০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৩)

হৈরব ও ভৈরব

দলছুট তাতানো হাওয়া হৈরবের চারপাশে ঘুরপাক খায় কয়েকটা মড়মড়ে বৌনার পাতা খর্থর করে বাজনা তোলে।

ভৈরবের হাতের শানানো দায়ের চেয়েও ধারালো আর ঝকঝকে রোদ্দুর।

কি ঝাঁঝ, কি ধার, একেবারে বালিশান দেওয়া; এক-আধ চিলতে গাছগাছালির যে ছায়া, তা-ও একেবারে খোলায় ভাজা, ফোস্কা পড়া। চোখে ঘোর লাগে হৈরবের।

ভৈরব মুখ শক্ত ক’রে আছে; বড় বিশ্রী লাগে। চোয়ালের হাড় ঠেলে বেরিয়েছে, এখন তার মুখ চারকোনা; বেড়া দেওয়া জমি, দখল নিয়েছে এইমাত্র। বেড়া তুলে দিয়েছে, তুমি একটু ঘুরে যাও, পা রাখতে পারবে না, হওনা নবাব, লাট-বেলাটের নাতি, তফাৎ যাও-

‘বাজো মৃদঙ্গ, বাজো’ হৈরবের মনে একটা ভ্রাম্যমাণলহরী পালকের মতো ভেসে বেড়ায়, ‘মৃদঙ্গ তুমি মৃদঙ্গ তুমি মৃদঙ্গ তুমি বাজো, তুমি বাজো, তুমি বাজো তুমি মৃদঙ্গ তুমি বাজো, আরো বাজো-‘

‘ইশ, ব্যাক জ্বলতাছে, ধূপখান কি-‘

নিজের সঙ্গে কথা বলে হৈরব, ‘ইশ! দিকদারি করো, হালার পো হালা দিকদারি করো!

‘তা তা থৈ, তাতা থৈ, বহুৎ দেখছি তোমারে, তোমারে বাজামু!

‘তা তা ধিন, তা তা ধিন, কি বুঝলা?

‘তা, কি বুঝলা?

‘তা, ত্রেকেটে-ধা?

‘ত্রেকেটে-ধা ত্রেকেটে-ধা ত্রেকেটে-ধা, হাঃ!

‘হাঃ!’

একফাঁকে দয়া এসে দাঁড়ায়। কোঁচড়ভরা শিমুল ফুল হৈরবের গায়ে ঢেলে দিয়ে বলে, ‘লও, তোমার সোহাগের মণিমালায় পাঠায়া দিছে-‘

‘মনিমালা ?’

‘হহ মনিমালা, ঐতো সাইজা-গুইজা খারায়া খারায়া ক্যামনে তোমারে দেখতাছে দয়া পশ্চিমের শিমুলগাছের দিকে আঙুল তুলে দেখায়। হৈরবের মণিমালা।

‘কি কইলো?’

‘কইলো তোর দাদারে গিয়া ক, কি করছি আমি হের, চক্ষু তুইলা তাকায় না, রাও কাড়ে না, মুখ ফিরায়া লয়। কথা না দিছিলা, হ্যারে বিয়া করবা?’

‘দিছিলাম?’

‘দাও নাই? চক্ষে ধরছে, তো ভান কইরা কথা দিয়া ফালাইছ, কইছো রানী কইরা আনমু তোমারে। কামিনীসুন্দরীরে তো কইছিলা কত কথা, চুমা খায়া আইতা আন্ধার রাইতে, ডালা ধইরা কতো কথা কইতা, মনে নাই?’

 

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৩)

১২:০০:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

দলছুট তাতানো হাওয়া হৈরবের চারপাশে ঘুরপাক খায় কয়েকটা মড়মড়ে বৌনার পাতা খর্থর করে বাজনা তোলে।

ভৈরবের হাতের শানানো দায়ের চেয়েও ধারালো আর ঝকঝকে রোদ্দুর।

কি ঝাঁঝ, কি ধার, একেবারে বালিশান দেওয়া; এক-আধ চিলতে গাছগাছালির যে ছায়া, তা-ও একেবারে খোলায় ভাজা, ফোস্কা পড়া। চোখে ঘোর লাগে হৈরবের।

ভৈরব মুখ শক্ত ক’রে আছে; বড় বিশ্রী লাগে। চোয়ালের হাড় ঠেলে বেরিয়েছে, এখন তার মুখ চারকোনা; বেড়া দেওয়া জমি, দখল নিয়েছে এইমাত্র। বেড়া তুলে দিয়েছে, তুমি একটু ঘুরে যাও, পা রাখতে পারবে না, হওনা নবাব, লাট-বেলাটের নাতি, তফাৎ যাও-

‘বাজো মৃদঙ্গ, বাজো’ হৈরবের মনে একটা ভ্রাম্যমাণলহরী পালকের মতো ভেসে বেড়ায়, ‘মৃদঙ্গ তুমি মৃদঙ্গ তুমি মৃদঙ্গ তুমি বাজো, তুমি বাজো, তুমি বাজো তুমি মৃদঙ্গ তুমি বাজো, আরো বাজো-‘

‘ইশ, ব্যাক জ্বলতাছে, ধূপখান কি-‘

নিজের সঙ্গে কথা বলে হৈরব, ‘ইশ! দিকদারি করো, হালার পো হালা দিকদারি করো!

‘তা তা থৈ, তাতা থৈ, বহুৎ দেখছি তোমারে, তোমারে বাজামু!

‘তা তা ধিন, তা তা ধিন, কি বুঝলা?

‘তা, কি বুঝলা?

‘তা, ত্রেকেটে-ধা?

‘ত্রেকেটে-ধা ত্রেকেটে-ধা ত্রেকেটে-ধা, হাঃ!

‘হাঃ!’

একফাঁকে দয়া এসে দাঁড়ায়। কোঁচড়ভরা শিমুল ফুল হৈরবের গায়ে ঢেলে দিয়ে বলে, ‘লও, তোমার সোহাগের মণিমালায় পাঠায়া দিছে-‘

‘মনিমালা ?’

‘হহ মনিমালা, ঐতো সাইজা-গুইজা খারায়া খারায়া ক্যামনে তোমারে দেখতাছে দয়া পশ্চিমের শিমুলগাছের দিকে আঙুল তুলে দেখায়। হৈরবের মণিমালা।

‘কি কইলো?’

‘কইলো তোর দাদারে গিয়া ক, কি করছি আমি হের, চক্ষু তুইলা তাকায় না, রাও কাড়ে না, মুখ ফিরায়া লয়। কথা না দিছিলা, হ্যারে বিয়া করবা?’

‘দিছিলাম?’

‘দাও নাই? চক্ষে ধরছে, তো ভান কইরা কথা দিয়া ফালাইছ, কইছো রানী কইরা আনমু তোমারে। কামিনীসুন্দরীরে তো কইছিলা কত কথা, চুমা খায়া আইতা আন্ধার রাইতে, ডালা ধইরা কতো কথা কইতা, মনে নাই?’