০২:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৫৬)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
  • 62

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

‘ওটারে আর তুমি দেখতি পাবে না,’ দাঁত বের করে হেসে ভাস্কা বলল। ছোট্ট নদীটা থেকে হেলমেটে করে জল তুলতে-তুলতে আরও বলল, ‘মগটাও চলে গ্যাচে, খট্টাশও গ্যাচে তার সঙ্গে।’

‘খুন হয়েছে?’

‘খুন হয়ে মারা পড়েছে,’ কী কারণে জানি না, দাঁত বের করে হাসতে-হাসতে ভাস্কা বলল। ‘প্রাইভেট খট্টাশ লাল সৈনিকের মৃত্যু বরণ করেচে।’

বললুম, ‘সব ব্যাপারেই তোমার হাসি আসে, ভাস্কা! খট্রাশের জন্যে তোমার কি একটুও দুঃখ হচ্ছে না?’

‘কার? আমার?’ ভাস্কা নাক সিটকোল, তারপর নোংরা হাতে ওর ভিজে ঠোঁট দুটো মুছল। ‘লিচ্চয় দুঃখু হচ্চে। খট্রাশের জন্যি, নিকিশিনের জন্যি, সের্গেইয়ের জন্যি, এমন কি আমার লিজের জন্যিও দুঃখু হচ্চে। শালারা নিপাত যাক, দ্যাখো-না আমার হাতটার কী দশাখান করেচে!’

কাঁধটায় একটু ঝাঁকি দিল ও। আর আমি লক্ষ্য করলুম, ওর বাঁ-হাতটা এক টুকরো ছাইরঙের কাপড় দিয়ে পটিবাঁধা।

‘মাংসর ঘা, এই এটু ছড়ে গ্যাচে আর কি। তবে জলতে নেগেচে খুব’ ও বলল। ফের নাকটা সি’টকে এবার বেশ হাসিখুশিভাবে বলল ভাসকা: ‘তা কথাটা ভাবলি দেখা যায়, আমাদের দুঃখু করার আছে কী? আমাদের কেউ যে জোর করে যুদ্ধে পাঠিয়েচে এমন তো নয়। কী জন্যি লড়াই করতে আসচি ভালোই জানতাম আমরা, জানতাম না? তবে? এখন শুধু শুধু দুঃখ করে লাভ কী!’

এই লড়াইয়ের মুহূর্তগুলো আমার স্মৃতিতে আলাদা-আলাদাভাবে আঁকা হয়ে আছে, আমি কেবল সেই মুহূর্তগুলোকে একটা সুসংবদ্ধ পরম্পরায় বাঁধতে পারি নি। এখনও মনে পড়ে, এক সময়ে আমি এক হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে একজন জার্মানের সঙ্গে বহুক্ষণ ধরে গুলিবিনিময় করেছিলুম। অথচ লোকটা আমার কাছ থেকে দু-শো পায়ের চেয়ে বেশি দূরে ছিল না। পাছে আমি গুলি ছোড়ার আগেই ও আমাকে গুলি করে বসে এই ভয়ে তাড়াহুড়ো করে নিশানা ঠিক করে ট্রিগার টানলুম। কিন্তু গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। আমার মনে হয় ও-লোকটারও মনোভাব আমার মতই ছিল, তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ওর গুলিও আমার গায়ে লাগল না।

আরও মনে পড়ে, কাছাকাছি শত্রুর কামানের গোলা ফাটায় আমাদের মেশিনগানটা ছিটকে উলটে পড়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগানটা টেনে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল।

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৫৬)

০৮:০০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

‘ওটারে আর তুমি দেখতি পাবে না,’ দাঁত বের করে হেসে ভাস্কা বলল। ছোট্ট নদীটা থেকে হেলমেটে করে জল তুলতে-তুলতে আরও বলল, ‘মগটাও চলে গ্যাচে, খট্টাশও গ্যাচে তার সঙ্গে।’

‘খুন হয়েছে?’

‘খুন হয়ে মারা পড়েছে,’ কী কারণে জানি না, দাঁত বের করে হাসতে-হাসতে ভাস্কা বলল। ‘প্রাইভেট খট্টাশ লাল সৈনিকের মৃত্যু বরণ করেচে।’

বললুম, ‘সব ব্যাপারেই তোমার হাসি আসে, ভাস্কা! খট্রাশের জন্যে তোমার কি একটুও দুঃখ হচ্ছে না?’

‘কার? আমার?’ ভাস্কা নাক সিটকোল, তারপর নোংরা হাতে ওর ভিজে ঠোঁট দুটো মুছল। ‘লিচ্চয় দুঃখু হচ্চে। খট্রাশের জন্যি, নিকিশিনের জন্যি, সের্গেইয়ের জন্যি, এমন কি আমার লিজের জন্যিও দুঃখু হচ্চে। শালারা নিপাত যাক, দ্যাখো-না আমার হাতটার কী দশাখান করেচে!’

কাঁধটায় একটু ঝাঁকি দিল ও। আর আমি লক্ষ্য করলুম, ওর বাঁ-হাতটা এক টুকরো ছাইরঙের কাপড় দিয়ে পটিবাঁধা।

‘মাংসর ঘা, এই এটু ছড়ে গ্যাচে আর কি। তবে জলতে নেগেচে খুব’ ও বলল। ফের নাকটা সি’টকে এবার বেশ হাসিখুশিভাবে বলল ভাসকা: ‘তা কথাটা ভাবলি দেখা যায়, আমাদের দুঃখু করার আছে কী? আমাদের কেউ যে জোর করে যুদ্ধে পাঠিয়েচে এমন তো নয়। কী জন্যি লড়াই করতে আসচি ভালোই জানতাম আমরা, জানতাম না? তবে? এখন শুধু শুধু দুঃখ করে লাভ কী!’

এই লড়াইয়ের মুহূর্তগুলো আমার স্মৃতিতে আলাদা-আলাদাভাবে আঁকা হয়ে আছে, আমি কেবল সেই মুহূর্তগুলোকে একটা সুসংবদ্ধ পরম্পরায় বাঁধতে পারি নি। এখনও মনে পড়ে, এক সময়ে আমি এক হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে একজন জার্মানের সঙ্গে বহুক্ষণ ধরে গুলিবিনিময় করেছিলুম। অথচ লোকটা আমার কাছ থেকে দু-শো পায়ের চেয়ে বেশি দূরে ছিল না। পাছে আমি গুলি ছোড়ার আগেই ও আমাকে গুলি করে বসে এই ভয়ে তাড়াহুড়ো করে নিশানা ঠিক করে ট্রিগার টানলুম। কিন্তু গুলিটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। আমার মনে হয় ও-লোকটারও মনোভাব আমার মতই ছিল, তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ওর গুলিও আমার গায়ে লাগল না।

আরও মনে পড়ে, কাছাকাছি শত্রুর কামানের গোলা ফাটায় আমাদের মেশিনগানটা ছিটকে উলটে পড়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগানটা টেনে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল।