আমড়ার পরিচিতি ও উৎপত্তি
আমড়া একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল, যার স্বাদ টক-মিষ্টি এবং যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে সমান জনপ্রিয়। ইংরেজিতে একে Hog plum বা Ambarella বলা হয়। গবেষণা অনুযায়ী, আমড়ার চাষ প্রথম শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে। পরবর্তীতে বাণিজ্য ও কৃষি বিনিময়ের মাধ্যমে এটি ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে আসে। শত শত বছর আগে এই ফল বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে গ্রামীণ আঙিনা থেকে শুরু করে শহরের বাগান ও বাজারে ছড়িয়ে পড়ে।
আমড়ার পুষ্টিগুণ
আমড়া ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ একটি ফল। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রাতকানা প্রতিরোধে সহায়তা করে। লোহা রক্তের হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করে রক্তস্বল্পতা দূর করে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁত মজবুত করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষ ক্ষয় রোধ করে এবং অকাল বার্ধক্য বিলম্বিত করে।

আমড়া খাওয়ার প্রচলিত উপায়
১. কাঁচা আমড়া – লবণ ও মরিচ দিয়ে কেটে খাওয়া হয়, যা মুখের স্বাদ বাড়ায়।
২. পাকা আমড়া – প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদে সরাসরি খাওয়া হয়।
৩. আচার – কাঁচা বা আধাপাকা আমড়া মশলা, তেল ও ভিনেগার দিয়ে আচার বানিয়ে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা হয়।
৪. জুস – পাকা আমড়া ব্লেন্ড করে ঠান্ডা পানীয় হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
৫. জ্যাম ও জেলি – আমড়ার মাংসল অংশ থেকে মিষ্টি সংরক্ষণযোগ্য খাবার তৈরি করা হয়।
আমড়া দিয়ে জ্যাম তৈরির প্রক্রিয়া
প্রথমে পাকা আমড়া ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে বীজ ফেলে দিতে হবে। এরপর কেটে অল্প পানিতে সেদ্ধ করতে হবে, যাতে মাংসল অংশ নরম হয়। সেদ্ধ আমড়া ঠান্ডা হলে ব্লেন্ডারে মিহি করে পিউরি তৈরি করতে হবে। প্রতি ১ কেজি পিউরির সঙ্গে ৭০০ গ্রাম চিনি ও সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাঝারি আঁচে চুলায় বসাতে হবে। চিনি গলে গেলে ও মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে গরম অবস্থায় জীবাণুমুক্ত কাচের বোতলে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে।

আমড়া দিয়ে জেলি তৈরির প্রক্রিয়া
পাকা আমড়ার রস বের করে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে, যাতে আঁশ বা কঠিন অংশ না থাকে। প্রতি কাপ রসের সঙ্গে তিন-চতুর্থাংশ কাপ চিনি মিশিয়ে চুলায় দিয়ে নেড়ে জেলি ঘন করে তুলতে হবে। সঠিক ঘনত্ব এলে গরম অবস্থায় জীবাণুমুক্ত বোতলে ভরে ঢাকনা লাগাতে হবে। ঠান্ডা হলে এটি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
আমড়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
আমড়া খাওয়া বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ভিটামিন সি সর্দি-কাশি ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, লোহা রক্তস্বল্পতা দূর করে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ক্ষয় রোধ করে। প্রাকৃতিক আঁশ হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখের ঘা ও ত্বকের অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এবং এটি চুল পড়া কমাতেও সাহায্য করে।

শিশুদের জন্য আমড়া
শিশুদের জন্য আমড়া উপকারী হলেও বয়স ও পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। ৬ মাসের নিচে শিশুকে আমড়া দেওয়া উচিত নয়। ৬ মাসের পর থেকে রস ছেঁকে অল্প পরিমাণে দেওয়া যেতে পারে। ১ বছর বা তার বেশি বয়সে নরম মাংসল অংশ চটকে অল্প লবণ দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুদের জন্য এর উপকারিতা হলো—
· রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
· হাড় ও দাঁত মজবুত করা
· ক্ষুধা বাড়ানো
· রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ
তবে অবশ্যই বীজ ও আঁশ ফেলে দিতে হবে, যাতে শ্বাসরোধের ঝুঁকি না থাকে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















