০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৯৫)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 64

শ্রী নিখিলনাথ রায়

একজন মুফতি ও দুই জন মৌলবী কাজীর সাহায্যের জন্য নিযুক্ত হন এবং ইংরেজ কালেক্টরগণ তাহার তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করেন। মুর্শিদাবাদে একটি সদর নিজামত আদালত প্রতিষ্ঠিত হইল; তাহার প্রধান পদে একজন দারোগা নিযুক্ত হইলেন এবং একজন কাজী, একজন মুক্তি ও তিন জন মৌলবী তাঁহার সাহায্যার্থ নিযুক্ত হইলেন। ইঁহাদের নিয়োগ ও তত্ত্বাবধানের ভার নাজিমের উপরই ন্যস্ত হইল।

যদিও কোম্পানী রাজস্ব ও শাসন উভয়ের ভার গ্রহণ করিলেন বটে, তথাপি একেবারে নাজিমকে সমস্ত বিষয় হইতে বিদূরিত করিতে ইচ্ছা না করিয়া, তাঁহাকে ফৌজদারী বিচার বিভাগের কর্তা করিয়া রাখিলেন। কিন্তু এই সকল বন্দোবস্তের ভার কোম্পানী নিজেই গ্রহণ করিয়াছিলেন। ক্রমে ক্রমে নাজিমের হস্ত হইতে তাহাও বিচ্যুত হইয়া রাজস্ব ও বিচার উভয়ই কোম্পানীর সম্পূর্ণ অধীনে আইসে।

হেষ্টিংসের এই নিয়ম যে দেশের কিয়ৎ-পরিমাণে উপকার করিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। বিশেষতঃ তিনি প্রত্যেক বিচারালয়ে হিন্দু ও মুসলমান আইন প্রচলিত রাখায়, মফঃস্বলে’ লোকদিগের বিশেষরূপে উপকার হয়। ইহার পর কলিকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হইয়া, ইংরেজী আইনে কলিকাতার অধিবাসীদিগকে যেরূপ জ্বালাতন করিয়াছিল, তাহাতে হেষ্টিংসের দেশীয় আইন প্রচলন করা সম্বন্ধে প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, রাজস্ববন্দোবস্তে তিনি নিজের লালসা মিটাইবার জন্য দেশের সর্ব্বনাশ করিয়া গিয়াছেন।

এইরূপে হেষ্টিংস নূতন বন্দোবস্ত করিয়া দেশশাসনে প্রবৃত্ত হইলেন। পূর্ব্বে উক্ত হইয়াছে যে, পাটনা ও মুর্শিদাবাদ হইতে রাজস্ব-সমিতি উঠিয়া আসিয়া কলিকাতায় স্থাপিত হইল। এই সময়ে কিছু দিনের জন্য কাননগো বিভাগটি উঠাইয়া দেওয়া হয়। গঙ্গাগোবিন্দ পূর্ব্ব হইতে কাননগো বিভাগে কাৰ্য্য করিতেন; কাজেই তাঁহার আর কোন কার্য্য না থাকায়, তিনি কলিকাতায় রাজস্বসমিতির অধীন হইয়া কার্য্য করিবার জন্য তথায় উপস্থিত হইলেন। আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি যে, হেষ্টিংস সাহেবের সহিত তাঁহার পূর্ব্ব হইতে বিলক্ষণ পরিচয় ছিল, হেষ্টিংস সেই জন্য এক্ষণে তাঁহার আশা পূর্ণ করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন।

গঙ্গাগোবিন্দ হেষ্টিংসের শরণাপন্ন হইলে, তিনি তাঁহাকে খালসার রায়রায়ান এবং রাজস্ব-কমিটীর দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের সহকারী-রূপে ৭০০ টাকা বেতনে নিযুক্ত করিলেন। এই সময় হইতে গঙ্গা গোবিন্দ দিন দিন ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহভাজন হইতে থাকেন। ১৭৭৪ খৃঃ অব্দে গঙ্গাগোবিন্দ কলিকাতা রাজস্ব-সমিতির দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হইয়া আপনার চরিত্রের পরিচয় দিতে লাগিলেন। যাহাদের উপর তাঁহার তত্ত্বাবধানের ভার ছিল, উৎকোচভারে তাহারা প্রপীড়িত হইয়া উঠিল। এই সমস্ত উৎকোচ যে গঙ্গাগোবিন্দ একাই গ্রহণ করিতেন এমন নহে, ইহার অধিকাংশই হেষ্টিংস সাহেবকে প্রদান করিতে হইত।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৯৫)

