০৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

অন্ত্র ভালো রাখতে শাকসবজিই সবচেয়ে ভরসা

আমাদের পেটের ভেতর, বিশেষ করে অন্ত্রে, হাজার হাজার ধরনের জীবাণু বাস করে। এদের সবাই খারাপ নয়, বরং বেশিরভাগ জীবাণুই শরীরের উপকার করে। এদের একসঙ্গে বলা হয় ‘গাট মাইক্রোবায়োম’। এই জীবাণুরা এমন কিছু খাবার ভাঙতে সাহায্য করে, যেমন আঁশ বা জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা আমাদের শরীর নিজে করতে পারে না। এ ছাড়া এরা শরীরের জন্য দরকারি কিছু ভিটামিন ও উপাদান তৈরি করে, যেমন বি-ভিটামিন ও শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রোবায়োটিক আর প্রিবায়োটিক মানে কী?

এই জীবাণুর উপকারিতা বোঝার পর বাজারে এখন ‘প্রোবায়োটিক’ আর ‘প্রিবায়োটিক’ নামে নানা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

  • • প্রোবায়োটিক পণ্য মানে হলো এমন খাবার বা ক্যাপসুল, যেখানে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা অন্ত্রে গিয়ে কাজ করে।
  • • প্রিবায়োটিক পণ্য হলো এমন উপাদান, যা এই ভালো ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে—এগুলো সাধারণত আঁশজাতীয়।

জীবাণুর যত বৈচিত্র্য, তত ভালো

যত বেশি রকমের ভালো জীবাণু আমাদের অন্ত্রে থাকবে, আমাদের শরীর তত ভালো কাজ করবে। এসব ভালো জীবাণু খারাপ জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে। গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাণুর বৈচিত্র্য কমে গেলে মানুষ মোটা হয়ে যেতে পারে, টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও পেটের সমস্যা (যেমন আইবিএস) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি মাইক্রোবায়োমে হস্তক্ষেপ করা যায়, তাহলে ওজন কমানো, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানো বা পেটের অসুবিধা কমানো সম্ভব।

মাইক্রোবায়োম শুধু পেট না, মনও প্রভাবিত করে

এই জীবাণুরা শুধু হজম নয়, আমাদের মনের অবস্থাও প্রভাবিত করতে পারে। যাঁরা বিষণ্ণতায় ভোগেন, তাঁদের অন্ত্রে ভালো জীবাণু কম থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণ মানুষের অন্ত্রের জীবাণু ইঁদুরের শরীরে দিলে, সেই ইঁদুরও বিষণ্ণ আচরণ করে।

এমনকি জীবাণু কম থাকলে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো শ্বাসকষ্টের রোগও বেশি হয়।

কী খেলে ভালো জীবাণু বাড়বে?

শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম, দই, আচার ও কম্বুচার মতো খাবার মাইক্রোবায়োমের জন্য খুব উপকারী। এসব খাবারে থাকে আঁশ বা জীবাণুবান্ধব উপাদান। অ্যান্টিবায়োটিক খুব দরকার না হলে না খাওয়াই ভালো, কারণ এটা ভালো ও খারাপ—সব ধরনের জীবাণু একসঙ্গে মেরে ফেলে।

বাজারের ক্যাপসুলে কতটা উপকার?

যদিও প্রোবায়োটিক বা প্রিবায়োটিক ক্যাপসুল বা পাউডার বাজারে জনপ্রিয়, তবে এগুলো কিন্তু ওষুধ নয়। এসব পণ্যের উপকারিতা এখনো অনেকটাই যাচাই করা হয়নি। অনেক সময় এসব পণ্য নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচারণা চলে। তবে কিছু দেশ গবেষণা করে নির্ভরযোগ্য অ্যাপ তৈরি করেছে, যাতে জানা যায়, কোন পণ্যে সত্যি কাজের জীবাণু আছে।

প্রোবায়োটিক বেশি খেলেও ক্ষতি হয় না, কিন্তু…

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোবায়োটিক বেশি খেলেও বড় কোনো ক্ষতি হয় না। তবে প্রিবায়োটিক বেশি খেলে অন্ত্রের জীবাণুর ভারসাম্য কিছুটা নষ্ট হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো—গ্যাস। এটি বড় কোনো রোগের কারণ না হলেও সামাজিকভাবে অস্বস্তির হতে পারে।

সুস্থ অন্ত্র ও শরীরের জন্য বাজারের ক্যাপসুল বা পাউডারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিদিনের খাবারে আঁশযুক্ত খাবার রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ না খাওয়া। সবজির পাতেই রয়েছে ভালো জীবাণুর শক্তি—তাই প্রতিদিনের পাতে রাখুন শাকসবজি আর ফলমূল, আর অন্ত্র রাখুন ভালো ও জীবাণুবান্ধব।

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৯)

