জি–৭ অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের কানাডার বান্ফে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাপানের অর্থমন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আবারও ঘোষণা করেছেন—বিনিময় হার বাজারই ঠিক করবে, কোনও নির্দিষ্ট ডলার‑ইয়েন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে না।
জি–৭ বৈঠকের মূল বার্তা
- দুই দেশ একমত যে বর্তমান ডলার‑ইয়েন হার (প্রায় ১ মার্কিন ডলার = ১৪৩ ইয়েন) অর্থনৈতিক মৌলিক ভিত্তির প্রতিফলন।
• এপ্রিলের ওয়াশিংটন বৈঠকের মতো এবারও দুই মন্ত্রী বিনিময় হারের সুনির্দিষ্ট মাত্রা নিয়ে আলোচনা করেননি।
ইয়েনের চলমান শক্তিশালী প্রবণতা
সম্প্রতি বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কিছু বিনিয়োগকারী মনে করছেন, বাণিজ্য ভারসাম্য ঠিক করতে ইয়েনকে ‘যন্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। এই জল্পনায় ইয়েন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শক্তিশালী হয়ে ১৪৬ থেকে ১৪৩ মাত্রায় নেমে এসেছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
- সিএলএসএ‑এর প্রধান অর্থনীতিবিদ লেইফ এসকেসেন বলছেন, জাপান‑মার্কিন আলোচনায় সামনের দিনে বিশেষ কোনও এক্সচেঞ্জ রেট লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
• নমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তাকাহিদে কিউচি মনে করেন, ট্যারিফের চাপ ও আর্থিক বাজারের অস্থিরতা বাড়লে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্যারিফ কমাতে বাধ্য হতে পারেন—তখন ঘাটতি কমাতে ডলার দুর্বল করার নীতি নেওয়া হতে পারে।
হস্তক্ষেপ ও সুদহার: সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি
- হঠাৎ সুদহার বদলে ইয়েনের মান বাড়াতে বলা হলে, তা জাপানের অভ্যন্তরীণ মুদ্রানীতিতে অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ হবে।
• ২০২৪‑এর প্রথম দিকে ১৭ বছরের মধ্যে প্রথমবার সুদহার বাড়িয়ে ০.৫ শতাংশে নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫‑এর শেষ নাগাদ সামান্য বাড়তি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, তবে তা দেশের ভোক্তা ব্যয় ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল।
• ইতিহাস বলছে, ১৯৮৫‑এর প্লাজা অ্যাকর্ডের মতো সমন্বিত কারেন্সি হস্তক্ষেপ স্থায়ী সমাধান দেয় না; মূল কাজ বাজারে অতিচালনা ঠেকানো। দ্রুত ডলার পড়লে জাপানের জন্য সুদ বাড়ানো আবারও অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে—যা তখন বুদ্বুদি‑অর্থনীতি তৈরি করেছিল।
পরবর্তী পদক্ষেপ
- জাপানের প্রধান ট্যারিফ আলোচক রিওসেই আকাজাওয়া তৃতীয় দফার উচ্চস্তরের আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন।
• সংবাদমাধ্যম বলছে, মার্কিন আলোচক টিমের প্রধান বেসেন্ট এবার অংশ নেবেন না।
অর্থনীতির মৌলিক শক্তিমাত্রাই বিনিময় হার নির্ধারণ করবে—এ নিশ্চয়তা দিয়েই দুই দেশের শীর্ষ অর্থমন্ত্রী বাজারের ওপর আস্থা রাখার বার্তা পুনর্নিশ্চিত করলেন। তা সত্ত্বেও বাণিজ্যঘাটতি, সুদহার ও রাজনৈতিক চাপ বিনিময় হার‑নীতি ঘিরে অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে; সামনে তাই সতর্ক পর্যবেক্ষণ জরুরি।