০৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নোভোএয়ারের ডিজিটাল সাফল্য: এক্সেলেন্স ইন বিজনেস ২০২৫ পুরস্কার অর্জন দুবাইয়ে সোনার ঝলক, ইতিহাস গড়ে ২২ ক্যারেট ছুঁল ৫০০ দিরহাম বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা নিয়ে ভারতের কাছে গভীর উদ্বেগ জানাল ঢাকা পদ্মা ব্যাংকের একশ তেত্রিশতম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত ঘরের মাটিতে যুদ্ধের প্রস্তুতি: ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনে ধীরগতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ চিপের স্বনির্ভরতার স্বপ্নে আমেরিকার লাল ফিতার বাধা অর্গান সঙ্গীতে ধ্যানের আমন্ত্রণ এলেন আরকব্রো ম্যানহাটনে ফিরছে বামিয়ান বুদ্ধ, ধ্বংসের স্মৃতি থেকে মানবতার নতুন প্রতীক ক্যামেরায় ধরা পড়ল মেরু ভালুকের বিরল দত্তক গল্প, প্রকৃতিতে নজিরবিহীন ঘটনা আগুনের ঘরে একা কুকুর, ধোঁয়া ভেদ করে মানবতার সাহসী উদ্ধার

নাবিস্কো বিস্কুটের দীর্ঘ ইতিহাস

বিস্কুট মূলত ইউরোপীয় খাবার। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে উনিশ শতকের শুরুতে বেকারিগুলো হাতে তৈরি বিস্কুট বিক্রি করত। আমেরিকায় শিল্প বিপ্লবের পর দ্রুত নগরায়ণ শুরু হলে মানুষের দ্রুত, টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের চাহিদা তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় নাবিস্কো বিস্কুট।

১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ছোট ছোট বেকারি একত্র হয়ে National Biscuit Company প্রতিষ্ঠা করে। এখান থেকেই “Nabisco” নামের উৎপত্তি। লক্ষ্য ছিল—গুণগতমানের বিস্কুটকে শিল্পায়িত উৎপাদনের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

প্রথম বিপ্লব: “Uneeda Biscuit”

নাবিস্কোর প্রথম বড় সাফল্য ছিল ১৮৯৮ সালেই বাজারে আনা Uneeda Biscuit। এটি ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ব্র্যান্ডেড ও প্যাকেটজাত বিস্কুট।

তৎকালীন সময়ে বাজারে বিস্কুট বিক্রি হতো খোলা অবস্থায়, যেগুলো ধুলাবালি, জীবাণু ও আর্দ্রতায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যেত। নাবিস্কো তখন নতুন ধরনের “In-er-seal” প্যাকেজিং চালু করে, যা বায়ুরোধী ছিল। ফলে বিস্কুট টাটকা ও নিরাপদ থাকত। এই প্রযুক্তি ভোক্তাদের আস্থা জোগায় এবং “Uneeda Biscuit” হয়ে ওঠে নাবিস্কোর পরিচয়ের প্রতীক।

ব্র্যান্ড নাম ও পরিচয়ের বিবর্তন

“National Biscuit Company” নামটি দীর্ঘ ও জটিল হওয়ায় ধীরে ধীরে সংক্ষিপ্ত রূপ Nabisco প্রচলিত হয়। প্রথমদিকে বিজ্ঞাপন ও প্যাকেটে ছোট করে ‘Nabisco’ লেখা থাকলেও পরে সেটিই কোম্পানির আনুষ্ঠানিক নাম হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ শতকের শুরুতে নাবিস্কো বিজ্ঞাপনকে শিল্পে পরিণত করে। সংবাদপত্র, দেয়ালচিত্র ও রেডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের বিস্কুটকে পারিবারিক খাদ্য ও শিশুদের আদর্শ নাশতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

পণ্যের বৈচিত্র্যের বিস্তার

Uneeda Biscuit-এর সাফল্যের পর নাবিস্কো একে একে বহু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বাজারে আনে। প্রতিটি পণ্যের পেছনে আলাদা কৌশল ছিল।

Oreo Cookie (১৯১২): বিশ্বের সবচেয়ে বিক্রিত স্যান্ডউইচ কুকি। এর চকোলেট বিস্কুট ও ভ্যানিলা ক্রিম ফিলিং ভোক্তাদের মনে এক বিশেষ জায়গা দখল করে। বর্তমানে ওরিও ১০০টিরও বেশি দেশে বিক্রি হয় এবং নানান স্বাদে তৈরি হচ্ছে।

Ritz Cracker (১৯৩৪): সহজপাচ্য, হালকা নোনতা বিস্কুট। তখন আমেরিকায় মহামন্দা চলছিল, তাই “Ritz” নামটি এক ধরনের বিলাসিতা ও আশাবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

Saltine Crackers: হালকা ও ক্রিসপি এই বিস্কুট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রান্নাঘরে অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

Chips Ahoy! (১৯৬৩): চকোলেট চিপ কুকি, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

এভাবে নাবিস্কো কেবল বিস্কুট নয়, বিভিন্ন ধরনের কুকি ও ক্র্যাকার তৈরি করে বৈচিত্র্য ও বাজার দখলে সক্ষম হয়।

আন্তর্জাতিক বিস্তার

১৯৫০-এর দশক থেকে নাবিস্কো তাদের পণ্য আমেরিকার বাইরে রপ্তানি শুরু করে। ধীরে ধীরে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারেও প্রবেশ করে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে, নাবিস্কোর বিস্কুট আমদানি ও পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হয়।

বাংলাদেশে নাবিস্কোর প্রবেশ

বাংলাদেশে নাবিস্কো প্রথমে আমদানি করা হতো। ১৯৭০-এর দশক থেকে শহুরে বাজারে নাবিস্কোর ওরিও, রিটজ ও অন্যান্য বিস্কুট পাওয়া যেত, যদিও এগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্ত পরিবারে এটি তখন ছিল এক ধরনের “বিলাসবহুল বিস্কুট”।

পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অংশীদারিত্বে নাবিস্কোর কিছু পণ্য দেশে উৎপাদন শুরু হয়। ঢাকার বড় বড় দোকান ও সুপারশপে এর উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। শিশুদের জন্মদিন, স্কুল টিফিন, ঈদ ও পূজার কেনাকাটায় নাবিস্কোর বিস্কুট একটি আলাদা জায়গা করে নেয়।

বিজ্ঞাপন ও বাজার কৌশল

বাংলাদেশে নাবিস্কোর বিজ্ঞাপন টেলিভিশন, রেডিও এবং বিলবোর্ডে প্রচারিত হয়। শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় কার্টুন চরিত্র ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন বানানো হয়, যা তাদের কাছে বিস্কুটটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।

টিভিতে ওরিওর বিজ্ঞাপন— “খুলুন, চেটে খান, ডুবিয়ে খান”—বাংলাদেশের শিশুরাও আমেরিকার বিজ্ঞাপন স্টাইল অনুসরণ করে মজা করে খেতে শুরু করে। এতে শুধু পণ্যের স্বাদ নয়, ভোক্তার মনে আবেগ ও আনন্দও তৈরি হয়।

সামাজিক প্রভাব

বাংলাদেশে নাবিস্কো বিস্কুট শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, বরং সামাজিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে যারা বিদেশফেরত আত্মীয়দের কাছ থেকে নাবিস্কো বিস্কুট পেতেন, তাদের কাছে এটি ছিল এক ধরনের মর্যাদার প্রতীক।

শহরের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের কাছে ওরিও বা রিটজ পাওয়া মানে আনন্দ ও উৎসব।

ধীরে ধীরে দেশের বাজারে স্থানীয় উৎপাদন শুরু হলে এর দাম কমে যায় এবং এটি আরও সহজলভ্য হয়।

কর্পোরেট মালিকানার পরিবর্তন

নাবিস্কোর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।

১৯৮৫ সালে R.J. Reynolds নামক তামাক কোম্পানি নাবিস্কোকে কিনে নেয়।

২০০০ সালে Philip Morris নাবিস্কোকে অধিগ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে তা Kraft Foods-এর অংশ হয়ে যায়।

২০১২ সালে Kraft Foods বিভক্ত হয়ে নতুন কোম্পানি Mondelez International গঠিত হয়। বর্তমানে নাবিস্কোর পণ্য Mondelez-এর অধীনেই উৎপাদিত ও বিপণন করা হচ্ছে।

সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য

নাবিস্কো শুধু একটি বিস্কুট নয়, বরং আধুনিক খাদ্যশিল্পের বিকাশের প্রতীক।

এটি প্রমাণ করেছে কীভাবে প্যাকেজিং প্রযুক্তি খাদ্যসংরক্ষণে বিপ্লব আনতে পারে।

কীভাবে ব্র্যান্ডিং ও বিজ্ঞাপন একটি সাধারণ খাদ্যপণ্যকে সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত করতে পারে।

এবং কীভাবে একটি কোম্পানি স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশে নাবিস্কো বাজারজাতকরণও এক অর্থে ভোক্তা সংস্কৃতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ, শিশুদের চাহিদা, এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে “ব্র্যান্ডেড বিস্কুট”—সবকিছুর সঙ্গে নাবিস্কোর নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

