ঢাকা, ২১ মে ২০২৫ — আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এতে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের অগ্রগতি হোঁচট খাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাজেট কাটছাঁটের পেছনে কী কারণ
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজস্ব আয়ের ঘাটতি, বৈদেশিক সহায়তার অনিশ্চয়তা এবং ঋণ সুদের বোঝা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে কিছু সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমানোর চিন্তা চলছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত ও সেই চাপের মুখে পড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুটি খাত বরাদ্দ কাটছাঁটের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
শিক্ষা খাতে বাজেট কমলে কী ঘটবে
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো মানে হচ্ছে:
- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানোন্নয়ন ব্যাহত হবে
- শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে
- শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বাড়বে, বিশেষত দরিদ্র ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে
- নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে
নিরাপদ ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই বাজেট হ্রাস বড়ো অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমার সম্ভাব্য প্রভাব
স্বাস্থ্য খাতে কম বরাদ্দের ফলে দেখা দিতে পারে:
- প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট
- গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবার পরিধি সংকুচিত হওয়া
- নতুন হাসপাতাল ও ক্লিনিক নির্মাণে বাধা
- চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ব্যাহত হওয়া
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী বাস্তবতায় আরও বেশি বরাদ্দ হওয়া প্রয়োজন ছিল, যাতে ভবিষ্যৎ মহামারি বা জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
হোসেন জিল্লুর রহমান যা বলেছেন
অর্থনীতিবিদ এবং ব্র্যাকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সম্প্রতি প্রথম আলো-তে প্রকাশিত এক মতামত নিবন্ধে বলেন:
“দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত মানবসম্পদ উন্নয়ন। অথচ বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার অনেক বছর ধরেই নিম্নমুখী। এই ধারা চলতে থাকলে প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নষ্ট হবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো খাতে বরাদ্দ না বাড়িয়ে শুধু মেগা প্রকল্প ও অবকাঠামোর দিকে ঝুঁকে পড়লে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের আহ্বান
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সিপিডি এবং টিআইবির গবেষকেরাও একমত যে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ একসাথে জিডিপির ৫% পর্যন্ত না বাড়ানো হলে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট হ্রাস কেবল সামাজিক খাতের দুর্বলতা বাড়াবে না,বরং জাতীয় উৎপাদনশীলতা, দারিদ্র্য নিরসন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকেও সংকুচিত করবে। সরকারের উচিত হবে এই দুই খাতকে ব্যয় সংকোচনের বাইরে রাখা এবং এগুলোতে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ নিশ্চিত করা।