০১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

আগুনে পোড়া রোগীর তাৎক্ষণিক সেবা ও সচেতন উদ্ধার পদ্ধতি

আগুনে দগ্ধ রোগী: সবসময় কেন থাকে ঝুঁকিতে?

আগুনে দগ্ধ বা পুড়ে যাওয়া রোগীরা সবসময়ই অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় থাকেন, কারণ দগ্ধ হওয়া শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আগুনে পোড়া চামড়া শুধু বাহ্যিক নয়, বরং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন—ফুসফুস, শ্বাসনালী, রক্তনালী এমনকি কিডনির কার্যক্রমকেও ব্যাহত করে। এছাড়া শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে, রক্তচাপ কমে যায়, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং অনেক সময় শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই দগ্ধ রোগীকে কখনোই অবহেলা করা যায় না—তাকে তাৎক্ষণিক ও সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ।

দগ্ধ রোগীর জন্য জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা

আগুনে পোড়া রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এই ধাপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করলে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়া ঠেকানো সম্ভব।

১. আগুন নিভিয়ে ফেলুন
রোগীর শরীর থেকে আগুনের শিখা নিভিয়ে ফেলতে পানির ব্যবহার সবচেয়ে কার্যকর। না পারলে কম্বল বা মোটা কাপড় দিয়ে আগুন ঢেকে দমন করুন। রোগীকে দৌড়াতে দেওয়া যাবে না, এতে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে—তাকে শান্ত ও স্থির রাখতে হবে।

২. পোড়া স্থানে ঠান্ডা পানি দিন
আগুন নিভে যাওয়ার পর পোড়া স্থানে ১০-১৫ মিনিট ঠান্ডা পানি দিন। এতে ব্যথা কমে এবং ত্বক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বরফ সরাসরি ব্যবহার করা যাবে না, কারণ তা রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে ক্ষতি বাড়াতে পারে।

৩. কাপড় খুলবেন না
পোড়া স্থানে কাপড় লেগে গেলে জোর করে টেনে খুলবেন না। এতে ত্বক উঠে যেতে পারে এবং রক্তপাত শুরু হতে পারে।

৪. পোড়া স্থান পরিষ্কার রাখুন
পরিষ্কার কাপড় বা জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে পোড়া স্থান ঢেকে রাখুন, যাতে বাইরের ধুলোবালি বা জীবাণু প্রবেশ না করে।

৫. জীবাণুনাশক বা ক্রিম ব্যবহার নয়
হাসপাতালের পরামর্শ ছাড়া ঘরোয়া কোনো পেস্ট, মলম বা ঘি ব্যবহার করা যাবে না। এসব উপাদান অনেক সময় সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে।

৬. প্রচুর পানি পান করান
রোগী যদি সচেতন থাকে তাহলে তাকে অল্প অল্প করে পানি পান করাতে হবে। এতে শরীরের পানিশূন্যতা কিছুটা কমে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে কীভাবে সচেতনভাবে উদ্ধার করবেন?

১. নিজের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করুন
উদ্ধারকারী যেন নিজে আগুনে না পড়ে, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করুন।

২. বৈদ্যুতিক আগুন হলে বিদ্যুৎ বন্ধ করুন
যদি আগুন বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রপাতি থেকে উৎপন্ন হয়, তাহলে প্রথমেই মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। না হলে উদ্ধারকারী নিজেও বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হতে পারেন।

৩. ধোঁয়ার মধ্যে ঢোকার সময় কাপড় ব্যবহার করুন
নাক ও মুখ ঢেকে ধোঁয়ার মধ্যে ঢুকতে হবে। ভেজা তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করলে ধোঁয়ার ক্ষতি কিছুটা কমানো যায়।

৪. রোগীকে টেনে না তুলে ঘূর্ণন পদ্ধতিতে সরান
সরাসরি আগুনের মধ্যে পড়ে যাওয়া রোগীকে ঘূর্ণনের মাধ্যমে বের করতে হবে, যাতে আগুন নিভে যায় এবং পোড়ার পরিমাণ কমে।

৫. শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি সাবধানতা
শিশু ও বৃদ্ধদের ত্বক অত্যন্ত কোমল হওয়ায় তারা দ্রুত মারাত্মক দগ্ধ হন। তাই তাদের উদ্ধারে আরও বেশি সতর্কতা ও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

আগুনে দগ্ধ রোগীরা সবসময়ই মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—প্রাথমিক চিকিৎসা যত দ্রুত ও সঠিকভাবে দেওয়া যাবে, তত বেশি প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে। এজন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, আগুন লাগার সময় করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি প্রতিটি বাড়ি, স্কুল, দোকান ও কারখানায় একটি করে ফার্স্ট-এইড বক্স ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা এখন সময়ের দাবি।

আগুনে পোড়া রোগীর তাৎক্ষণিক সেবা ও সচেতন উদ্ধার পদ্ধতি

০৬:০০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

আগুনে দগ্ধ রোগী: সবসময় কেন থাকে ঝুঁকিতে?

আগুনে দগ্ধ বা পুড়ে যাওয়া রোগীরা সবসময়ই অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় থাকেন, কারণ দগ্ধ হওয়া শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আগুনে পোড়া চামড়া শুধু বাহ্যিক নয়, বরং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন—ফুসফুস, শ্বাসনালী, রক্তনালী এমনকি কিডনির কার্যক্রমকেও ব্যাহত করে। এছাড়া শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে, রক্তচাপ কমে যায়, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং অনেক সময় শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই দগ্ধ রোগীকে কখনোই অবহেলা করা যায় না—তাকে তাৎক্ষণিক ও সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ।

দগ্ধ রোগীর জন্য জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা

আগুনে পোড়া রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এই ধাপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করলে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়া ঠেকানো সম্ভব।

১. আগুন নিভিয়ে ফেলুন
রোগীর শরীর থেকে আগুনের শিখা নিভিয়ে ফেলতে পানির ব্যবহার সবচেয়ে কার্যকর। না পারলে কম্বল বা মোটা কাপড় দিয়ে আগুন ঢেকে দমন করুন। রোগীকে দৌড়াতে দেওয়া যাবে না, এতে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে—তাকে শান্ত ও স্থির রাখতে হবে।

২. পোড়া স্থানে ঠান্ডা পানি দিন
আগুন নিভে যাওয়ার পর পোড়া স্থানে ১০-১৫ মিনিট ঠান্ডা পানি দিন। এতে ব্যথা কমে এবং ত্বক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বরফ সরাসরি ব্যবহার করা যাবে না, কারণ তা রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে ক্ষতি বাড়াতে পারে।

৩. কাপড় খুলবেন না
পোড়া স্থানে কাপড় লেগে গেলে জোর করে টেনে খুলবেন না। এতে ত্বক উঠে যেতে পারে এবং রক্তপাত শুরু হতে পারে।

৪. পোড়া স্থান পরিষ্কার রাখুন
পরিষ্কার কাপড় বা জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে পোড়া স্থান ঢেকে রাখুন, যাতে বাইরের ধুলোবালি বা জীবাণু প্রবেশ না করে।

৫. জীবাণুনাশক বা ক্রিম ব্যবহার নয়
হাসপাতালের পরামর্শ ছাড়া ঘরোয়া কোনো পেস্ট, মলম বা ঘি ব্যবহার করা যাবে না। এসব উপাদান অনেক সময় সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে।

৬. প্রচুর পানি পান করান
রোগী যদি সচেতন থাকে তাহলে তাকে অল্প অল্প করে পানি পান করাতে হবে। এতে শরীরের পানিশূন্যতা কিছুটা কমে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে কীভাবে সচেতনভাবে উদ্ধার করবেন?

১. নিজের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করুন
উদ্ধারকারী যেন নিজে আগুনে না পড়ে, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করুন।

২. বৈদ্যুতিক আগুন হলে বিদ্যুৎ বন্ধ করুন
যদি আগুন বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রপাতি থেকে উৎপন্ন হয়, তাহলে প্রথমেই মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। না হলে উদ্ধারকারী নিজেও বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্ত হতে পারেন।

৩. ধোঁয়ার মধ্যে ঢোকার সময় কাপড় ব্যবহার করুন
নাক ও মুখ ঢেকে ধোঁয়ার মধ্যে ঢুকতে হবে। ভেজা তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করলে ধোঁয়ার ক্ষতি কিছুটা কমানো যায়।

৪. রোগীকে টেনে না তুলে ঘূর্ণন পদ্ধতিতে সরান
সরাসরি আগুনের মধ্যে পড়ে যাওয়া রোগীকে ঘূর্ণনের মাধ্যমে বের করতে হবে, যাতে আগুন নিভে যায় এবং পোড়ার পরিমাণ কমে।

৫. শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি সাবধানতা
শিশু ও বৃদ্ধদের ত্বক অত্যন্ত কোমল হওয়ায় তারা দ্রুত মারাত্মক দগ্ধ হন। তাই তাদের উদ্ধারে আরও বেশি সতর্কতা ও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

আগুনে দগ্ধ রোগীরা সবসময়ই মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—প্রাথমিক চিকিৎসা যত দ্রুত ও সঠিকভাবে দেওয়া যাবে, তত বেশি প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে। এজন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, আগুন লাগার সময় করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি প্রতিটি বাড়ি, স্কুল, দোকান ও কারখানায় একটি করে ফার্স্ট-এইড বক্স ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা এখন সময়ের দাবি।