০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্লাস্টিক যখন রক্তের ভেতর

শহর কিংবা গ্রাম—প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরতা এখন এমন যে হাতের কাছে পানি রাখতে কাচের বদলে প্লাস্টিক বোতল ভরসা, বাজারের ঝোলা থেকে শুরু করে রান্নাঘরের চামচ পর্যন্ত সবই সিনথেটিক। সেই ব্যবহারের ভাঙা–গুঁড়ো অংশই আল্ট্রা ভায়োলেট আলো ও ঘর্ষণে ভেঙে তৈরি করছে অতি–ক্ষুদ্র কণিকা, যার ব্যাস ৫ মিলিমিটারের কম হলে তাকে বলে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ১ মাইক্রোমিটারের নিচে হলে ন্যানোপ্লাস্টিক। প্রাণিজগৎ ছাড়িয়ে এখন এগুলো মানুষের রক্ত, লালারস, বুকের দুধ এমনকি গর্ভফুলের ভেতরও ধরা পড়ছে। সাম্প্রতিক ইতালীয় গবেষণায় বন্ধ্যাত্ব–চিকিৎসাধীন ১৮ জন নারীর ১৪ জনের ডিম্বাণু তরলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে; বিজ্ঞানীরা এটাকে ‘নারী উর্বরতার উদীয়মান সংকট’ আখ্যা দিচ্ছেন।

কোন পথে শরীরে ঢোকে

বাংলাদেশের চার প্রধান শহর—ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর ট্যাপজলের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় গড়ে প্রতি লিটারে ৩৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণিকা মিলেছে, মানে দিনে চার লিটার জলপানেই প্রায় দেড় শত কণিকা গলাধঃকরণ করছি আমরা। শুধু জলেই শেষ নয়। সমুদ্রলবণের ১৮টি ব্র্যান্ড পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কেজিতে গড়ে ৪৭২টি কণিকা; কিছু নমুনায় পরিমাণ ৬৭০টি পর্যন্ত পৌঁছেছে। ঘরের ধুলাতেও বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক–তন্তু ভেসে বেড়ায়; ঢাকার ইনডোর গবেষণায় ল্যাবরেটরির ধুলায় গড়ে ১,৬৩৫ কণিকা প্রতি গ্রামের মতো ঘনত্ব ধরা পড়েছে, আর ফাইবারের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫০ থেকে ২৫০ মাইক্রোমিটার—ফুসফুসের অ্যালভিওলাই পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট ছোট।

দেহের ভেতরে কী ঘটছে

কণিকা নিজে প্রদাহ বাড়ায়; তার চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা কণিকার গায়ের রাসায়নিক ‘অ্যাডিটিভ’। ফথালেট, বিসফেনল–এ বা অতি–স্থিতিশীল PFAS—এসব প্লাস্টিককে নমনীয়, আগুন–রোধী, রং–পাকা রাখতে ব্যবহার হলেও, নিজেরাই হরমোনের ভান করে শরীরের কোষ–রিসেপ্টরকে বিভ্রান্ত করে। এ কারণে প্রজনন ক্ষমতা, স্নায়বিক বিকাশ ও ক্যানসার ঝুঁকি বাড়ার প্রবণতা নিয়ে শত শত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ইতালির ওই ovarian-fluid গবেষণায় ৫ মাইক্রোমিটারেরও ছোট কণিকা বেশি পাওয়ায় ভ্রূণগঠনের সূচনাতেই প্লাস্টিক–দূষণের শঙ্কা উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে, পাঁচ মাস আগে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ৩৬ প্রাপ্তবয়স্কের রক্তের সবকটি নমুনাতেই প্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে এবং কিছু নমুনায় রক্ত জমাট বাধার উপাদান ফিব্রিনোজেন বেড়ে থাকার যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে কী পরিমাণ জমে আছে

প্রতিদিনের পানীয় জল ও লবণ থেকে একটি শহুরে মানুষ ন্যূনতম ৫০–৬০ হাজার কণিকা বছরে গিলছেন—এতে বাড়তি প্লাস্টিকপাকাও খাবার, চা–ব্যাগ কিংবা ফাস্টফুডের মোড়ক ধরা হয়নি। ইনডোর ধুলোর শ্বাসপ্রশ্বাস যোগ করলে বার্ষিক গ্রহণ কয়েক লাখ কণিকা ছুঁয়ে যেতে পারে। যদিও রক্ত, মূত্র কিংবা প্লাসেন্টা–নমুনা বিশ্লেষণের মতো বায়োমনিটরিং বাংলাদেশে এখনো হয়নি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংখ্যাটি শুধু ‘হিমশিখরের চূড়া’ ইঙ্গিত করে।

দেশীয় গবেষণা ও চিকিৎসা পরিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসসিআইআর ও আইসিডিডিআর,বি মিলিয়ে কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে ফোরিয়ার–ট্রান্সফর্ম ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কপি বা রামন মাইক্রোস্কোপ রয়েছে, তবে তা মূলত গবেষণামূলক; নিয়মিত রোগনির্ণয় হয় না। শরীরে ঢুকে পড়া কণিকা বের করে আনতে বিশ্বজুড়েই এখন পর্যন্ত কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা–পদ্ধতি নেই। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা প্রতিরোধেই জোর দিচ্ছেন—গরম খাবার প্লাস্টিক পাত্রে গরম না করা, কাচ বা স্টিলের পানির বোতল ব্যবহার, ফিল্টারে কার্বন–ব্লক কিংবা রিভার্স–অস্মোসিস বেছে নেওয়া, আর সম্ভব হলে সিনথেটিক কাপড়ের বদলে প্রাকৃতিক তন্তু।

নীতিনির্ধারণে ফাঁকফোকর

২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করলেও আইন প্রয়োগ ঢিলেঢালা। ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ও উপকূলজুড়ে একবারে ১৭ ধরনের সিঙ্গল–ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও বাজার থেকে সেগুলি সরেনি; সরকারি তদারকি আর বিকল্প পণ্যের দামের ফাঁকে উদ্যোগগুলো ঝিমিয়ে পড়ে আছে। প্লাস্টিক শিল্পমালিকেরা ২০৩০–এর আগে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে আপত্তি জানাচ্ছেন, ফলে উৎপাদন নিরুৎসাহিত করার বদলে পুনর্ব্যবহারই প্রধান কৌশল হয়ে আছে। অথচ ইউরোপের ‘নাজ থিয়োরি’ অনুযায়ী, নন–বাধ্যতামূলক ঘোষণাই বড় কোম্পানিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিংয়ে রূপান্তর করতে পেরেছে—বাংলাদেশে সেই আচরণগত কৌশল প্রায় অনুপস্থিত।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি

জাতীয় আদমশুমারির হালনাগাদে দেখা যাচ্ছে, শিশু জন্মহার নিম্নমুখী; এর পেছনে অর্থনৈতিক চাপ যেমন আছে, তেমনই পরিবেশগত সংক্রমণেরও ভূমিকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদি মাইক্রোপ্লাস্টিক সত্যিই নারী–পুরুষ উভয়ের উর্বরতা কমিয়ে দেয়, তাহলে জনসংখ্যার বয়স–বক্ররেখা আরও দ্রুত উল্টো মুখো হবে। একইসঙ্গে হরমোন–বিকৃতিজনিত স্তন ক্যানসার, থাইরয়েড গোলযোগ, স্নায়ু–সম্পর্কিত জটিলতা বাড়তে পারে—যার বোঝা তখন বর্তাবে ইতিমধ্যেই সীমিত স্বাস্থ্য–ব্যবস্থার ওপর।

উপসংহার

মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ কোনও দূরবর্তী সমুদ্র বা আবর্জনার স্তূপে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এখন খাবার টেবিল থেকে শিরা–উপশিরা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে প্রাথমিক গবেষণার ফলেই স্পষ্ট হচ্ছে—বিপদ বাস্তব এবং বহুমুখী। তবু নীতিনির্ধারকরা এখনও পুনর্ব্যবহার, কর ছাড় বা স্বেচ্ছা উদ্যোগেই আস্থা রাখছেন, যেখানে মূল সমস্যাই হলো বিপুল প্লাস্টিক উৎপাদন। প্লাস্টিক–নির্ভর অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে সরে এসে কাঁচ, ধাতু ও জৈববহুল বিকল্পে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাজার পর্যন্ত রূপান্তর জরুরি। কারণ, যে প্লাস্টিক আজ আমাদের জীবন সহজ করছে, সেটির অদৃশ্য কণিকাই হয়তো আগামী দিনের সবচেয়ে জটিল স্বাস্থ্য–দুর্যোগ ডেকে আনছে।