উপসংহার

আজকের দিনে নাবিস্কো (Nabisco) শুধু একটি বিস্কুট কোম্পানি নয়, বরং বৈশ্বিক খাদ্যশিল্পের একটি কিংবদন্তি। ওরিও, রিটজ, চিপস আহয় কিংবা সাল্টিন—প্রতিটি পণ্যই কোটি কোটি মানুষের জীবনধারার অংশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও এটি কেবল স্বাদের নয়, সামাজিক মর্যাদা ও প্রজন্মের স্মৃতির প্রতীক।


জনপ্রিয় সংবাদ

নোভোএয়ারের ডিজিটাল সাফল্য: এক্সেলেন্স ইন বিজনেস ২০২৫ পুরস্কার অর্জন

নাবিস্কো বিস্কুটের দীর্ঘ ইতিহাস

১০:০০:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

বিস্কুট মূলত ইউরোপীয় খাবার। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে উনিশ শতকের শুরুতে বেকারিগুলো হাতে তৈরি বিস্কুট বিক্রি করত। আমেরিকায় শিল্প বিপ্লবের পর দ্রুত নগরায়ণ শুরু হলে মানুষের দ্রুত, টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের চাহিদা তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় নাবিস্কো বিস্কুট।

১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ছোট ছোট বেকারি একত্র হয়ে National Biscuit Company প্রতিষ্ঠা করে। এখান থেকেই “Nabisco” নামের উৎপত্তি। লক্ষ্য ছিল—গুণগতমানের বিস্কুটকে শিল্পায়িত উৎপাদনের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

প্রথম বিপ্লব: “Uneeda Biscuit”

নাবিস্কোর প্রথম বড় সাফল্য ছিল ১৮৯৮ সালেই বাজারে আনা Uneeda Biscuit। এটি ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ব্র্যান্ডেড ও প্যাকেটজাত বিস্কুট।

তৎকালীন সময়ে বাজারে বিস্কুট বিক্রি হতো খোলা অবস্থায়, যেগুলো ধুলাবালি, জীবাণু ও আর্দ্রতায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যেত। নাবিস্কো তখন নতুন ধরনের “In-er-seal” প্যাকেজিং চালু করে, যা বায়ুরোধী ছিল। ফলে বিস্কুট টাটকা ও নিরাপদ থাকত। এই প্রযুক্তি ভোক্তাদের আস্থা জোগায় এবং “Uneeda Biscuit” হয়ে ওঠে নাবিস্কোর পরিচয়ের প্রতীক।

ব্র্যান্ড নাম ও পরিচয়ের বিবর্তন

“National Biscuit Company” নামটি দীর্ঘ ও জটিল হওয়ায় ধীরে ধীরে সংক্ষিপ্ত রূপ Nabisco প্রচলিত হয়। প্রথমদিকে বিজ্ঞাপন ও প্যাকেটে ছোট করে ‘Nabisco’ লেখা থাকলেও পরে সেটিই কোম্পানির আনুষ্ঠানিক নাম হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ শতকের শুরুতে নাবিস্কো বিজ্ঞাপনকে শিল্পে পরিণত করে। সংবাদপত্র, দেয়ালচিত্র ও রেডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের বিস্কুটকে পারিবারিক খাদ্য ও শিশুদের আদর্শ নাশতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

পণ্যের বৈচিত্র্যের বিস্তার

Uneeda Biscuit-এর সাফল্যের পর নাবিস্কো একে একে বহু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বাজারে আনে। প্রতিটি পণ্যের পেছনে আলাদা কৌশল ছিল।

Oreo Cookie (১৯১২): বিশ্বের সবচেয়ে বিক্রিত স্যান্ডউইচ কুকি। এর চকোলেট বিস্কুট ও ভ্যানিলা ক্রিম ফিলিং ভোক্তাদের মনে এক বিশেষ জায়গা দখল করে। বর্তমানে ওরিও ১০০টিরও বেশি দেশে বিক্রি হয় এবং নানান স্বাদে তৈরি হচ্ছে।

Ritz Cracker (১৯৩৪): সহজপাচ্য, হালকা নোনতা বিস্কুট। তখন আমেরিকায় মহামন্দা চলছিল, তাই “Ritz” নামটি এক ধরনের বিলাসিতা ও আশাবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

Saltine Crackers: হালকা ও ক্রিসপি এই বিস্কুট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রান্নাঘরে অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

Chips Ahoy! (১৯৬৩): চকোলেট চিপ কুকি, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

এভাবে নাবিস্কো কেবল বিস্কুট নয়, বিভিন্ন ধরনের কুকি ও ক্র্যাকার তৈরি করে বৈচিত্র্য ও বাজার দখলে সক্ষম হয়।

