১০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
কংগ্রেসের বহু নেতা ইন্দিরা জি ও জেপি-র সংলাপ চেয়েছিলেন, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল তা হতে দেয়নি হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২) ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি ইউক্রেন দাবি করেছে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিক ইইউ কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার তিন

ডন রিপোর্ট: পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিবেশী যুদ্ধের কিনারা থেকে স্বাভাবিকতায় ফিরেছে

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৪:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • 46
  • একাধিক দিন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ভারত‑পাকিস্তান সব লড়াই বন্ধে একমত হয়েছে
    •মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে উভয় দেশকে ‘সাধারণ বুদ্ধি’ ব্যবহারের জন্য অভিনন্দন জানান
    • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস‑প্রেসিডেন্টও মধ্যস্থতায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন
    • চীন, সৌদি আরব ও তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ হয়ে সংযম দেখানোর জন্য প্রশংসা পান
    • ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব জানান, দুই দেশের ডিজিএমও কথা বলেছেন; পরবর্তী আলোচনাকে ঘিরে ভারতীয় মন্ত্রণালয়গুলোর বিবৃতিতে দ্বন্দ্ব
    • নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে উভয় পক্ষ থেকেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের খবর
    • পহেলগাম হামলার পর ভারতের ঘোষিত ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ বহাল থাকবে বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য
    • কাশ্মীর ও পানিবণ্টন নিয়ে শান্তি‑আলোচনার আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী সংলাপের প্রয়োজন তুলে ধরেন

ইসলামাবাদ: চার দিন ধরে প্রাণঘাতী জেট‑যুদ্ধ, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণের পর পাকিস্তান ও ভারত শনিবার তাত্ক্ষণিক ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর উপমহাদেশে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে—যার ঘোষণা অকপটে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি উভয় দেশকে “সাধারণ বুদ্ধি ও মহান বুদ্ধিমত্তা” প্রদর্শনের জন্য অভিনন্দন জানান।

ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল‑এর পোস্টের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন, যখন পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীদের দ্বন্দ্ব পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছিল।

ট্রাম্প লেখেন, “আমেরিকার মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশকে অভিনন্দন।”

এক্স‑এ দেওয়া বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার জানান, “পাকিস্তান ও ভারত তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে পাকিস্তান সব সময়ই প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে আপস না করে।”

ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, দুই দেশের সামরিক অভিযানের প্রধানরা কথা বলে ভারতীয় সময় বিকেল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট) সব লড়াই বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; যদিও তিনি ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি জানান, ডিজিএমও‑রা ১২ মে আবার কথা বলবেন।

দার জিও নিউজকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগের সব চ্যানেল ও হটলাইন সচল হয়েছে এবং তিন ডজনেরও বেশি দেশ এই সমঝোতা বাস্তবায়নে সক্রিয় সহায়তা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আঞ্চলিক শান্তি আনতে “নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার” জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। এক্স‑এ তিনি লেখেন, “আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তাকে স্বাগত জানাই।”

চার দিনের পাল্টা‑পাল্টি হামলায় অন্তত ৬০ জন নিহত এবং সীমান্ত ও আজাদ ও অধিকৃত কাশ্মীরের হাজারো বেসামরিক মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়।

পাকিস্তান বলছে, তারা অন্তত ৭৭টি ইসরায়েলি উচ্চপ্রযুক্তি ড্রোন ভূপাতিত করেছে; অন্যদিকে ভারত দাবি করেছে, তারা শত শত তুর্কি‑নির্মিত পাকিস্তানি ড্রোন ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তান আরও জানায়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে তিনটি ফরাসি রাফাল জেট, ভূপাতিত করেছে—যদিও নয়াদিল্লি কোনো ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি।

এই প্রথম দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে ড্রোন হামলা চালায়। উভয়ই নিজস্ব ড্রোন উন্নয়নের পাশাপাশি আমদানি করে।

শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বহাল

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ভারতের দুই সরকারি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, পহেলগাম হামলার পর ঘোষিত ও পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে গৃহীত বাণিজ্য স্থগিতকরণ ও ভিসা বাতিলের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আপাতত বহাল থাকবে।

তারা আরও জানায়, ১৯৬০ সালের ইন্দাস জলচুক্তি, যেটি পহেলগাম হামলার পরে ভারত স্থগিত করেছিল, তা অব্যাহতভাবে স্থগিতই থাকবে।

এদিকে, মিশ্রির বক্তব্যে বলা হয়েছিল ১২ মে ডিজিএমও‑দের ফের কথা হবে, কিন্তু ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানায় “অন্য কোনো বিষয়ে অন্য কোথাও আলোচনার সিদ্ধান্ত নেই”। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বরাতে তারা টুইট করে, “ভারত‑পাকিস্তানের মধ্যে গুলি ও সামরিক অভিযান বন্ধের সমাধান সরাসরি দুই দেশই করেছে।”

ইতিবাচক পদক্ষেপ

মুজাফফরাবাদের আইটি পরামর্শক বিলাল শাব্বির বলেন, “যুদ্ধ শুধু সৈনিকদের নয়, মূলত বেসামরিক লোকদেরই প্রাণ নেয়—এ ক্ষেত্রে কাশ্মীরের মানুষই ভুগত।”

পাকিস্তান বিজনেস কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এহসান মালিক বলেন, “উভয় দেশকেই সামাজিক‑অর্থনৈতিক সূচকে বিরাট জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে; যুদ্ধবিরতি এই লক্ষ্যপূরণে সহায়ক।”

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের ফেলো শুজা নওয়াজ মনে করেন, “যথাযথ সময়ক্ষেপণের” পর ইন্দাস চুক্তি আসন্ন আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় দিক থেকে লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যায়। শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণ শোনা যায় এবং রাতের আকাশে আগের রাতের মতোই আলো ও গুলির আভাস দেখা যায়। আজাদ কাশ্মীরের বারনালায়ও গুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা গেছে।

উভয় দেশের সামরিক মুখপাত্রদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অধিকৃত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক্স‑এ লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতিতে কী হলো? শ্রীনগর জুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ!”

মার্কিন প্রশংসা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তিনি ও ভাইস‑প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “দুটি দেশ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনায় সম্মত হয়েছে।” রুবিও দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদের “প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণের” জন্য ধন্যবাদ জানান।

ভ্যান্সও ট্রাম্পের বিবৃতি পুনরায় পোস্ট করে চুক্তির প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

যুদ্ধবিরতির পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ আশা প্রকাশ করেন, পানি বণ্টন ও কাশ্মীরসহ সব সংবেদনশীল বিষয় সমাধানে শান্তি‑সংলাপ শুরু হবে। তিনি বলেন, “আঞ্চলিক শান্তি ও কোটি মানুষের স্বার্থে আমরা যুদ্ধবিরতির বিকল্পকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছি।”

চীন‑সহ অন্যান্য বিশ্বনেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “চীন লাভ‑ক্ষতির হিসাব না করে পাকিস্তানের পাশে ছিল।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ, কাতারের আমির শেখ তামিম, এবং জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসকেও তিনি ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরও বলেন, “পহেলগাম ঘটনার অজুহাতে ভারত আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় এবং ড্রোন‑মিসাইল দিয়ে বেসামরিক জনপদে আঘাত করে; আমরা উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।”

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দার চীনের ওয়াং ই, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান এবং তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে আলোচনায় সংযম দেখানোর জন্য প্রশংসিত হন।

বাহাওয়ালপুরে ড্রোন দেখার খবরে মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও জেলা প্রশাসন জানায়, সবকিছু “অবরুদ্ধ” করা হয়েছে, কোনো ক্ষতি হয়নি।

——
ওয়াশিংটনে আনোয়ার ইকবাল এই প্রতিবেদনে সহায়তা করেন
এএফপি, রয়টার্স ও এএপিপি‑র তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে

কংগ্রেসের বহু নেতা ইন্দিরা জি ও জেপি-র সংলাপ চেয়েছিলেন, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল তা হতে দেয়নি

ডন রিপোর্ট: পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিবেশী যুদ্ধের কিনারা থেকে স্বাভাবিকতায় ফিরেছে

০৩:৫৪:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • একাধিক দিন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ভারত‑পাকিস্তান সব লড়াই বন্ধে একমত হয়েছে
    •মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে উভয় দেশকে ‘সাধারণ বুদ্ধি’ ব্যবহারের জন্য অভিনন্দন জানান
    • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস‑প্রেসিডেন্টও মধ্যস্থতায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন
    • চীন, সৌদি আরব ও তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ হয়ে সংযম দেখানোর জন্য প্রশংসা পান
    • ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব জানান, দুই দেশের ডিজিএমও কথা বলেছেন; পরবর্তী আলোচনাকে ঘিরে ভারতীয় মন্ত্রণালয়গুলোর বিবৃতিতে দ্বন্দ্ব
    • নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে উভয় পক্ষ থেকেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের খবর
    • পহেলগাম হামলার পর ভারতের ঘোষিত ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ বহাল থাকবে বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য
    • কাশ্মীর ও পানিবণ্টন নিয়ে শান্তি‑আলোচনার আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী সংলাপের প্রয়োজন তুলে ধরেন

ইসলামাবাদ: চার দিন ধরে প্রাণঘাতী জেট‑যুদ্ধ, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণের পর পাকিস্তান ও ভারত শনিবার তাত্ক্ষণিক ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর উপমহাদেশে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে—যার ঘোষণা অকপটে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি উভয় দেশকে “সাধারণ বুদ্ধি ও মহান বুদ্ধিমত্তা” প্রদর্শনের জন্য অভিনন্দন জানান।

ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল‑এর পোস্টের কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন, যখন পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীদের দ্বন্দ্ব পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছিল।

ট্রাম্প লেখেন, “আমেরিকার মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশকে অভিনন্দন।”

এক্স‑এ দেওয়া বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার জানান, “পাকিস্তান ও ভারত তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে পাকিস্তান সব সময়ই প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে আপস না করে।”

ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, দুই দেশের সামরিক অভিযানের প্রধানরা কথা বলে ভারতীয় সময় বিকেল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট) সব লড়াই বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; যদিও তিনি ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি জানান, ডিজিএমও‑রা ১২ মে আবার কথা বলবেন।

দার জিও নিউজকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগের সব চ্যানেল ও হটলাইন সচল হয়েছে এবং তিন ডজনেরও বেশি দেশ এই সমঝোতা বাস্তবায়নে সক্রিয় সহায়তা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আঞ্চলিক শান্তি আনতে “নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার” জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। এক্স‑এ তিনি লেখেন, “আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তাকে স্বাগত জানাই।”

চার দিনের পাল্টা‑পাল্টি হামলায় অন্তত ৬০ জন নিহত এবং সীমান্ত ও আজাদ ও অধিকৃত কাশ্মীরের হাজারো বেসামরিক মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়।

পাকিস্তান বলছে, তারা অন্তত ৭৭টি ইসরায়েলি উচ্চপ্রযুক্তি ড্রোন ভূপাতিত করেছে; অন্যদিকে ভারত দাবি করেছে, তারা শত শত তুর্কি‑নির্মিত পাকিস্তানি ড্রোন ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তান আরও জানায়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে তিনটি ফরাসি রাফাল জেট, ভূপাতিত করেছে—যদিও নয়াদিল্লি কোনো ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি।

এই প্রথম দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে ড্রোন হামলা চালায়। উভয়ই নিজস্ব ড্রোন উন্নয়নের পাশাপাশি আমদানি করে।

শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বহাল

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ভারতের দুই সরকারি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, পহেলগাম হামলার পর ঘোষিত ও পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে গৃহীত বাণিজ্য স্থগিতকরণ ও ভিসা বাতিলের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আপাতত বহাল থাকবে।

তারা আরও জানায়, ১৯৬০ সালের ইন্দাস জলচুক্তি, যেটি পহেলগাম হামলার পরে ভারত স্থগিত করেছিল, তা অব্যাহতভাবে স্থগিতই থাকবে।

এদিকে, মিশ্রির বক্তব্যে বলা হয়েছিল ১২ মে ডিজিএমও‑দের ফের কথা হবে, কিন্তু ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানায় “অন্য কোনো বিষয়ে অন্য কোথাও আলোচনার সিদ্ধান্ত নেই”। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বরাতে তারা টুইট করে, “ভারত‑পাকিস্তানের মধ্যে গুলি ও সামরিক অভিযান বন্ধের সমাধান সরাসরি দুই দেশই করেছে।”

ইতিবাচক পদক্ষেপ

মুজাফফরাবাদের আইটি পরামর্শক বিলাল শাব্বির বলেন, “যুদ্ধ শুধু সৈনিকদের নয়, মূলত বেসামরিক লোকদেরই প্রাণ নেয়—এ ক্ষেত্রে কাশ্মীরের মানুষই ভুগত।”

পাকিস্তান বিজনেস কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এহসান মালিক বলেন, “উভয় দেশকেই সামাজিক‑অর্থনৈতিক সূচকে বিরাট জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে; যুদ্ধবিরতি এই লক্ষ্যপূরণে সহায়ক।”

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া সেন্টারের ফেলো শুজা নওয়াজ মনে করেন, “যথাযথ সময়ক্ষেপণের” পর ইন্দাস চুক্তি আসন্ন আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় দিক থেকে লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যায়। শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণ শোনা যায় এবং রাতের আকাশে আগের রাতের মতোই আলো ও গুলির আভাস দেখা যায়। আজাদ কাশ্মীরের বারনালায়ও গুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা গেছে।

উভয় দেশের সামরিক মুখপাত্রদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অধিকৃত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক্স‑এ লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতিতে কী হলো? শ্রীনগর জুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ!”

মার্কিন প্রশংসা

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তিনি ও ভাইস‑প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “দুটি দেশ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনায় সম্মত হয়েছে।” রুবিও দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদের “প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণের” জন্য ধন্যবাদ জানান।

ভ্যান্সও ট্রাম্পের বিবৃতি পুনরায় পোস্ট করে চুক্তির প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

যুদ্ধবিরতির পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ আশা প্রকাশ করেন, পানি বণ্টন ও কাশ্মীরসহ সব সংবেদনশীল বিষয় সমাধানে শান্তি‑সংলাপ শুরু হবে। তিনি বলেন, “আঞ্চলিক শান্তি ও কোটি মানুষের স্বার্থে আমরা যুদ্ধবিরতির বিকল্পকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছি।”

চীন‑সহ অন্যান্য বিশ্বনেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “চীন লাভ‑ক্ষতির হিসাব না করে পাকিস্তানের পাশে ছিল।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ, কাতারের আমির শেখ তামিম, এবং জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসকেও তিনি ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরও বলেন, “পহেলগাম ঘটনার অজুহাতে ভারত আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় এবং ড্রোন‑মিসাইল দিয়ে বেসামরিক জনপদে আঘাত করে; আমরা উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।”

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দার চীনের ওয়াং ই, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান এবং তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে আলোচনায় সংযম দেখানোর জন্য প্রশংসিত হন।

বাহাওয়ালপুরে ড্রোন দেখার খবরে মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও জেলা প্রশাসন জানায়, সবকিছু “অবরুদ্ধ” করা হয়েছে, কোনো ক্ষতি হয়নি।

——
ওয়াশিংটনে আনোয়ার ইকবাল এই প্রতিবেদনে সহায়তা করেন
এএফপি, রয়টার্স ও এএপিপি‑র তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে