০৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া উনসানে সমুদ্র সৈকতের রিসোর্ট উদ্বোধন: পর্যটনে বাজি ধরছে উত্তর কোরিয়া ওএমএস ও টিসিবি ডিলার নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব রাসেল ভাইপারের হুমকি: শহরেও ঢুকছে বিপজ্জনক সাপ! মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ ২০২৫ সালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ আইসল্যান্ড, শীর্ষ দশে সিঙ্গাপুর নৌকার বাংলাদেশ: জেলা-জেলা ঘিরে এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট বা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী? কীভাবে এটি করা হয়? নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

শিক্ষার্থীদের ‘অটো পাস’ মানসিকতা: ভবিষ্যত কী

শুধু পাশ করলেই চলবেশিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে প্রশ্ন
বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রতি ব্যাপকভাবে অটো পাস’ বা পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই উত্তীর্ণ হওয়ার দাবি উঠেছে। উপাচার্যের (ভিসি) দপ্তরের সামনে আন্দোলনসোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টগণস্বাক্ষর সংগ্রহ — সব জায়গায়ই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে শিক্ষার্থীদের এই দাবি। এই বাস্তবতা একটি বড় প্রশ্ন তোলে: কেন শিক্ষার্থীরা শেখার চেয়ে ফলাফল পাওয়ার নিশ্চয়তায় বেশি আগ্রহীকেন তারা ভবিষ্যতের কর্মজীবনদক্ষতা ও জ্ঞানের গুরুত্ব অনুধাবন করছে না?

কলেজ শিক্ষার্থীদেরও একই দাবিসরকার মেনেছে অংশত
এই মনস্তত্ত্ব নতুন কিছু নয়। এর আগেও একই ধরনের পরিস্থিতির জন্ম হয়েছিল। বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনের পরযখন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষার নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে অংশ না নিয়ে পাশ করার দাবি তোলে। সেই সময়ে আন্দোলনের চাপ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে সরকার কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে বিকল্প মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করে। এর আগেও ২০২০২১ শিক্ষাবর্ষে কোভিড মহামারির সময় এইচএসসি শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তাতে অনেকেই পাশ করলেও বাস্তবে তাদের শিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই নজিরই আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে একটি দাবি করলেই মেলে’ মানসিকতা গড়ে তুলছে বলে শিক্ষাবিদদের পর্যবেক্ষণ করে।
ঢাকা কলেজের এক শিক্ষক বলেন,
এটা এখন একটি প্রবণতা হয়ে গেছে — যে যেখানে আন্দোলন করেসেখানেই ছাড় পাওয়া যায়। এতে প্রকৃত শিক্ষানৈতিকতা আর চেষ্টার মূল্য হারিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি কী?
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করছেদীর্ঘ সেশনজটঅনলাইন ক্লাসের অকার্যকারিতাঅনিশ্চিত ভবিষ্যৎ — সব মিলিয়ে তাদের পক্ষে কঠিন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা চাইছে, “একবারের জন্য হলেও” সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হোক। সাম্প্রতিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বলেন:
আমরা দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত উদ্বেগে ছিলাম। ক্লাস হয়নি ঠিকভাবেকোনো প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে।

মনস্তত্ত্ব: ফলাফল-ভিত্তিক মানসিকতা বনাম শেখার আগ্রহ
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেনশিক্ষার্থীদের এই মনোভাব একটি গভীর মানসিক ও সামাজিক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল একজন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি নয় — সমগ্র সমাজে শিক্ষার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছেতার প্রতিফলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. ফারহানা রওশন বলেন,
আমরা শিক্ষাকে সনদপ্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে ভাবি। অভিভাবকরা বলেন, ‘পাশ করোচাকরি পাবে।’ শিক্ষকরা বলেন, ‘গ্রেড ভালো হলে ভবিষ্যৎ ভালো।’ কোথাও শেখার আনন্দ বা প্রকৃত জ্ঞানের কথা বলা হয় না। এর ফলেই শিক্ষার্থীরা পাশকে চূড়ান্ত লক্ষ্য ধরে নেয়।

কর্মজীবনের ভবিষ্যৎ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেনএই অটো পাস সংস্কৃতি’ ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। কারণ বর্তমান চাকরি বাজারে কেবল সার্টিফিকেট নয়জ্ঞানদক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা জরুরি। একজন টেক কোম্পানির মানবসম্পদ প্রধান বলেন,
একজন গ্র্যাজুয়েট যদি প্রকৃত জ্ঞান ছাড়াই পাস করেচাকরি পেতে না পারা তো এক সমস্যাচাকরি ধরে রাখতে কঠিন হয়ে যায়।

শিক্ষকদের বক্তব্য
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলছেনপরীক্ষার ফলাফলের চাপ অবশ্যই বাস্তবকিন্তু সেটার সমাধান অটো পাস’ নয়। বরং দরকার মূল্যায়ন পদ্ধতি আরও মানবিক করাশিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া।

উপাচার্যের অবস্থান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন,
আমরা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ও হতাশা বুঝি। তবে শিক্ষার মান রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের দিকে যাচ্ছি।

শিক্ষা শুধু পাশ করার জন্য নয়বরং শেখার জন্য। অতীতে কলেজ পর্যায়ে কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাদ দেওয়াকোভিডকালীন অটো পাস’, আর ২০২৩ সালের জুলাই আন্দোলনের পর সৃষ্ট উদাহরণ — সব মিলে একটি ট্রেন্ড স্পষ্ট করছে। এই প্রবণতা যদি থামানো না যায়তাহলে ভবিষ্যতের কর্মক্ষমতাগবেষণাউদ্ভাবন এবং জাতীয় উন্নয়নের গতিই বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারবিশ্ববিদ্যালয়পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সবাইকে এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে — শিক্ষা কি শুধু পাশ করার নামনাকি ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে গড়ে তোলার প্রস্তুতি?

৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া

শিক্ষার্থীদের ‘অটো পাস’ মানসিকতা: ভবিষ্যত কী

০৭:২০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

শুধু পাশ করলেই চলবেশিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে প্রশ্ন
বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রতি ব্যাপকভাবে অটো পাস’ বা পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই উত্তীর্ণ হওয়ার দাবি উঠেছে। উপাচার্যের (ভিসি) দপ্তরের সামনে আন্দোলনসোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টগণস্বাক্ষর সংগ্রহ — সব জায়গায়ই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে শিক্ষার্থীদের এই দাবি। এই বাস্তবতা একটি বড় প্রশ্ন তোলে: কেন শিক্ষার্থীরা শেখার চেয়ে ফলাফল পাওয়ার নিশ্চয়তায় বেশি আগ্রহীকেন তারা ভবিষ্যতের কর্মজীবনদক্ষতা ও জ্ঞানের গুরুত্ব অনুধাবন করছে না?

কলেজ শিক্ষার্থীদেরও একই দাবিসরকার মেনেছে অংশত
এই মনস্তত্ত্ব নতুন কিছু নয়। এর আগেও একই ধরনের পরিস্থিতির জন্ম হয়েছিল। বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনের পরযখন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষার নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে অংশ না নিয়ে পাশ করার দাবি তোলে। সেই সময়ে আন্দোলনের চাপ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে সরকার কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে বিকল্প মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করে। এর আগেও ২০২০২১ শিক্ষাবর্ষে কোভিড মহামারির সময় এইচএসসি শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তাতে অনেকেই পাশ করলেও বাস্তবে তাদের শিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই নজিরই আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে একটি দাবি করলেই মেলে’ মানসিকতা গড়ে তুলছে বলে শিক্ষাবিদদের পর্যবেক্ষণ করে।
ঢাকা কলেজের এক শিক্ষক বলেন,
এটা এখন একটি প্রবণতা হয়ে গেছে — যে যেখানে আন্দোলন করেসেখানেই ছাড় পাওয়া যায়। এতে প্রকৃত শিক্ষানৈতিকতা আর চেষ্টার মূল্য হারিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি কী?
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করছেদীর্ঘ সেশনজটঅনলাইন ক্লাসের অকার্যকারিতাঅনিশ্চিত ভবিষ্যৎ — সব মিলিয়ে তাদের পক্ষে কঠিন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা চাইছে, “একবারের জন্য হলেও” সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হোক। সাম্প্রতিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বলেন:
আমরা দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত উদ্বেগে ছিলাম। ক্লাস হয়নি ঠিকভাবেকোনো প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে।

মনস্তত্ত্ব: ফলাফল-ভিত্তিক মানসিকতা বনাম শেখার আগ্রহ
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেনশিক্ষার্থীদের এই মনোভাব একটি গভীর মানসিক ও সামাজিক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল একজন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি নয় — সমগ্র সমাজে শিক্ষার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছেতার প্রতিফলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. ফারহানা রওশন বলেন,
আমরা শিক্ষাকে সনদপ্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে ভাবি। অভিভাবকরা বলেন, ‘পাশ করোচাকরি পাবে।’ শিক্ষকরা বলেন, ‘গ্রেড ভালো হলে ভবিষ্যৎ ভালো।’ কোথাও শেখার আনন্দ বা প্রকৃত জ্ঞানের কথা বলা হয় না। এর ফলেই শিক্ষার্থীরা পাশকে চূড়ান্ত লক্ষ্য ধরে নেয়।

কর্মজীবনের ভবিষ্যৎ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেনএই অটো পাস সংস্কৃতি’ ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। কারণ বর্তমান চাকরি বাজারে কেবল সার্টিফিকেট নয়জ্ঞানদক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা জরুরি। একজন টেক কোম্পানির মানবসম্পদ প্রধান বলেন,
একজন গ্র্যাজুয়েট যদি প্রকৃত জ্ঞান ছাড়াই পাস করেচাকরি পেতে না পারা তো এক সমস্যাচাকরি ধরে রাখতে কঠিন হয়ে যায়।

শিক্ষকদের বক্তব্য
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলছেনপরীক্ষার ফলাফলের চাপ অবশ্যই বাস্তবকিন্তু সেটার সমাধান অটো পাস’ নয়। বরং দরকার মূল্যায়ন পদ্ধতি আরও মানবিক করাশিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া।

উপাচার্যের অবস্থান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন,
আমরা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ও হতাশা বুঝি। তবে শিক্ষার মান রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের দিকে যাচ্ছি।

শিক্ষা শুধু পাশ করার জন্য নয়বরং শেখার জন্য। অতীতে কলেজ পর্যায়ে কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাদ দেওয়াকোভিডকালীন অটো পাস’, আর ২০২৩ সালের জুলাই আন্দোলনের পর সৃষ্ট উদাহরণ — সব মিলে একটি ট্রেন্ড স্পষ্ট করছে। এই প্রবণতা যদি থামানো না যায়তাহলে ভবিষ্যতের কর্মক্ষমতাগবেষণাউদ্ভাবন এবং জাতীয় উন্নয়নের গতিই বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারবিশ্ববিদ্যালয়পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সবাইকে এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে — শিক্ষা কি শুধু পাশ করার নামনাকি ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে গড়ে তোলার প্রস্তুতি?