প্লাস্টিক যখন রক্তের ভেতর

০৪:৪০:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

শহর কিংবা গ্রাম—প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরতা এখন এমন যে হাতের কাছে পানি রাখতে কাচের বদলে প্লাস্টিক বোতল ভরসা, বাজারের ঝোলা থেকে শুরু করে রান্নাঘরের চামচ পর্যন্ত সবই সিনথেটিক। সেই ব্যবহারের ভাঙা–গুঁড়ো অংশই আল্ট্রা ভায়োলেট আলো ও ঘর্ষণে ভেঙে তৈরি করছে অতি–ক্ষুদ্র কণিকা, যার ব্যাস ৫ মিলিমিটারের কম হলে তাকে বলে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ১ মাইক্রোমিটারের নিচে হলে ন্যানোপ্লাস্টিক। প্রাণিজগৎ ছাড়িয়ে এখন এগুলো মানুষের রক্ত, লালারস, বুকের দুধ এমনকি গর্ভফুলের ভেতরও ধরা পড়ছে। সাম্প্রতিক ইতালীয় গবেষণায় বন্ধ্যাত্ব–চিকিৎসাধীন ১৮ জন নারীর ১৪ জনের ডিম্বাণু তরলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে; বিজ্ঞানীরা এটাকে ‘নারী উর্বরতার উদীয়মান সংকট’ আখ্যা দিচ্ছেন।

কোন পথে শরীরে ঢোকে

বাংলাদেশের চার প্রধান শহর—ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর ট্যাপজলের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় গড়ে প্রতি লিটারে ৩৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণিকা মিলেছে, মানে দিনে চার লিটার জলপানেই প্রায় দেড় শত কণিকা গলাধঃকরণ করছি আমরা। শুধু জলেই শেষ নয়। সমুদ্রলবণের ১৮টি ব্র্যান্ড পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কেজিতে গড়ে ৪৭২টি কণিকা; কিছু নমুনায় পরিমাণ ৬৭০টি পর্যন্ত পৌঁছেছে। ঘরের ধুলাতেও বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক–তন্তু ভেসে বেড়ায়; ঢাকার ইনডোর গবেষণায় ল্যাবরেটরির ধুলায় গড়ে ১,৬৩৫ কণিকা প্রতি গ্রামের মতো ঘনত্ব ধরা পড়েছে, আর ফাইবারের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫০ থেকে ২৫০ মাইক্রোমিটার—ফুসফুসের অ্যালভিওলাই পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট ছোট।

দেহের ভেতরে কী ঘটছে

কণিকা নিজে প্রদাহ বাড়ায়; তার চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা কণিকার গায়ের রাসায়নিক ‘অ্যাডিটিভ’। ফথালেট, বিসফেনল–এ বা অতি–স্থিতিশীল PFAS—এসব প্লাস্টিককে নমনীয়, আগুন–রোধী, রং–পাকা রাখতে ব্যবহার হলেও, নিজেরাই হরমোনের ভান করে শরীরের কোষ–রিসেপ্টরকে বিভ্রান্ত করে। এ কারণে প্রজনন ক্ষমতা, স্নায়বিক বিকাশ ও ক্যানসার ঝুঁকি বাড়ার প্রবণতা নিয়ে শত শত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ইতালির ওই ovarian-fluid গবেষণায় ৫ মাইক্রোমিটারেরও ছোট কণিকা বেশি পাওয়ায় ভ্রূণগঠনের সূচনাতেই প্লাস্টিক–দূষণের শঙ্কা উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে, পাঁচ মাস আগে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ৩৬ প্রাপ্তবয়স্কের রক্তের সবকটি নমুনাতেই প্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে এবং কিছু নমুনায় রক্ত জমাট বাধার উপাদান ফিব্রিনোজেন বেড়ে থাকার যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে কী পরিমাণ জমে আছে

প্রতিদিনের পানীয় জল ও লবণ থেকে একটি শহুরে মানুষ ন্যূনতম ৫০–৬০ হাজার কণিকা বছরে গিলছেন—এতে বাড়তি প্লাস্টিকপাকাও খাবার, চা–ব্যাগ কিংবা ফাস্টফুডের মোড়ক ধরা হয়নি। ইনডোর ধুলোর শ্বাসপ্রশ্বাস যোগ করলে বার্ষিক গ্রহণ কয়েক লাখ কণিকা ছুঁয়ে যেতে পারে। যদিও রক্ত, মূত্র কিংবা প্লাসেন্টা–নমুনা বিশ্লেষণের মতো বায়োমনিটরিং বাংলাদেশে এখনো হয়নি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংখ্যাটি শুধু ‘হিমশিখরের চূড়া’ ইঙ্গিত করে।

