সরকারি ব্যাখ্যা ও মূল প্রেক্ষাপট
ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় একটি দুর্গা মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে—এমন অভিযোগ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলোর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, ঘটনাটির পেছনে রয়েছে ভিন্ন প্রেক্ষাপট।
গত বছর দুর্গাপূজার সময় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় কোনো পূর্বানুমতি ছাড়াই বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব, অবিভাজ্য মালিকানাধীন একটি জমিতে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ তৈরি করে। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয় যে পূজা শেষ হওয়ার পর সেই অস্থায়ী মণ্ডপ সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু অক্টোবর ২০২৪-এ পূজা শেষ হওয়ার পরও আয়োজকেরা সেই মণ্ডপ না সরিয়ে বরং সেখানে ‘মহাকালী’ প্রতিমা স্থাপন করেন, যা স্পষ্টত পারস্পরিক সমঝোতা লঙ্ঘন করে।
বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও মণ্ডপটি স্থায়ী রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা রেলওয়ের সাথে করা চুক্তির পরিপন্থী।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ডিসেম্বর ২০২৪-এ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও মণ্ডপ আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে। তখন রেলওয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে যাতে রেললাইনের দুই পাশে রেলওয়ের জমিতে অবৈধ দোকান, হকার, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রেলওয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই এলাকার বিদ্যমান রেললাইনের পূর্ব দিকে ২০০ ফুট পর্যন্ত পুরো জমিই রেলওয়ের মালিকানাধীন। বর্তমানে ওই জমিতে ‘ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়াল গেজ লাইন নির্মাণ’ এবং ‘টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়াল গেজ লাইনের ডাবলিং প্রকল্প’ বাস্তবায়নের জন্য নতুন রেললাইন বসানো অত্যন্ত জরুরি।
গত কয়েক মাসে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও অবৈধ দখলদাররা জমি খালি করেনি। অবশেষে ২৪ ও ২৫ জুন রেলওয়ে আবারও সবাইকে—পূজা আয়োজকসহ—অস্থায়ী মণ্ডপসহ সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়।
২৬ জুন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রেলওয়ে শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালায় এবং রেললাইনের পাশের সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়। উচ্ছেদ চলাকালে অস্থায়ী মণ্ডপের প্রতিমা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে পাশের বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
আইনসম্মত কার্যক্রম ও ধর্মীয় স্থানের সুরক্ষা
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের এই ধরনের উচ্ছেদ কার্যক্রম একটি নিয়মিত ও বৈধ প্রশাসনিক কাজ। দেশের আইন অনুযায়ী যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় পূর্ণ সুরক্ষা পায়—যদি তা আইন মেনে তৈরি হয়। তবে কোনো অবস্থাতেই সরকারি জমি দখল করে কোনো ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ বৈধ নয়।
সরকারের দাবি, অস্থায়ী মণ্ডপের আয়োজকরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আস্থা ও সদিচ্ছার অপব্যবহার করেছেন এবং নিজেদের করা চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।
সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার
বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে দেশের সব সম্প্রদায়ের অধিকার ও উপাসনালয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য সর্বদা সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পক্ষে, যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার বিশ্বাস ও ধর্ম নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে বাস করে ও উন্নতি করে।
সবাইকে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য ও বাস্তবতা বিবেচনা করে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার আহ্বান জানিয়েছে।