০১:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৯৩)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • 63

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মহম্মদ রেজা খাঁর পদচ্যুতির পর মীডলটনের অধীনতায়, তিনি আরও দক্ষতা প্রকাশ করিতে থাকেন। মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাব রায়কে বন্দী করিয়া আনার কোম্পানীর রাজস্বসম্বন্ধে অনেক বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয়। দেওয়ানী-গ্রহণের পর হইতে হেষ্টিংসের আগমন পর্য্যন্ত, যেরূপ ভাবে দেশের রাজস্বসংগ্রহ ও শাসনকার্য্য চলিয়া আসিতেছিল, হেষ্টিংস সে সমস্তের পরি-বর্তন করিয়া নূতন বন্দোবস্ত করিতে উংক হইলেন। ডিরেক্টারদিগের অনুমতি গ্রহণ করিয়া, তাঁহার নূতন ভাবের বন্দোবস্ত আরম্ভ হইল।

কোম্পানী রাজস্ব ও শাসন উভয়ই নিজ হস্তে লইতে ইচ্ছা করিয়া, প্রচলিত দ্বৈধ-শাসন (Double Government) রহিত করিয়া দিলেন এবং রাজস্ব ও শাসন সমস্ত বিষয়ের ভার গবর্ণরের হস্তে ন্যস্ত হইল। এই সময়ে হেষ্টিংস রাজস্ব ও শাসন সম্বন্ধে যে সমস্ত বন্দোবস্ত করেন, আমরা সংক্ষেপে তাহার বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতেছি। ইহা বিশদরূপে বুঝিতে না পারিলে, গঙ্গাগোবিন্দের সহিত শাসনকার্য্যের কিরূপ সম্বন্ধ হইয়াছিল, তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যাইবে না। হেষ্টিংস প্রথমতঃ নায়েব দেওয়ানী পদ রহিত করিয়া, স্বহস্তে রাজস্বসংক্রান্ত যাবতীয় ভার গ্রহণ করিলেন।

পরে স্বয়ং ও কাউন্সিলের চারিজন সভ্য লইয়া, এক পর্যাটক-সমিতি (Committee of circuit) গঠন করিয়া, বাঙ্গলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে উপস্থিত হইয়া, ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন, এবং নূতন ইজারা বন্দোবস্তের ইচ্ছা করেন। তাঁহারা প্রথমতঃ কৃষ্ণ-নগরে উপস্থিত হন। এইরূপ পরিদর্শন করিয়া, তাঁহারা দেশের অবস্থা অনেক পরিমাণে জ্ঞাত হইলেন। তখন এইরূপ সিদ্ধান্ত হইল যে, জমিদারদিগকে প্রকাশ্য নীলামে উচ্চদরে পাঁচ বৎসরের জন্য জমির ইজারা দিলে, রাজস্ব আদায়ের সুবন্দোবস্ত হইতে পারে। তাঁহাদের সেই সিদ্ধান্তঅনুসারে পাঁচসনা বন্দোবস্তের নিয়ম হয়।

তাঁহারা জমি-দারের হস্ত হইতে প্রজাদিগকে রক্ষা করিতেও ইচ্ছা করেন। যদিও হেষ্টিংস সাহেব, প্রকাশ্যভাবে সাধারণের সমক্ষে প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, প্রজাদিগের মঙ্গলের জন্য এই পাঁচসনা বন্দোবস্তের সৃষ্টি হইল, কিন্তু জমিদারদের নিকট হইতে তিনি যেরূপ ভাবে উৎকোচ গ্রহণ করিয়া-ছিলেন, তাহাতে প্রজাদিগের উপর পূর্ব্বাপেক্ষা কত অধিক অত্যাচার হইয়াছিল, তাহা বুদ্ধিমান্ মাত্রেই উপলব্ধি করিতে পারেন।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৯৩)

১১:০০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মহম্মদ রেজা খাঁর পদচ্যুতির পর মীডলটনের অধীনতায়, তিনি আরও দক্ষতা প্রকাশ করিতে থাকেন। মহম্মদ রেজা খাঁ ও সেতাব রায়কে বন্দী করিয়া আনার কোম্পানীর রাজস্বসম্বন্ধে অনেক বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয়। দেওয়ানী-গ্রহণের পর হইতে হেষ্টিংসের আগমন পর্য্যন্ত, যেরূপ ভাবে দেশের রাজস্বসংগ্রহ ও শাসনকার্য্য চলিয়া আসিতেছিল, হেষ্টিংস সে সমস্তের পরি-বর্তন করিয়া নূতন বন্দোবস্ত করিতে উংক হইলেন। ডিরেক্টারদিগের অনুমতি গ্রহণ করিয়া, তাঁহার নূতন ভাবের বন্দোবস্ত আরম্ভ হইল।

কোম্পানী রাজস্ব ও শাসন উভয়ই নিজ হস্তে লইতে ইচ্ছা করিয়া, প্রচলিত দ্বৈধ-শাসন (Double Government) রহিত করিয়া দিলেন এবং রাজস্ব ও শাসন সমস্ত বিষয়ের ভার গবর্ণরের হস্তে ন্যস্ত হইল। এই সময়ে হেষ্টিংস রাজস্ব ও শাসন সম্বন্ধে যে সমস্ত বন্দোবস্ত করেন, আমরা সংক্ষেপে তাহার বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতেছি। ইহা বিশদরূপে বুঝিতে না পারিলে, গঙ্গাগোবিন্দের সহিত শাসনকার্য্যের কিরূপ সম্বন্ধ হইয়াছিল, তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যাইবে না। হেষ্টিংস প্রথমতঃ নায়েব দেওয়ানী পদ রহিত করিয়া, স্বহস্তে রাজস্বসংক্রান্ত যাবতীয় ভার গ্রহণ করিলেন।

পরে স্বয়ং ও কাউন্সিলের চারিজন সভ্য লইয়া, এক পর্যাটক-সমিতি (Committee of circuit) গঠন করিয়া, বাঙ্গলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে উপস্থিত হইয়া, ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন, এবং নূতন ইজারা বন্দোবস্তের ইচ্ছা করেন। তাঁহারা প্রথমতঃ কৃষ্ণ-নগরে উপস্থিত হন। এইরূপ পরিদর্শন করিয়া, তাঁহারা দেশের অবস্থা অনেক পরিমাণে জ্ঞাত হইলেন। তখন এইরূপ সিদ্ধান্ত হইল যে, জমিদারদিগকে প্রকাশ্য নীলামে উচ্চদরে পাঁচ বৎসরের জন্য জমির ইজারা দিলে, রাজস্ব আদায়ের সুবন্দোবস্ত হইতে পারে। তাঁহাদের সেই সিদ্ধান্তঅনুসারে পাঁচসনা বন্দোবস্তের নিয়ম হয়।

তাঁহারা জমি-দারের হস্ত হইতে প্রজাদিগকে রক্ষা করিতেও ইচ্ছা করেন। যদিও হেষ্টিংস সাহেব, প্রকাশ্যভাবে সাধারণের সমক্ষে প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, প্রজাদিগের মঙ্গলের জন্য এই পাঁচসনা বন্দোবস্তের সৃষ্টি হইল, কিন্তু জমিদারদের নিকট হইতে তিনি যেরূপ ভাবে উৎকোচ গ্রহণ করিয়া-ছিলেন, তাহাতে প্রজাদিগের উপর পূর্ব্বাপেক্ষা কত অধিক অত্যাচার হইয়াছিল, তাহা বুদ্ধিমান্ মাত্রেই উপলব্ধি করিতে পারেন।