নোভা ব্রুকসের নেতৃত্বে ৯‑সংগঠনের টিম এই প্রকল্প চালায়। স্ট্যানফোর্ডের স্টিফেন লিউ ও গ্রীন ডেলটার সমীর মোদকসহ গবেষকরা মাঠ‑পর্যায়ে মালিক, শ্রমিক ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।
Leave a Reply