দেশীয় গবেষণা ও চিকিৎসা পরিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসসিআইআর ও আইসিডিডিআর,বি মিলিয়ে কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে ফোরিয়ার–ট্রান্সফর্ম ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কপি বা রামন মাইক্রোস্কোপ রয়েছে, তবে তা মূলত গবেষণামূলক; নিয়মিত রোগনির্ণয় হয় না। শরীরে ঢুকে পড়া কণিকা বের করে আনতে বিশ্বজুড়েই এখন পর্যন্ত কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা–পদ্ধতি নেই। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা প্রতিরোধেই জোর দিচ্ছেন—গরম খাবার প্লাস্টিক পাত্রে গরম না করা, কাচ বা স্টিলের পানির বোতল ব্যবহার, ফিল্টারে কার্বন–ব্লক কিংবা রিভার্স–অস্মোসিস বেছে নেওয়া, আর সম্ভব হলে সিনথেটিক কাপড়ের বদলে প্রাকৃতিক তন্তু।

নীতিনির্ধারণে ফাঁকফোকর

২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করলেও আইন প্রয়োগ ঢিলেঢালা। ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ও উপকূলজুড়ে একবারে ১৭ ধরনের সিঙ্গল–ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও বাজার থেকে সেগুলি সরেনি; সরকারি তদারকি আর বিকল্প পণ্যের দামের ফাঁকে উদ্যোগগুলো ঝিমিয়ে পড়ে আছে। প্লাস্টিক শিল্পমালিকেরা ২০৩০–এর আগে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে আপত্তি জানাচ্ছেন, ফলে উৎপাদন নিরুৎসাহিত করার বদলে পুনর্ব্যবহারই প্রধান কৌশল হয়ে আছে। অথচ ইউরোপের ‘নাজ থিয়োরি’ অনুযায়ী, নন–বাধ্যতামূলক ঘোষণাই বড় কোম্পানিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিংয়ে রূপান্তর করতে পেরেছে—বাংলাদেশে সেই আচরণগত কৌশল প্রায় অনুপস্থিত।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি

জাতীয় আদমশুমারির হালনাগাদে দেখা যাচ্ছে, শিশু জন্মহার নিম্নমুখী; এর পেছনে অর্থনৈতিক চাপ যেমন আছে, তেমনই পরিবেশগত সংক্রমণেরও ভূমিকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদি মাইক্রোপ্লাস্টিক সত্যিই নারী–পুরুষ উভয়ের উর্বরতা কমিয়ে দেয়, তাহলে জনসংখ্যার বয়স–বক্ররেখা আরও দ্রুত উল্টো মুখো হবে। একইসঙ্গে হরমোন–বিকৃতিজনিত স্তন ক্যানসার, থাইরয়েড গোলযোগ, স্নায়ু–সম্পর্কিত জটিলতা বাড়তে পারে—যার বোঝা তখন বর্তাবে ইতিমধ্যেই সীমিত স্বাস্থ্য–ব্যবস্থার ওপর।

উপসংহার

মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ কোনও দূরবর্তী সমুদ্র বা আবর্জনার স্তূপে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এখন খাবার টেবিল থেকে শিরা–উপশিরা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে প্রাথমিক গবেষণার ফলেই স্পষ্ট হচ্ছে—বিপদ বাস্তব এবং বহুমুখী। তবু নীতিনির্ধারকরা এখনও পুনর্ব্যবহার, কর ছাড় বা স্বেচ্ছা উদ্যোগেই আস্থা রাখছেন, যেখানে মূল সমস্যাই হলো বিপুল প্লাস্টিক উৎপাদন। প্লাস্টিক–নির্ভর অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে সরে এসে কাঁচ, ধাতু ও জৈববহুল বিকল্পে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাজার পর্যন্ত রূপান্তর জরুরি। কারণ, যে প্লাস্টিক আজ আমাদের জীবন সহজ করছে, সেটির অদৃশ্য কণিকাই হয়তো আগামী দিনের সবচেয়ে জটিল স্বাস্থ্য–দুর্যোগ ডেকে আনছে।