০৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি ইউক্রেন দাবি করেছে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিক ইইউ কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার তিন ‘চুরির গম’ আমদানি: বাংলাদেশের ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন চীনের বৃহত্তম গভীর সমুদ্র গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ও পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

বাংলাদেশের লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নরসুন্দর পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়

বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নরসুন্দর পিতা ও পুত্রকে মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়৷ অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, ধর্ম অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ সংশ্লিষ্ট থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

লালমনিরহাটের পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের পেশা মানুষের চুল কাটা৷ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ‘উত্তেজিত জনতা’ পিটিয়ে তাদের পুলিশে দেয়৷ প্রকাশ্যে অভিযুক্তদের ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ফাঁসি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)৷

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে পুলিশে দেয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়৷ সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে সাড়া জাগানো দুটি ঘটনার একটি খুলনার৷ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের সেই ঘটনায় উৎসব মণ্ডল নামের ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরকে তিন বাহিনীর উপস্থিতিতেই পেটানো হয়৷ পিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে – এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে জানানো হয় উৎসব বেঁচে আছে৷

পরের ঘটনাটি ২০২৪ সালের অক্টোবরের৷ ফরিদপুরে সেই ঘটনার শিকার হৃদয় পাল৷ একই ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য দ্বিতীয়বার ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হলে এক পর্যায়ে সেনা হেফাজতে নিতে হয় তাকে৷ স্ট্যাটাসটি সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিক কাজী আল আমীন ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, “যে আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে, সেই আইডির নাম কৃষ্ণা দাস রাহুল। আর ওই ছেলের নাম হৃদয় পাল। আমি এটা নিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি যে, কৃষ্ণা দাস রাহুল নামে ফেসবুক আইডি সে চালায় কিনা। আমাকে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে ওই আইডি তার।”

তবে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি তদন্ত শুরুর আগেই অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছেন – এমনটি আগে কখনো দেখা যায়নি৷ লালমনিরহাটে পুলিশের এমন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা দুই ধর্মীয় সংখ্যালঘু নরসুন্দরের সুবিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা৷

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়ার ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন৷ পুরো ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় এক ইমামের নেতৃত্বে৷ ‘উত্তেজিত জনতা’র উদ্দেশ্যে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি বলেন, “এমন মামলা তাদের দেবো,  নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়৷” ওসির এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের অনেকেই সমালোচনামুখর হন৷  মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন এমন বক্তব্যের কারণে সেই পুলিশ কর্মকর্তা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।

পিটিয়ে পুলিশে দেয়ার সময় প্রবীণ পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণুে চন্দ্র শীল দাবি করেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগটি সত্য নয়৷ তারা এখন কারাগারে৷ তবে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী দীপ্তি রানী শীলেরও দাবি, “ ধর্ম অবমানার কোনো ঘটনা ঘটেনি। চুল কাটিয়ে এক তরুণ ১০ টাকা কম দিতে চাওয়ায় বাকবিতন্ডার জেরে ধর্ম অবমাননার (অভিযোগ তুলে) হামলা চালানো হয়েছে।”

বুধবার, অর্থাৎ ঘটনার দু দিন পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। সমাবেশ করে সবার প্রতি শান্তি বজায় রেখে যার যার ধর্ম পালনের আহ্বানও জানান তারা।

দীপ্তি রানীও সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “আমার স্বামী, শ্বশুর কোনো অপরাধ করেননি। তারা ধর্ম অবমাননা করেননি। তাদের মুক্তি দিন।”

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়

২২ জুন দুপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে স্থানীয় ‘গোলাসা বাজার জামে মসজিদের সম্মিলিত মুসুল্লিবৃন্দের’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়।জোহরের নামাজের পর বের করা মিছিলটি লালমনিরহাট শহরের হানিফ পাগলার মোড়ে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের সেলুনে যায়। কিছু লোক সেলুন থেকে প্রবীণ নরসুন্দর ও তার ছেলেকে টেনে বের করে। দোকানের সামনেই তাদের মারধর করা হয়। মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু লোক ৬৯ বছর বয়সি পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ৩৫ বছর বয়সি সন্তান বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে মারধর করছে। পরেশ চন্দ্র শীলকে মারতে

মারতে ঘাড়ধাক্কা দেয়া হচ্ছে। বিষ্ণু বারবার হাত জোড় করে বাবাকে ছেড়ে দিতে বললেও তাতে কাজ হয়নি৷ পরেশ চন্দ্র শীলের, “আমি বলি নাই, আমি বলি নাই-” দাবিতে কান না দিয়ে ‘গোলাসা বাজার জামে মসজিদের সম্মিলিত মুসুল্লি’দের কয়েকজন তখন মারপিট চালিয়ে যান৷

এক পর্যায়ে পুলিশ ডাকা হয়৷ পুলিশ এলে তাদের সামনেও চলে মারধর৷ তারপর পিতা-পুত্রকে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে৷

পুলিশের সঙ্গে পরেশ ও বিষ্ণু থানায় গেলে থানার সামনেও ভিড় জমে৷ থানা চত্তরেই চলতে থাকে উত্তেজিত জনতার স্লোগান৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। উপস্থিত উত্তেজিত জনতাকে তখনই ‘আশ্বাসবাণী’ শোনান সদর থানার ওসি নুরনবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বক্তব্যের ভিডিও-ও ছড়িয়ে পড়ে৷ ভিডিওতে ওসি নুরনবীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওসি হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার। কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমারও কলিজায় আগুন লেগেছে। আপনাদের মতো চোখে পানি আমারও এসেছে। কীভাবে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এ দেশে করে। আমি আপনাদের ওয়াদা দিলাম, আমি তাদের যখন অ্যারেস্ট করেছি, বাংলাদেশে এমন মামলা তাদের দেবো, নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়…।’’

এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে ফোন করা হয়েছিল৷
কিন্তু লালমনিরহাট সদর থানার ওসি নুরনবী প্রশ্ন শুনেই ব্যস্ততার কথা বলে সংযোগ কেটে দেন। তারপর আর ফোন ধরেননি। তবে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা না বললেও তীব্র সমালোচনার মুখে নিজের বক্তব্য সম্পর্কে ইতিমধ্যে মুখ খুলেছেন তিনি৷ মঙ্গলবার দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে ওসি নুরনবী বলেছেন, “তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও উপস্থিত লোকজনকে শান্ত করতে ওই কথা বলেছি। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।”
তবে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,“ আমরা তাকে সতর্ক করে দিয়েছি। সে এরকম কথা বলতে পারে না। আইনের বাইরে কোনো বক্তব্য দিতে পারে না। যা হবে, আইন মেনে হবে।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওই বক্তব্য মবকে আরো উসকে দিয়েছে। তিনি  আইনের বাইরে গিয়ে কথা বলেছেন। আর তার কথার পর যে মামলা হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘মামলা সাজানো হয়েছে।”
২২ জুন ‘গোলাসা বাজার জামে মসজিদের সম্মিলিত মুসুল্লিবৃন্দের’ মিছিলে যারা নেতৃত্ব দেন, নামাটারী আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুল আজিজ তাদের অন্যতম। অভিযুক্ত পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ম অবমাননা মামলার বাদী তিনি। ডয়চে ভেলের কাছে তিনি দাবি করেন, “পরেশ চন্দ্র শীল মহানবী ও তার স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এটা আমার সামনে না ঘটলেও আমার মসজিদের মুসল্লি ও মাদ্রাসা ছাত্র নাজুমল ইসলাম মজজিদে গিয়ে আমাকে বলেছে। তার চুল কাটানোর সময় কটূক্তি করা হয়েছে।”
তার আরো দাবি, “ পরেশ চন্দ্র শীল এর আগেও ধর্ম নিয়ে নানা আপত্তিকর কথা বলেছে। আমি তাকে  সাবধানও করেছি। বলেছি, সে ওটা বন্ধ না করলে তার দোকান তুলে দেবো। কিন্তু সে এবার আবার একই ঘটনা ঘটালে মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে।”
তিনি আরো বলেন, “উত্তেজিত জনতা তাদের ঘেরাও করলে তারা মাফ চায় আর ধর্ম অবমননার কথা অস্বীকার করে। সেই কারণে কয়েকটি গলাধাক্কা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অস্বীকার করলেও আমি তার আগের আচরণ জানি। তারা আমার পরিচিত। আগেও তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
স্থানীয় ওলামা পরিষদের সেক্রেটারি মাওলানা মো. তারেক হোসাইনও সেদিন মিছিলে ছিলেন। তিনি মামলার সাক্ষীদের একজন। তার দাবি,“ আমি সেখানে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেছি, নয় তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারতো।”
“তবে আমিও অবমাননার ঘটনার সময় ওই সেলুনে ছিলাম না। নাজমুল অনেককে বলেছেন। আমি স্থানীয় জনতার কাছে শুনেছি যে, সে নবীকে অবমাননা করেছে।”
২২ জুনের ঘটনা নিয়ে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী দীপ্তি রানী শীলের একটি ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে তিনি বলেছেন, “ কী ঘটেছে তা তো আমরা জানি না। তবে আমি ও আমার ননদ কারাগারে আমার স্বামী ও শ্বশুরকে দেখতে গিয়েছি। আমি কারাগারে দেখতে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলাম কী হয়েছিল। আমার শ্বশুর বললো ,মা, কোনো কিছু না, সামান্য ১০ টাকার কারণে আজকে এতকিছু। আমি ছেলেটার কাছে আমার অর্জিত যে টাকা, সেটাই চেয়েছি। কিন্তু ছেলেটি সেটা দেবে না। আমি ১০ টাকা ছাড়বো না আর সে দেবে না। তাকে ১০ টাকা না ছাড়ায় সে বলে যায় – আমি আপনাকে দেখে নেবো।”
ওই ভিডিওতে দীপ্তি রানী আরো বলেন, “আমার শ্বশুর এবং স্বামীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার বিচার চাই।”
বুধবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “ওই ছেলেটি ১০ টাকা কম দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার শ্বশুর ১০ টাকা কম নিতে রাজি হননি। ঘটনা এটাই। এটা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। ধর্ম অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি আমার স্বামী ও শ্বশুরের মুক্তি চাই।”
তিনি জানান, এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলের জামিনের আবেদন করা হয়নি। আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাট সদর থানার ইন্সপেক্টর সাজু মিয়া। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছি। তাতে কয়েকজন ধর্ম অবমাননার কথা বলেছে। তবে আরো তদন্ত হবে।”
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে ধর্ম অবমাননা হয়েছে কি হয় নাই। তাদের পরিবার ১০ টাকার বিষয় নিয়ে যে দাবি করছে, তারও তদন্ত হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি এসেছে।”
পুলিশ সুপার আরো বলেন, “আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত। বাকি বিষয়গুলো ধীরে ধীরে দেখবো।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেেকে বলেন, “মানুষের বিরুদ্ধে যে অভিযোগই থাকুক না কেন সেটা আদালত দেখবে, আদালত বিচার করবে। কিন্তু মব-সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিচার করা, পুলিশে দেয়া -এটা আইনবিরোধী। যারা মব তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু ওসি সাহেব যে কথা বলেছেন তা মবকে আরো উৎসাহিত করেছে। এতে সমাজে অনাস্থা তৈরি হয়।”
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র নাথ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,“ তারা (পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল) যেভাবে মবের শিকার হয়েছেন, যেভাবে (তাদের) অপমান, অপদস্থ করা হয়েছে, তাতে দেশে আইন, বিচার আছে বলে মনে হয় না। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
“আমরা যতদূর জানি, তারা ধর্ম অবমাননা করেননি। চুলকাটায় ১০ টাকা কম না নেয়ায় ধর্ম অবমাননার কথা বলে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আর ওসি সাহেব ওই হামলাকারীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তিনি তো আগেই বলে দিয়েছেন, এমন মামলা হবে যে, যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হবে। তিনি তো মবেরই অংশ হলেন,” বলেন তিনি।
এ সময় পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের দ্রুত মুক্তিও দাবি করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র নাথ।
ডিডাব্লিউ ডটকম

ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ও পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

০৪:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নরসুন্দর পিতা ও পুত্রকে মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়৷ অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, ধর্ম অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ সংশ্লিষ্ট থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

লালমনিরহাটের পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের পেশা মানুষের চুল কাটা৷ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ‘উত্তেজিত জনতা’ পিটিয়ে তাদের পুলিশে দেয়৷ প্রকাশ্যে অভিযুক্তদের ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ফাঁসি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)৷

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে পুলিশে দেয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়৷ সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে সাড়া জাগানো দুটি ঘটনার একটি খুলনার৷ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের সেই ঘটনায় উৎসব মণ্ডল নামের ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরকে তিন বাহিনীর উপস্থিতিতেই পেটানো হয়৷ পিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে – এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে জানানো হয় উৎসব বেঁচে আছে৷

পরের ঘটনাটি ২০২৪ সালের অক্টোবরের৷ ফরিদপুরে সেই ঘটনার শিকার হৃদয় পাল৷ একই ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য দ্বিতীয়বার ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হলে এক পর্যায়ে সেনা হেফাজতে নিতে হয় তাকে৷ স্ট্যাটাসটি সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিক কাজী আল আমীন ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, “যে আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে, সেই আইডির নাম কৃষ্ণা দাস রাহুল। আর ওই ছেলের নাম হৃদয় পাল। আমি এটা নিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি যে, কৃষ্ণা দাস রাহুল নামে ফেসবুক আইডি সে চালায় কিনা। আমাকে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে ওই আইডি তার।”

তবে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি তদন্ত শুরুর আগেই অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছেন – এমনটি আগে কখনো দেখা যায়নি৷ লালমনিরহাটে পুলিশের এমন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা দুই ধর্মীয় সংখ্যালঘু নরসুন্দরের সুবিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে শঙ্কার মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা৷

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে পিটিয়ে পুলিশে দেয়ার ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন৷ পুরো ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় এক ইমামের নেতৃত্বে৷ ‘উত্তেজিত জনতা’র উদ্দেশ্যে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি বলেন, “এমন মামলা তাদের দেবো,  নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়৷” ওসির এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের অনেকেই সমালোচনামুখর হন৷  মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন এমন বক্তব্যের কারণে সেই পুলিশ কর্মকর্তা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।

পিটিয়ে পুলিশে দেয়ার সময় প্রবীণ পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণুে চন্দ্র শীল দাবি করেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগটি সত্য নয়৷ তারা এখন কারাগারে৷ তবে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী দীপ্তি রানী শীলেরও দাবি, “ ধর্ম অবমানার কোনো ঘটনা ঘটেনি। চুল কাটিয়ে এক তরুণ ১০ টাকা কম দিতে চাওয়ায় বাকবিতন্ডার জেরে ধর্ম অবমাননার (অভিযোগ তুলে) হামলা চালানো হয়েছে।”

বুধবার, অর্থাৎ ঘটনার দু দিন পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। সমাবেশ করে সবার প্রতি শান্তি বজায় রেখে যার যার ধর্ম পালনের আহ্বানও জানান তারা।

দীপ্তি রানীও সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “আমার স্বামী, শ্বশুর কোনো অপরাধ করেননি। তারা ধর্ম অবমাননা করেননি। তাদের মুক্তি দিন।”

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়

২২ জুন দুপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে স্থানীয় ‘গোলাসা বাজার জামে মসজিদের সম্মিলিত মুসুল্লিবৃন্দের’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়।জোহরের নামাজের পর বের করা মিছিলটি লালমনিরহাট শহরের হানিফ পাগলার মোড়ে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের সেলুনে যায়। কিছু লোক সেলুন থেকে প্রবীণ নরসুন্দর ও তার ছেলেকে টেনে বের করে। দোকানের সামনেই তাদের মারধর করা হয়। মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু লোক ৬৯ বছর বয়সি পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ৩৫ বছর বয়সি সন্তান বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে মারধর করছে। পরেশ চন্দ্র শীলকে মারতে

মারতে ঘাড়ধাক্কা দেয়া হচ্ছে। বিষ্ণু বারবার হাত জোড় করে বাবাকে ছেড়ে দিতে বললেও তাতে কাজ হয়নি৷ পরেশ চন্দ্র শীলের, “আমি বলি নাই, আমি বলি নাই-” দাবিতে কান না দিয়ে ‘গোলাসা বাজার জামে মসজিদের সম্মিলিত মুসুল্লি’দের কয়েকজন তখন মারপিট চালিয়ে যান৷

এক পর্যায়ে পুলিশ ডাকা হয়৷ পুলিশ এলে তাদের সামনেও চলে মারধর৷ তারপর পিতা-পুত্রকে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে৷

পুলিশের সঙ্গে পরেশ ও বিষ্ণু থানায় গেলে থানার সামনেও ভিড় জমে৷ থানা চত্তরেই চলতে থাকে উত্তেজিত জনতার স্লোগান৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। উপস্থিত উত্তেজিত জনতাকে তখনই ‘আশ্বাসবাণী’ শোনান সদর থানার ওসি নুরনবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বক্তব্যের ভিডিও-ও ছড়িয়ে পড়ে৷ ভিডিওতে ওসি নুরনবীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওসি হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার। কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমারও কলিজায় আগুন লেগেছে। আপনাদের মতো চোখে পানি আমারও এসেছে। কীভাবে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এ দেশে করে। আমি আপনাদের ওয়াদা দিলাম, আমি তাদের যখন অ্যারেস্ট করেছি, বাংলাদেশে এমন মামলা তাদের দেবো, নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়…।’’

এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে ফোন করা হয়েছিল৷
কিন্তু লালমনিরহাট সদর থানার ওসি নুরনবী প্রশ্ন শুনেই ব্যস্ততার কথা বলে সংযোগ কেটে দেন। তারপর আর ফোন ধরেননি। তবে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা না বললেও তীব্র সমালোচনার মুখে নিজের বক্তব্য সম্পর্কে ইতিমধ্যে মুখ খুলেছেন তিনি৷ মঙ্গলবার দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে ওসি নুরনবী বলেছেন, “তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও উপস্থিত লোকজনকে শান্ত করতে ওই কথা বলেছি। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।”
তবে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,“ আমরা তাকে সতর্ক করে দিয়েছি। সে এরকম কথা বলতে পারে না। আইনের বাইরে কোনো বক্তব্য দিতে পারে না। যা হবে, আইন মেনে হবে।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওই বক্তব্য মবকে আরো উসকে দিয়েছে। তিনি  আইনের বাইরে গিয়ে কথা বলেছেন। আর তার কথার পর যে মামলা হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘মামলা সাজানো হয়েছে।”
২২ জুন ‘গোলাসা বাজার জামে মসজিদের সম্মিলিত মুসুল্লিবৃন্দের’ মিছিলে যারা নেতৃত্ব দেন, নামাটারী আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুল আজিজ তাদের অন্যতম। অভিযুক্ত পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ম অবমাননা মামলার বাদী তিনি। ডয়চে ভেলের কাছে তিনি দাবি করেন, “পরেশ চন্দ্র শীল মহানবী ও তার স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এটা আমার সামনে না ঘটলেও আমার মসজিদের মুসল্লি ও মাদ্রাসা ছাত্র নাজুমল ইসলাম মজজিদে গিয়ে আমাকে বলেছে। তার চুল কাটানোর সময় কটূক্তি করা হয়েছে।”
তার আরো দাবি, “ পরেশ চন্দ্র শীল এর আগেও ধর্ম নিয়ে নানা আপত্তিকর কথা বলেছে। আমি তাকে  সাবধানও করেছি। বলেছি, সে ওটা বন্ধ না করলে তার দোকান তুলে দেবো। কিন্তু সে এবার আবার একই ঘটনা ঘটালে মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে।”
তিনি আরো বলেন, “উত্তেজিত জনতা তাদের ঘেরাও করলে তারা মাফ চায় আর ধর্ম অবমননার কথা অস্বীকার করে। সেই কারণে কয়েকটি গলাধাক্কা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অস্বীকার করলেও আমি তার আগের আচরণ জানি। তারা আমার পরিচিত। আগেও তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
স্থানীয় ওলামা পরিষদের সেক্রেটারি মাওলানা মো. তারেক হোসাইনও সেদিন মিছিলে ছিলেন। তিনি মামলার সাক্ষীদের একজন। তার দাবি,“ আমি সেখানে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেছি, নয় তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারতো।”
“তবে আমিও অবমাননার ঘটনার সময় ওই সেলুনে ছিলাম না। নাজমুল অনেককে বলেছেন। আমি স্থানীয় জনতার কাছে শুনেছি যে, সে নবীকে অবমাননা করেছে।”
২২ জুনের ঘটনা নিয়ে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী দীপ্তি রানী শীলের একটি ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে তিনি বলেছেন, “ কী ঘটেছে তা তো আমরা জানি না। তবে আমি ও আমার ননদ কারাগারে আমার স্বামী ও শ্বশুরকে দেখতে গিয়েছি। আমি কারাগারে দেখতে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলাম কী হয়েছিল। আমার শ্বশুর বললো ,মা, কোনো কিছু না, সামান্য ১০ টাকার কারণে আজকে এতকিছু। আমি ছেলেটার কাছে আমার অর্জিত যে টাকা, সেটাই চেয়েছি। কিন্তু ছেলেটি সেটা দেবে না। আমি ১০ টাকা ছাড়বো না আর সে দেবে না। তাকে ১০ টাকা না ছাড়ায় সে বলে যায় – আমি আপনাকে দেখে নেবো।”
ওই ভিডিওতে দীপ্তি রানী আরো বলেন, “আমার শ্বশুর এবং স্বামীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার বিচার চাই।”
বুধবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “ওই ছেলেটি ১০ টাকা কম দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার শ্বশুর ১০ টাকা কম নিতে রাজি হননি। ঘটনা এটাই। এটা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। ধর্ম অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি আমার স্বামী ও শ্বশুরের মুক্তি চাই।”
তিনি জানান, এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলের জামিনের আবেদন করা হয়নি। আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাট সদর থানার ইন্সপেক্টর সাজু মিয়া। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছি। তাতে কয়েকজন ধর্ম অবমাননার কথা বলেছে। তবে আরো তদন্ত হবে।”
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে ধর্ম অবমাননা হয়েছে কি হয় নাই। তাদের পরিবার ১০ টাকার বিষয় নিয়ে যে দাবি করছে, তারও তদন্ত হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি এসেছে।”
পুলিশ সুপার আরো বলেন, “আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত। বাকি বিষয়গুলো ধীরে ধীরে দেখবো।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেেকে বলেন, “মানুষের বিরুদ্ধে যে অভিযোগই থাকুক না কেন সেটা আদালত দেখবে, আদালত বিচার করবে। কিন্তু মব-সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিচার করা, পুলিশে দেয়া -এটা আইনবিরোধী। যারা মব তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু ওসি সাহেব যে কথা বলেছেন তা মবকে আরো উৎসাহিত করেছে। এতে সমাজে অনাস্থা তৈরি হয়।”
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র নাথ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,“ তারা (পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল) যেভাবে মবের শিকার হয়েছেন, যেভাবে (তাদের) অপমান, অপদস্থ করা হয়েছে, তাতে দেশে আইন, বিচার আছে বলে মনে হয় না। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
“আমরা যতদূর জানি, তারা ধর্ম অবমাননা করেননি। চুলকাটায় ১০ টাকা কম না নেয়ায় ধর্ম অবমাননার কথা বলে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আর ওসি সাহেব ওই হামলাকারীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তিনি তো আগেই বলে দিয়েছেন, এমন মামলা হবে যে, যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হবে। তিনি তো মবেরই অংশ হলেন,” বলেন তিনি।
এ সময় পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের দ্রুত মুক্তিও দাবি করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র নাথ।
ডিডাব্লিউ ডটকম