জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া
সাভারের এক গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতেন নেরু(ছদ্মনাম) । দশ মাস আগে হঠাৎ করেই ছাঁটাইয়ের তালিকায় চলে আসেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের পর কারখানায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলে মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেয়। ফলে চাকরি হারিয়ে ফেলেন নেরু। এরপর থেকেই শুরু হয় তার সংগ্রামের নতুন অধ্যায়।
গার্মেন্টসে চাকরির বেতনে কোনোমতে সংসার চালাতেন তিনি। স্ত্রী, দুই সন্তান আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। চাকরি হারানোর পর প্রথমদিকে আত্মীয়স্বজন আর ঋণের টাকা দিয়ে কিছুদিন টিকে ছিলেন। কিন্তু সেই পথ দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।

বেকারত্ব ও হতাশা
নেরুর চেষ্টা থেমে থাকেনি। তিনি ভ্যান চালানো থেকে শুরু করে বাজারে দিনমজুরি—সবকিছু করেছেন। কিন্তু গার্মেন্টসের কাজ শিখে বড় হওয়া এই মানুষটির পক্ষে অন্য খাতে মানিয়ে নেওয়া সহজ ছিল না। প্রতিদিন কাজের খোঁজে ঘুরেফিরে শেষে হাতে কিছুই আসত না। একসময় মনে হতে থাকে, সমাজে তার আর কোনো জায়গা নেই।
আর্থিক চাপের পাশাপাশি পরিবারে খাবারের চাহিদা মেটানোই বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানদের স্কুলের ফি বাকি পড়ে যায়, ভাড়া মেটাতে না পেরে বাড়িওয়ালার চাপ বাড়তে থাকে।
অপরাধের পথে পা
এই সংকটেই নেরু ভুল পথে হাঁটতে শুরু করেন। এলাকায় পরিচিত এক দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। ছোটখাটো ছিনতাই থেকে শুরু করে রাতে চুরি—সবকিছুর সঙ্গেই তার সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। অবশেষে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন।
নেরুর নিজের ভাষায়, “আমি চাইনি এ পথে আসতে। কিন্তু পরিবারের ক্ষুধার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে আর কোনো উপায় দেখিনি।”

সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রশ্ন
নেরুর গল্প নিছক একজন মানুষের নয়, বরং বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সংকটের প্রতিচ্ছবি। গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করে যারা সংসার টিকিয়ে রেখেছিলেন, তাদের অনেকেই আজ বেকার। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন বা বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ দুর্বল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থানের সংকট, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, আর পুনর্বাসনের সীমাবদ্ধতা অনেক শ্রমিককে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। নেরু সেই শিকারদের একজন মাত্র।
পরিবার ও ভবিষ্যৎ
নেরুর স্ত্রী জানালেন, তিনি চান না তার স্বামী অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকুক। কিন্তু পরিবারের খাবার জোগাড় করার চাপই তাকে বারবার এই পথে ঠেলে দেয়। সন্তানরা বাবাকে এখনও “হিরো” মনে করে, কিন্তু বড় হতে হতে হয়তো একদিন জেনে যাবে বাবার প্রকৃত পথচলার কথা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















