- সারাংশ
- ১. বাংলাদেশে এখন পূর্ণ বয়স্ক চিতা বাঘের সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০টি
- ২. বেশিভাগ সাঙ্গু ও মাতামূহুরী এলাকায়
- ৩. ভাওয়ালে কোন চিতাবাঘ এখন আর নেই
- ৪. ৬০ এর দশকেও ঢাকার আশে পাশে চিতা দেখা যেত
ক্যামেরা-ট্র্যাপে নতুন আশার ছবি
চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক্টসের সাঙ্গু-মাতামুহুরি সংরক্ষিত বনে জুন ২০২৫-এ বসানো ক্যামেরা-ট্র্যাপে এক পূর্ণবয়স্ক চিতা-বাঘ ধরা পড়েছে। ২০২১-এর পর এটিই প্রথম স্পষ্ট প্রমাণ; সংরক্ষণকর্মীদের আশা জাগিয়েছে সাফল্যটি।
এক শতক আগের বাংলাদেশ: বন মানেই চিতা-বাঘ
ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত প্রায় সব চিরহরিৎ ও শালবন—চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক্টস, কক্সবাজার-টেকনাফ উপদ্বীপ, সিলেটের লাউয়াছড়া, মধুপুর ও ভাওয়াল—চিতা-বাঘের নিরাপদ আবাস ছিল। ঢাকার উপকণ্ঠেও মাঝেমধ্যে তাদের দেখা মিলত।
ভাওয়াল শাল বন: হারানো অভয়ারণ্যের দলিল
আজকের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান একসময় ‘ভাওয়াল গড়’ নামে বিশাল মধুপুর শালবনের অংশ ছিল। ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত এখানে নিয়মিত চিতা-বাঘের উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে। এখন ৫ হাজার হেক্টর শালগাছ টিকে থাকলেও অনিয়ন্ত্রিত শিকার ও বস্তি-বিস্তারে বড় বন্যপ্রাণী কার্যত বিলুপ্ত।
পতনের সূত্রপাত
- ১৯৬০-এর দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, হিলট্র্যাক্টসে কাঠ-ব্যবসা ও জুম-চাষ শুরু হলে আবাস খণ্ডিত হতে থাকে।
- স্বাধীনতার পর অবৈধ গাছ-কাটা, পাইন-ইউক্যালিপটাস বাগান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও পর্যটন প্রকল্প ভাওয়াল-মধুপুর এলাকায় ৯০ শতাংশের বেশি শালবন নিশ্চিহ্ন করে।
- সাঙ্গু-মাতামুহুরি ও কাসালাং রিজার্ভ-বনে সড়ক আর কাঠ-পাচার পরিস্থিতিকে আরও ঘোরাল করে তোলে।
বর্তমান চিত্র
আইইউসিএন-এর ২০১৫ ‘রেড লিস্ট’ অনুযায়ী চিতা-বাঘ বাংলাদেশে ‘জীবনসঙ্কটাপন্ন’। সাম্প্রতিক জরিপগুলো ইঙ্গিত দেয়—দেশে মাত্র ৩০-৫০টি পূর্ণবয়স্ক চিতা-বাঘ টিকে আছে, বেশির ভাগই কাসালাং-সাঙ্গু-মাতামুহুরি ও কক্সবাজারের হিমছড়ি-ইনানী এলাকায়। ভাওয়াল ও মধুপুর শালবনে প্রজাতিটি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত ধরা হয়।
সংকটের মূল কারণ
- আবাস ধ্বংস: শাল ও পাহাড়ি বন উজাড়; পর্যটন-চাপ
- খাদ্যের অভাব: হরিণসহ শিকারপ্রাণী দ্রুত কমে যাওয়া
- শিকার ও পাচার: চামড়া-হাড়ের অবৈধ বাজার, মানুষ-বাঘ সংঘর্ষ
- নীতিগত দুর্বলতা: বন আইন প্রয়োগে ঘাটতি, গবেষণার অভাব
করণীয়
১. ভাওয়াল-মধুপুর-লাউয়াছড়া থেকে চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক্টস পর্যন্ত বন করিডর পুনর্গঠন
২. কমিউনিটি-ভিত্তিক টহল ও ক্যামেরা-ট্র্যাপ পর্যবেক্ষণ বাড়ানো
৩. শিকারবিরোধী গণসচেতনতা, বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠসূচিতে অন্তর্ভুক্তি
৪. বনবিভাগে বিশেষ চিতা-বাঘ টাস্কফোর্স ও বৈজ্ঞানিক জরিপ-তহবিল
৫. ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও মধুপুর গড়ে শালবন পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ
রাজধানীর পাশের গল্প ছিলো
ভাওয়াল ও মধুপুর একসময় রাজধানীর সন্নিকট ‘বাঘ-বনের’ গল্প শোনাত। আজ সেখানে চিতা-বাঘ নেই, তবু সাঙ্গু-মাতামুহুরি জঙ্গলের ক্যামেরা-ট্র্যাপ-এর ঝকঝকে ছবিটি মনে করায়—সঠিক পরিকল্পনা ও স্থানীয় সহায়তায় বাংলাদেশের মাটিতে এই রাজসিক বন-বিড়াল এখনও বেঁচে থাকতে পারে।