ব্রুক সিংম্যান
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক (ডিএনআই) তুলসি গ্যাবার্ড জাতীয় গোয়েন্দা পরিষদের নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ দুজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন—যাদের হুইসেলব্লোয়াররা ‘ট্রাম্প‑বিরোধী অবস্থানে চরমপন্থী’ বলে বর্ণনা করেছেন—এবং পরিষদকে সিআইএ থেকে সরিয়ে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দপ্তর (ওডিএনআই)-এ স্থানান্তর করছেন, যাতে গোয়েন্দা তথ্যের যে কোনো রাজনীতিকরণ তিনি সরাসরি ঠেকাতে পারেন। বিষয়টি জানিয়েছে ফক্স নিউজ ডিজিটাল।
গ্যাবার্ড মঙ্গলবার জাতীয় গোয়েন্দা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ার মাইক কলিন্স এবং তাঁর উপচেয়ার মারিয়া ল্যাঙ্গান রিয়েকহফকে বরখাস্ত করেন বলে ফক্স নিউজ ডিজিটালকে জানান ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গত মাসেই গ্যাবার্ড গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে জড়িত কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বিচার বিভাগের কাছে ফৌজদারি বিচারের জন্য সুপারিশ করেছিলেন।
মন্তব্যের জন্য ফক্স নিউজ ডিজিটাল ল্যাঙ্গান রিয়েকহফের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি, আর কলিন্সের কোনো যোগাযোগের তথ্যও সহজে পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা জানান, কলিন্সের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে হুইসেলব্লোয়ারদের নালিশ রয়েছে এবং তিনি ‘আগামী ট্রাম্প প্রশাসনকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন’ বলে দাবি করা হয়েছে।
তাঁরা আরও বলেন, কলিন্স সিআইএ’র সাবেক উপপরিচালক মাইকেল মোরেলের ঘনিষ্ঠ; মোরেল ২০২০ সালে একটি খোলা চিঠি লিখে শীর্ষ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জোগাড় করেছিলেন, যাতে বলা হয়েছিল—হান্টার বাইডেনের ল্যাপটপে ‘রাশিয়ান তথ্য অভিযানের সব চিহ্ন’ দেখা যায়।
ল্যাঙ্গান রিয়েকহফ সম্পর্কে কর্মকর্তারা জানান, তিনি বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (DEI) কর্মসূচির ‘প্রধান প্রবক্তা’ এবং হুইসেলব্লোয়ারদের ভাষ্য অনুযায়ী তিনিও ‘ট্রাম্প‑বিরোধী অবস্থানে চরমপন্থী’।
এদিকে, জাতীয় গোয়েন্দা পরিষদকে সিআইএ থেকে ওডিএনআই‑এ স্থানান্তর করছেন গ্যাবার্ড, যাতে ‘যে কোনো অনিয়ম ও গোয়েন্দা তথ্যের রাজনীতিকরণ সরাসরি জবাবদিহির আওতায় আনা যায়’।
কর্মকর্তারা বলেন, গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের বহু তথ্যফাঁসকারীই ‘ওয়াশিংটন রাজনীতিতে আবদ্ধ স্থায়ী আমলা’।
এক কর্মকর্তা ফক্স নিউজ ডিজিটালকে বলেন, ‘তাদের খুঁজে বের করে ছাঁটাই করতে সময় লাগে’, যোগ করে জানান, ‘ওডিএনআই‑এর যেসব অপ্রয়োজনীয় দপ্তর “গভীর রাষ্ট্র” তথ্যফাঁসকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে, সেগুলো বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।’
এক সিআইএ কর্মকর্তা জানান, জাতীয় গোয়েন্দা পরিষদ সব সময়ই ডিএনআই‑এর অংশ; তাই ওডিএনআই‑এ তাদের শারীরিক উপস্থিতি “যথাযথ”।
স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গ্যাবার্ড গোয়েন্দা সম্প্রদায়ে নতুন একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ও গঠন করেছেন।
এই পদক্ষেপগুলোর উদ্দেশ্য—কর্মকর্তাদের ভাষ্যে—গোয়েন্দা বিশ্লেষণে রাজনীতিকরণ রোধ করা এবং ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মসূচি নস্যাৎ করতে চাইছেন’ এমন তথাকথিত ‘গভীর রাষ্ট্রের রেশ ধরে থাকা’ তথ্যফাঁসকারীদের উৎখাত।
এ পর্যন্ত গ্যাবার্ড গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে তিনজন গোয়েন্দা পেশাদারকে বিচার মন্ত্রণালয়ে ফৌজদারি বিচারের জন্য সুপারিশ করেছেন।
সেই সময় ওডিএনআই‑এর এক কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্তরা ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউ ইয়র্ক টাইমস‑এ গোপন তথ্য ফাঁস করেছিলেন।
গ্যাবার্ড এপ্রিল মাসে বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের রাজনীতিকরণ ও গোপন তথ্য ফাঁস জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে এবং এটি বন্ধ করতেই হবে। যারা গোপন তথ্য ফাঁস করবে, তাদের আইনের পুরো মাত্রায় জবাবদিহি করা হবে।’
এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে আরও ১২ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে ওডিএনআই।
উদাহরণস্বরূপ, চলতি মে মাসের শুরুতে ওডিএনআই দুইজন ‘সিআইএ’র প্রেষিত’ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে; তারা ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ নামের সহিংস গ্যাং‑সংক্রান্ত একটি মূল্যায়ন নথি টাইমস‑এ ফাঁস করেছিলেন বলে অভিযোগ।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি পুনর্গঠনের জন্য এপ্রিলেই গ্যাবার্ড ‘ডিরেক্টরস ইনিশিয়েটিভ গ্রুপ (ডিআইজি)’ গঠন করেন, যা গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের ‘অস্ত্রীকরণ’ তদন্ত দিয়ে কাজ শুরু করে।
কর্মকর্তারা বলেন, এই দলটি রাজনীতিকরণ উৎখাত, গোপন তথ্যের অননুমোদিত প্রকাশ উন্মোচন এবং জনস্বার্থে তথ্য অবগতির লক্ষ্যে কাজ করবে।
গ্যাবার্ড জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) যৌন‑স্পষ্ট চ্যাটরুমে অংশ নেওয়া কর্মীদেরও জবাবদিহির মুখোমুখি করেছেন এবং গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের ভেতরে গোপন তথ্য ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন অনুমোদন আটকে থাকায় ট্রাম্প প্রশাসনের এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
বর্তমানে ওডিএনআই‑এ জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের প্রধান উপপরিচালক, জাতীয় কাউন্টারটেররিজম কেন্দ্র, জাতীয় কাউন্টার‑ইন্টেলিজেন্স ও সিকিউরিটি কেন্দ্র, গোয়েন্দা মহাপরিদর্শক, প্রধান আইন উপদেষ্টা—সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে।