১০:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের নদী–নদীতে যেসব হাঙরের রাজত্ব

বাংলাদেশের সাগরনদীজগৎ’ ও হাঙরের বৈচিত্র্য

বাংলাদেশের সাগর–নদীজগৎ এক বিস্ময়কর জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার, যার সবচেয়ে রহস্যময় অধিবাসী হাঙর। সাম্প্রতিক একাধিক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর ও উপকূল–ডেল্টা মিলিয়ে অন্তত ৬৬ টি নিশ্চিত হাঙর প্রজাতি, আর রেসহ ধরলে সংখ্যা ১০০–এরও বেশি। আরও বিস্তৃত ‘সম্ভাব্য’ তালিকা ১১৬–তে গিয়ে ঠেকে। তবে পরিমাণের চেয়ে বড় খবর—এসব শিকারির প্রায় ৫৮ শতাংশই আজ আইইউসিএন–এর বিপন্ন থেকে মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত।

সাগরের উন্মুক্ত জল: সুবিশাল তালিকা

সবচেয়ে চোখে পড়া সদস্য নিঃসন্দেহে হোয়েল শার্ক (Rhincodon typus)। দৈর্ঘ্যে ১২–১৮ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, অথচ খাদ্য কেবল প্ল্যাঙ্কটন কণিকা। মার্চ–মে ও অক্টোবর–ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া থেকে নাফ ক্যানিয়নের গভীর খাদ পর্যন্ত পুরো করিডরে এরা ধীরে সুস্থে প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে খায়। ট্রলারের বাতি ও পর্যটনের উজ্জ্বল আলো এই ‘মহাশান্ত’ দানবকে প্রায়ই ভাসিয়ে আনে—গবেষকদের জন্য যেমন সম্পদ, তেমনি অসচেতন জেলেদের জালে মৃত্যুঝুঁকি।

টাইগার শার্ক (Galeocerdo cuvier), ব্ল্যাকটিপ, স্পিনার ও সিল্কি—এসব মাঝারি থেকে বৃহৎ আকারের শিকারি বর্ষা–পরবর্তী ভাদ্র–আশ্বিনে কক্সবাজার–চট্টগ্রাম উপকূলে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে। ওই তিন মাসেই বার্ষিক ‘শার্ক ল্যান্ডিং’–এর প্রায় ৪২ শতাংশ ঘটে।

হোয়েল শার্কের মহাযাত্রা

বঙ্গোপসাগরের উত্তর–পশ্চিমাংশে ‘নাফ ক্যানিয়ন’ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক অভিবাসন করিডর চিহ্নিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই পথেই হোয়েল শার্কের ঝাঁক মৌসুমি প্ল্যাঙ্কটনের ‘বুম’ খুঁজে যাতায়াত করে। স্যাটেলাইট ট্যাগ ও ছবি বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিছু নমুনা মালদ্বীপ–শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত ছুটে গিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার টেকনাফ উপকূলে ফিরে আসে। করিডরটি সুরক্ষিত না হলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মাছটির স্থানীয় জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেতে পারে।

সুন্দরবনের নার্সারি

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পশুর–শিবসা ও দুবলা–কেদারপাড়া খালের নরম কাদা–পানি হাঙর ও রে প্রজাতির অব্যর্থ লালনক্ষেত্র। মে থেকে আগস্ট—বাঘা জোয়ার–ভাটার মৌসুমে এখানেই দেখা মেলে ‘পাপ্পু শার্ক’, অর্থাৎ ৩০–৪০ সেন্টিমিটারের শিশু হাঙর। শুটকি আড়ত ও বাজার জরিপে দেখা যায়, শিশু হাঙর শনাক্ত হওয়ার ৪৮ শতাংশ ঘটনাই পশুর–শিবশা মোহনাকেন্দ্রিক।

মিঠে জলের তিন বাঘ

একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে মিঠে নদী—দুয়ের দুনিয়া একসঙ্গে দখলে নেওয়া বুল শার্ক (Carcharhinus leucas) বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ‘ইস্টুয়ারিন’ শিকারি। বর্ষা এলে কর্ণফুলী ও সাঙ্গু হয়ে মেঘনা–ইলিশা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কখনও পদ্মা পর্যন্ত উঠে আসে। ২০২৩-এ শরীয়তপুরে ১.৮ মিটার লম্বা একটি বুল শার্ক ধরা পড়ে—এর অভিযাত্রার জোরাল প্রমাণ।

আরও দুর্লভ গাঙ্গেয় হাঙর (Glyphis gangeticus) মোটামুটি ‘নদীর পাকাপোক্ত বাসিন্দা’। এক সময় পদ্মা–মেঘনা–ব্রহ্মপুত্র থেকে হুগলি–যমুনা পর্যন্ত বিস্তৃতি থাকলেও এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘মহাবিপন্ন’; শেষ নিশ্চিত নজির ২০০৬-এর সুন্দরবন ও ২০১৭-এর কক্সবাজারে মাত্র তিনটি নমুনা। ছোটখাটো টিরু শার্ক (Carcharhinus tilstoni)-এর অস্তিত্ব সাম্প্রতিক ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে; কুতুবদিয়া পেরিয়ে বর্ষার শেষে মেঘনার নিম্ন ধারায় কখনও সখনও দেখা মেলে।

কোন নদীতে বেশি?

  • পশুর–শিবসা (খুলনা–বাগেরহাট): সুন্দরবনের ছায়াঘেরা শাখা–নদীগুলো শিশু বুল ও ব্ল্যাকটিপ শার্কের প্রধান আশ্রয়।
    •মেঘনা মোহনা ও ইলিশা চ্যানেল (ভোলা–চাঁদপুর): প্রবল জোয়ার–স্রোত ও পলির জোগানে বর্ষায় বুল ও স্পিনার শার্কের উপস্থিতি বাড়ে।
    • কর্ণফুলী–সাঙ্গু (চট্টগ্রাম): শহুরে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যা কমেছে, তবু তরুণ বুল শার্কের হঠাৎ হানা এখানেও দেখা যায়।
    • নিম্ন পদ্মা (মাওয়া–শরীয়তপুর): গাঙ্গেয় হাঙরের ঐতিহাসিক ঠাঁই; আজ বিচ্ছিন্ন বুল শার্ক ছাড়া তেমন কিছু নেই—ড্রেজিং ও বাঁধ পথ রুদ্ধ করেছে।

সংকট ও সংরক্ষণ

বিপন্নতার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে আছে অতিরিক্ত মাছধরা, ট্রলারের ‘বাই–ক্যাচ’, নদী-প্রকল্পে গতিপথ বদল এবং দূষণের মরণছোবল। ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তর সুন্দরবনের সাতটি নদী–খালকে ‘শার্ক–রে সংরক্ষণ এলাকা’ ঘোষণা করেছে, যেখানে শিশু হাঙর ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকলেও মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ দুর্বল—৩০ কেজির নিচে যেকোনো শার্ক ধরলে জরিমানার বিধান কার্যত অকার্যকর।

উন্নয়ন না সংরক্ষণ—দুটির সমন্বয় জরুরি। হোয়েল শার্কের করিডর থেকে পশুর–শিবসার নার্সারি—সবখানেই ট্রলার নিয়ন্ত্রণ, জালের ন্যূনতম মাপ বেঁধে দেওয়া এবং নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যুগপৎ নজরদারি ছাড়া অবস্থার উন্নতি অসম্ভব। সর্বোপরি, গবেষণা বাজেট বাড়িয়ে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উপকূলের জেলেপল্লিগুলোকে মাঠ–সহযোগী করতে হবে।

শেষ কথা

একদা পদ্মা–মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের ঢেউজুড়ে হাঙরের অবাধ রাজত্ব ছিল। আজও সেন্ট মার্টিনের স্বচ্ছ নীল থেকে পশুরের কচুরিপানা–ঢাকা জলে উঁকি দেয় হোঁশে–দাঁতওয়ালা এই জীববৈচিত্র্যের দূতরা। কিন্তু দূষণ, কুসংস্কার ও অনিয়ন্ত্রিত শিকার চলতে থাকলে গাঙ্গেয় হাঙরের মতো বহু প্রজাতিই হয়তো অচিরে কালের গর্ভে মিলিয়ে যাবে। তাই সাগর–নদীর এই শিকারিদের টিকিয়ে রাখা মানে কেবল একটি প্রজাতি রক্ষা নয়; বরং গোটা উপকূল ও নদী–নির্ভর বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষা—যা শেষ বিচারে আমাদেরই অস্তিত্বের প্রশ্ন।

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)

বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের নদী–নদীতে যেসব হাঙরের রাজত্ব

০২:৩৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের সাগরনদীজগৎ’ ও হাঙরের বৈচিত্র্য

বাংলাদেশের সাগর–নদীজগৎ এক বিস্ময়কর জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার, যার সবচেয়ে রহস্যময় অধিবাসী হাঙর। সাম্প্রতিক একাধিক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর ও উপকূল–ডেল্টা মিলিয়ে অন্তত ৬৬ টি নিশ্চিত হাঙর প্রজাতি, আর রেসহ ধরলে সংখ্যা ১০০–এরও বেশি। আরও বিস্তৃত ‘সম্ভাব্য’ তালিকা ১১৬–তে গিয়ে ঠেকে। তবে পরিমাণের চেয়ে বড় খবর—এসব শিকারির প্রায় ৫৮ শতাংশই আজ আইইউসিএন–এর বিপন্ন থেকে মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত।

সাগরের উন্মুক্ত জল: সুবিশাল তালিকা

সবচেয়ে চোখে পড়া সদস্য নিঃসন্দেহে হোয়েল শার্ক (Rhincodon typus)। দৈর্ঘ্যে ১২–১৮ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, অথচ খাদ্য কেবল প্ল্যাঙ্কটন কণিকা। মার্চ–মে ও অক্টোবর–ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া থেকে নাফ ক্যানিয়নের গভীর খাদ পর্যন্ত পুরো করিডরে এরা ধীরে সুস্থে প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে খায়। ট্রলারের বাতি ও পর্যটনের উজ্জ্বল আলো এই ‘মহাশান্ত’ দানবকে প্রায়ই ভাসিয়ে আনে—গবেষকদের জন্য যেমন সম্পদ, তেমনি অসচেতন জেলেদের জালে মৃত্যুঝুঁকি।

টাইগার শার্ক (Galeocerdo cuvier), ব্ল্যাকটিপ, স্পিনার ও সিল্কি—এসব মাঝারি থেকে বৃহৎ আকারের শিকারি বর্ষা–পরবর্তী ভাদ্র–আশ্বিনে কক্সবাজার–চট্টগ্রাম উপকূলে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে। ওই তিন মাসেই বার্ষিক ‘শার্ক ল্যান্ডিং’–এর প্রায় ৪২ শতাংশ ঘটে।

হোয়েল শার্কের মহাযাত্রা

বঙ্গোপসাগরের উত্তর–পশ্চিমাংশে ‘নাফ ক্যানিয়ন’ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক অভিবাসন করিডর চিহ্নিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই পথেই হোয়েল শার্কের ঝাঁক মৌসুমি প্ল্যাঙ্কটনের ‘বুম’ খুঁজে যাতায়াত করে। স্যাটেলাইট ট্যাগ ও ছবি বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিছু নমুনা মালদ্বীপ–শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত ছুটে গিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার টেকনাফ উপকূলে ফিরে আসে। করিডরটি সুরক্ষিত না হলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মাছটির স্থানীয় জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেতে পারে।

সুন্দরবনের নার্সারি

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পশুর–শিবসা ও দুবলা–কেদারপাড়া খালের নরম কাদা–পানি হাঙর ও রে প্রজাতির অব্যর্থ লালনক্ষেত্র। মে থেকে আগস্ট—বাঘা জোয়ার–ভাটার মৌসুমে এখানেই দেখা মেলে ‘পাপ্পু শার্ক’, অর্থাৎ ৩০–৪০ সেন্টিমিটারের শিশু হাঙর। শুটকি আড়ত ও বাজার জরিপে দেখা যায়, শিশু হাঙর শনাক্ত হওয়ার ৪৮ শতাংশ ঘটনাই পশুর–শিবশা মোহনাকেন্দ্রিক।

মিঠে জলের তিন বাঘ

একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে মিঠে নদী—দুয়ের দুনিয়া একসঙ্গে দখলে নেওয়া বুল শার্ক (Carcharhinus leucas) বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ‘ইস্টুয়ারিন’ শিকারি। বর্ষা এলে কর্ণফুলী ও সাঙ্গু হয়ে মেঘনা–ইলিশা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কখনও পদ্মা পর্যন্ত উঠে আসে। ২০২৩-এ শরীয়তপুরে ১.৮ মিটার লম্বা একটি বুল শার্ক ধরা পড়ে—এর অভিযাত্রার জোরাল প্রমাণ।

আরও দুর্লভ গাঙ্গেয় হাঙর (Glyphis gangeticus) মোটামুটি ‘নদীর পাকাপোক্ত বাসিন্দা’। এক সময় পদ্মা–মেঘনা–ব্রহ্মপুত্র থেকে হুগলি–যমুনা পর্যন্ত বিস্তৃতি থাকলেও এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘মহাবিপন্ন’; শেষ নিশ্চিত নজির ২০০৬-এর সুন্দরবন ও ২০১৭-এর কক্সবাজারে মাত্র তিনটি নমুনা। ছোটখাটো টিরু শার্ক (Carcharhinus tilstoni)-এর অস্তিত্ব সাম্প্রতিক ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে; কুতুবদিয়া পেরিয়ে বর্ষার শেষে মেঘনার নিম্ন ধারায় কখনও সখনও দেখা মেলে।

কোন নদীতে বেশি?

  • পশুর–শিবসা (খুলনা–বাগেরহাট): সুন্দরবনের ছায়াঘেরা শাখা–নদীগুলো শিশু বুল ও ব্ল্যাকটিপ শার্কের প্রধান আশ্রয়।
    •মেঘনা মোহনা ও ইলিশা চ্যানেল (ভোলা–চাঁদপুর): প্রবল জোয়ার–স্রোত ও পলির জোগানে বর্ষায় বুল ও স্পিনার শার্কের উপস্থিতি বাড়ে।
    • কর্ণফুলী–সাঙ্গু (চট্টগ্রাম): শহুরে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যা কমেছে, তবু তরুণ বুল শার্কের হঠাৎ হানা এখানেও দেখা যায়।
    • নিম্ন পদ্মা (মাওয়া–শরীয়তপুর): গাঙ্গেয় হাঙরের ঐতিহাসিক ঠাঁই; আজ বিচ্ছিন্ন বুল শার্ক ছাড়া তেমন কিছু নেই—ড্রেজিং ও বাঁধ পথ রুদ্ধ করেছে।

সংকট ও সংরক্ষণ

বিপন্নতার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে আছে অতিরিক্ত মাছধরা, ট্রলারের ‘বাই–ক্যাচ’, নদী-প্রকল্পে গতিপথ বদল এবং দূষণের মরণছোবল। ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তর সুন্দরবনের সাতটি নদী–খালকে ‘শার্ক–রে সংরক্ষণ এলাকা’ ঘোষণা করেছে, যেখানে শিশু হাঙর ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকলেও মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ দুর্বল—৩০ কেজির নিচে যেকোনো শার্ক ধরলে জরিমানার বিধান কার্যত অকার্যকর।

উন্নয়ন না সংরক্ষণ—দুটির সমন্বয় জরুরি। হোয়েল শার্কের করিডর থেকে পশুর–শিবসার নার্সারি—সবখানেই ট্রলার নিয়ন্ত্রণ, জালের ন্যূনতম মাপ বেঁধে দেওয়া এবং নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যুগপৎ নজরদারি ছাড়া অবস্থার উন্নতি অসম্ভব। সর্বোপরি, গবেষণা বাজেট বাড়িয়ে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উপকূলের জেলেপল্লিগুলোকে মাঠ–সহযোগী করতে হবে।

শেষ কথা

একদা পদ্মা–মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের ঢেউজুড়ে হাঙরের অবাধ রাজত্ব ছিল। আজও সেন্ট মার্টিনের স্বচ্ছ নীল থেকে পশুরের কচুরিপানা–ঢাকা জলে উঁকি দেয় হোঁশে–দাঁতওয়ালা এই জীববৈচিত্র্যের দূতরা। কিন্তু দূষণ, কুসংস্কার ও অনিয়ন্ত্রিত শিকার চলতে থাকলে গাঙ্গেয় হাঙরের মতো বহু প্রজাতিই হয়তো অচিরে কালের গর্ভে মিলিয়ে যাবে। তাই সাগর–নদীর এই শিকারিদের টিকিয়ে রাখা মানে কেবল একটি প্রজাতি রক্ষা নয়; বরং গোটা উপকূল ও নদী–নির্ভর বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষা—যা শেষ বিচারে আমাদেরই অস্তিত্বের প্রশ্ন।