আন্তর্জাতিক বিস্তার

১৯৫০-এর দশক থেকে নাবিস্কো তাদের পণ্য আমেরিকার বাইরে রপ্তানি শুরু করে। ধীরে ধীরে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারেও প্রবেশ করে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে, নাবিস্কোর বিস্কুট আমদানি ও পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হয়।

বাংলাদেশে নাবিস্কোর প্রবেশ

বাংলাদেশে নাবিস্কো প্রথমে আমদানি করা হতো। ১৯৭০-এর দশক থেকে শহুরে বাজারে নাবিস্কোর ওরিও, রিটজ ও অন্যান্য বিস্কুট পাওয়া যেত, যদিও এগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্ত পরিবারে এটি তখন ছিল এক ধরনের “বিলাসবহুল বিস্কুট”।

পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অংশীদারিত্বে নাবিস্কোর কিছু পণ্য দেশে উৎপাদন শুরু হয়। ঢাকার বড় বড় দোকান ও সুপারশপে এর উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। শিশুদের জন্মদিন, স্কুল টিফিন, ঈদ ও পূজার কেনাকাটায় নাবিস্কোর বিস্কুট একটি আলাদা জায়গা করে নেয়।

বিজ্ঞাপন ও বাজার কৌশল

বাংলাদেশে নাবিস্কোর বিজ্ঞাপন টেলিভিশন, রেডিও এবং বিলবোর্ডে প্রচারিত হয়। শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় কার্টুন চরিত্র ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন বানানো হয়, যা তাদের কাছে বিস্কুটটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।

টিভিতে ওরিওর বিজ্ঞাপন— “খুলুন, চেটে খান, ডুবিয়ে খান”—বাংলাদেশের শিশুরাও আমেরিকার বিজ্ঞাপন স্টাইল অনুসরণ করে মজা করে খেতে শুরু করে। এতে শুধু পণ্যের স্বাদ নয়, ভোক্তার মনে আবেগ ও আনন্দও তৈরি হয়।

সামাজিক প্রভাব

বাংলাদেশে নাবিস্কো বিস্কুট শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, বরং সামাজিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে যারা বিদেশফেরত আত্মীয়দের কাছ থেকে নাবিস্কো বিস্কুট পেতেন, তাদের কাছে এটি ছিল এক ধরনের মর্যাদার প্রতীক।

শহরের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের কাছে ওরিও বা রিটজ পাওয়া মানে আনন্দ ও উৎসব।

ধীরে ধীরে দেশের বাজারে স্থানীয় উৎপাদন শুরু হলে এর দাম কমে যায় এবং এটি আরও সহজলভ্য হয়।

কর্পোরেট মালিকানার পরিবর্তন

নাবিস্কোর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।

১৯৮৫ সালে R.J. Reynolds নামক তামাক কোম্পানি নাবিস্কোকে কিনে নেয়।

২০০০ সালে Philip Morris নাবিস্কোকে অধিগ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে তা Kraft Foods-এর অংশ হয়ে যায়।

২০১২ সালে Kraft Foods বিভক্ত হয়ে নতুন কোম্পানি Mondelez International গঠিত হয়। বর্তমানে নাবিস্কোর পণ্য Mondelez-এর অধীনেই উৎপাদিত ও বিপণন করা হচ্ছে।

সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য

নাবিস্কো শুধু একটি বিস্কুট নয়, বরং আধুনিক খাদ্যশিল্পের বিকাশের প্রতীক।

এটি প্রমাণ করেছে কীভাবে প্যাকেজিং প্রযুক্তি খাদ্যসংরক্ষণে বিপ্লব আনতে পারে।

কীভাবে ব্র্যান্ডিং ও বিজ্ঞাপন একটি সাধারণ খাদ্যপণ্যকে সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত করতে পারে।

এবং কীভাবে একটি কোম্পানি স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশে নাবিস্কো বাজারজাতকরণও এক অর্থে ভোক্তা সংস্কৃতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ, শিশুদের চাহিদা, এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে “ব্র্যান্ডেড বিস্কুট”—সবকিছুর সঙ্গে নাবিস্কোর নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

উপসংহার

আজকের দিনে নাবিস্কো (Nabisco) শুধু একটি বিস্কুট কোম্পানি নয়, বরং বৈশ্বিক খাদ্যশিল্পের একটি কিংবদন্তি। ওরিও, রিটজ, চিপস আহয় কিংবা সাল্টিন—প্রতিটি পণ্যই কোটি কোটি মানুষের জীবনধারার অংশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও এটি কেবল স্বাদের নয়, সামাজিক মর্যাদা ও প্রজন্মের স্মৃতির প্রতীক।