অন্ত্র ভালো রাখতে শাকসবজিই সবচেয়ে ভরসা

০৫:০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

আমাদের পেটের ভেতর, বিশেষ করে অন্ত্রে, হাজার হাজার ধরনের জীবাণু বাস করে। এদের সবাই খারাপ নয়, বরং বেশিরভাগ জীবাণুই শরীরের উপকার করে। এদের একসঙ্গে বলা হয় ‘গাট মাইক্রোবায়োম’। এই জীবাণুরা এমন কিছু খাবার ভাঙতে সাহায্য করে, যেমন আঁশ বা জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা আমাদের শরীর নিজে করতে পারে না। এ ছাড়া এরা শরীরের জন্য দরকারি কিছু ভিটামিন ও উপাদান তৈরি করে, যেমন বি-ভিটামিন ও শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রোবায়োটিক আর প্রিবায়োটিক মানে কী?

এই জীবাণুর উপকারিতা বোঝার পর বাজারে এখন ‘প্রোবায়োটিক’ আর ‘প্রিবায়োটিক’ নামে নানা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

  • • প্রোবায়োটিক পণ্য মানে হলো এমন খাবার বা ক্যাপসুল, যেখানে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা অন্ত্রে গিয়ে কাজ করে।
  • • প্রিবায়োটিক পণ্য হলো এমন উপাদান, যা এই ভালো ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে—এগুলো সাধারণত আঁশজাতীয়।

জীবাণুর যত বৈচিত্র্য, তত ভালো

যত বেশি রকমের ভালো জীবাণু আমাদের অন্ত্রে থাকবে, আমাদের শরীর তত ভালো কাজ করবে। এসব ভালো জীবাণু খারাপ জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে। গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাণুর বৈচিত্র্য কমে গেলে মানুষ মোটা হয়ে যেতে পারে, টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও পেটের সমস্যা (যেমন আইবিএস) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি মাইক্রোবায়োমে হস্তক্ষেপ করা যায়, তাহলে ওজন কমানো, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানো বা পেটের অসুবিধা কমানো সম্ভব।

মাইক্রোবায়োম শুধু পেট না, মনও প্রভাবিত করে

এই জীবাণুরা শুধু হজম নয়, আমাদের মনের অবস্থাও প্রভাবিত করতে পারে। যাঁরা বিষণ্ণতায় ভোগেন, তাঁদের অন্ত্রে ভালো জীবাণু কম থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণ মানুষের অন্ত্রের জীবাণু ইঁদুরের শরীরে দিলে, সেই ইঁদুরও বিষণ্ণ আচরণ করে।

এমনকি জীবাণু কম থাকলে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো শ্বাসকষ্টের রোগও বেশি হয়।

কী খেলে ভালো জীবাণু বাড়বে?

শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম, দই, আচার ও কম্বুচার মতো খাবার মাইক্রোবায়োমের জন্য খুব উপকারী। এসব খাবারে থাকে আঁশ বা জীবাণুবান্ধব উপাদান। অ্যান্টিবায়োটিক খুব দরকার না হলে না খাওয়াই ভালো, কারণ এটা ভালো ও খারাপ—সব ধরনের জীবাণু একসঙ্গে মেরে ফেলে।

বাজারের ক্যাপসুলে কতটা উপকার?

যদিও প্রোবায়োটিক বা প্রিবায়োটিক ক্যাপসুল বা পাউডার বাজারে জনপ্রিয়, তবে এগুলো কিন্তু ওষুধ নয়। এসব পণ্যের উপকারিতা এখনো অনেকটাই যাচাই করা হয়নি। অনেক সময় এসব পণ্য নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচারণা চলে। তবে কিছু দেশ গবেষণা করে নির্ভরযোগ্য অ্যাপ তৈরি করেছে, যাতে জানা যায়, কোন পণ্যে সত্যি কাজের জীবাণু আছে।

প্রোবায়োটিক বেশি খেলেও ক্ষতি হয় না, কিন্তু…

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোবায়োটিক বেশি খেলেও বড় কোনো ক্ষতি হয় না। তবে প্রিবায়োটিক বেশি খেলে অন্ত্রের জীবাণুর ভারসাম্য কিছুটা নষ্ট হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো—গ্যাস। এটি বড় কোনো রোগের কারণ না হলেও সামাজিকভাবে অস্বস্তির হতে পারে।

সুস্থ অন্ত্র ও শরীরের জন্য বাজারের ক্যাপসুল বা পাউডারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিদিনের খাবারে আঁশযুক্ত খাবার রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ না খাওয়া। সবজির পাতেই রয়েছে ভালো জীবাণুর শক্তি—তাই প্রতিদিনের পাতে রাখুন শাকসবজি আর ফলমূল, আর অন্ত্র রাখুন ভালো ও জীবাণুবান্ধব।