১১:০০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

একজন মুফতি ও দুই জন মৌলবী কাজীর সাহায্যের জন্য নিযুক্ত হন এবং ইংরেজ কালেক্টরগণ তাহার তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করেন। মুর্শিদাবাদে একটি সদর নিজামত আদালত প্রতিষ্ঠিত হইল; তাহার প্রধান পদে একজন দারোগা নিযুক্ত হইলেন এবং একজন কাজী, একজন মুক্তি ও তিন জন মৌলবী তাঁহার সাহায্যার্থ নিযুক্ত হইলেন। ইঁহাদের নিয়োগ ও তত্ত্বাবধানের ভার নাজিমের উপরই ন্যস্ত হইল।

যদিও কোম্পানী রাজস্ব ও শাসন উভয়ের ভার গ্রহণ করিলেন বটে, তথাপি একেবারে নাজিমকে সমস্ত বিষয় হইতে বিদূরিত করিতে ইচ্ছা না করিয়া, তাঁহাকে ফৌজদারী বিচার বিভাগের কর্তা করিয়া রাখিলেন। কিন্তু এই সকল বন্দোবস্তের ভার কোম্পানী নিজেই গ্রহণ করিয়াছিলেন। ক্রমে ক্রমে নাজিমের হস্ত হইতে তাহাও বিচ্যুত হইয়া রাজস্ব ও বিচার উভয়ই কোম্পানীর সম্পূর্ণ অধীনে আইসে।

হেষ্টিংসের এই নিয়ম যে দেশের কিয়ৎ-পরিমাণে উপকার করিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। বিশেষতঃ তিনি প্রত্যেক বিচারালয়ে হিন্দু ও মুসলমান আইন প্রচলিত রাখায়, মফঃস্বলে’ লোকদিগের বিশেষরূপে উপকার হয়। ইহার পর কলিকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হইয়া, ইংরেজী আইনে কলিকাতার অধিবাসীদিগকে যেরূপ জ্বালাতন করিয়াছিল, তাহাতে হেষ্টিংসের দেশীয় আইন প্রচলন করা সম্বন্ধে প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, রাজস্ববন্দোবস্তে তিনি নিজের লালসা মিটাইবার জন্য দেশের সর্ব্বনাশ করিয়া গিয়াছেন।

এইরূপে হেষ্টিংস নূতন বন্দোবস্ত করিয়া দেশশাসনে প্রবৃত্ত হইলেন। পূর্ব্বে উক্ত হইয়াছে যে, পাটনা ও মুর্শিদাবাদ হইতে রাজস্ব-সমিতি উঠিয়া আসিয়া কলিকাতায় স্থাপিত হইল। এই সময়ে কিছু দিনের জন্য কাননগো বিভাগটি উঠাইয়া দেওয়া হয়। গঙ্গাগোবিন্দ পূর্ব্ব হইতে কাননগো বিভাগে কাৰ্য্য করিতেন; কাজেই তাঁহার আর কোন কার্য্য না থাকায়, তিনি কলিকাতায় রাজস্বসমিতির অধীন হইয়া কার্য্য করিবার জন্য তথায় উপস্থিত হইলেন। আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি যে, হেষ্টিংস সাহেবের সহিত তাঁহার পূর্ব্ব হইতে বিলক্ষণ পরিচয় ছিল, হেষ্টিংস সেই জন্য এক্ষণে তাঁহার আশা পূর্ণ করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন।

গঙ্গাগোবিন্দ হেষ্টিংসের শরণাপন্ন হইলে, তিনি তাঁহাকে খালসার রায়রায়ান এবং রাজস্ব-কমিটীর দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের সহকারী-রূপে ৭০০ টাকা বেতনে নিযুক্ত করিলেন। এই সময় হইতে গঙ্গা গোবিন্দ দিন দিন ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহভাজন হইতে থাকেন। ১৭৭৪ খৃঃ অব্দে গঙ্গাগোবিন্দ কলিকাতা রাজস্ব-সমিতির দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হইয়া আপনার চরিত্রের পরিচয় দিতে লাগিলেন। যাহাদের উপর তাঁহার তত্ত্বাবধানের ভার ছিল, উৎকোচভারে তাহারা প্রপীড়িত হইয়া উঠিল। এই সমস্ত উৎকোচ যে গঙ্গাগোবিন্দ একাই গ্রহণ করিতেন এমন নহে, ইহার অধিকাংশই হেষ্টিংস সাহেবকে প্রদান করিতে হইত।