এশিয়া থেকে ইউরোপে কনটেইনার পরিবহনে নতুন রেকর্ড
এই বছরের প্রথম ছয় মাসে এশিয়া থেকে ইউরোপগামী কনটেইনার পরিবহন ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাপান মেরিটাইম সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন সময়ে মোট ৯৫৭১,১০৮ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) পণ্য পরিবাহিত হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৮.৯ শতাংশ বেশি। এটি প্রথম ছয় মাসের জন্য সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এর আগে ২০২৪ সালে ৮.৭৯ মিলিয়ন টিইইউ পরিবাহিত হয়েছিল, যখন গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে লোহিত সাগরে হামলার কারণে সুয়েজ খালের পরিবহন ব্যাহত হয়েছিল। সেই বছরই পূর্ণ বছরের হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮.১৮ মিলিয়ন টিইইউ পরিবহন রেকর্ড করা হয়।
চীনের প্রভাবশালী ভূমিকা
ইউরোপমুখী এশীয় কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৮০ শতাংশই মূল ভূখণ্ড চীন বা হংকং থেকে এসেছে। চীনের রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ৯.৭ শতাংশ বেড়েছে, যা সামগ্রিক বৃদ্ধির প্রধান কারণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রপ্তানি বেড়েছে ৮.৮ শতাংশ এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়া (জাপানসহ) বেড়েছে ২.৭ শতাংশ।
জাপান মেরিটাইম সেন্টারের তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র ও বিছানার সামগ্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা এই পরিবর্তনের মূল চালক। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের কারণে চীন–যুক্তরাষ্ট্র পণ্য পরিবহন তিন মাস ধরে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে চীন বিকল্প বাজার হিসেবে ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি বাড়িয়েছে।
জাপানের কানাগাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকুমা মাতসুদা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির বিকল্প হিসেবে ইউরোপে রপ্তানি বাড়ানোই বছরের প্রথম ভাগে কনটেইনার পরিবহন বৃদ্ধির মূল কারণ।
ইউরোপ-আমেরিকা বাণিজ্যে তৎপরতা
এদিকে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বসন্তকালে তৎপরতা দেখা গেছে। শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে অটোমোবাইল, ওষুধ, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। গবেষক তাকেশি তাকায়ামার মতে, এতে এশিয়া থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের চাহিদাও বেড়েছে।
জুন মাসের প্রবণতা
শুধু জুন মাসেই এশিয়া থেকে ইউরোপে ১৬২৫,২৮২ টিইইউ পরিবাহিত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩ শতাংশ বেশি। তবে গ্রেটার চীন থেকে রপ্তানি সামান্য ০.৩ শতাংশ কমেছে। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে পরিবহন প্রায় ১০ শতাংশ কম হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি কিছুটা মন্থর হয়েছে।
ইউরোপীয় অর্থনীতি স্থবির অবস্থায় থাকায় ভোক্তা পণ্যের চাহিদাও দুর্বল। যদিও জার্মানির বৃহৎ আর্থিক প্রণোদনা কর্মসূচি ভবিষ্যতে পরিবহন বাড়াতে পারে, তবে ইউরোপের দেশগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে।
ভাড়া ও জাহাজ সরবরাহের পরিবর্তন
বর্তমানে চীন ও ইউরোপ কনটেইনার পরিবহনের স্পট ভাড়া প্রতি টিইইউ ১,৬৬৮ ডলারে নেমে এসেছে। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন শুল্ক বিরতির পর ইউরোপমুখী কিছু জাহাজ মার্কিন রুটে চলে যায়, ফলে এশিয়া-ইউরোপ রুটে ভাড়া বেড়েছিল। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি থেকে মার্কিন রুটের ভাড়া কমে গেলে ইউরোপমুখী রুটেও ভাড়া হ্রাস পায়।
গত বছর থেকে নতুন জাহাজ নির্মাণ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে জাহাজের সরবরাহ বাড়ছে। এর ফলে ভাড়া আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অধ্যাপক মাতসুদা বলেন, ইউরোপমুখী ভাড়া কমতে থাকবে এবং দক্ষিণ আমেরিকা বা আফ্রিকা রুটের সরবরাহ-চাহিদার ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে ভাড়ায় ওঠানামা হতে পারে।
চীন ইউরোপমুখী কনটেইনার পরিবহন রেকর্ড পর্যায়ে নিয়ে গেছে
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০২:০৭:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 35
জনপ্রিয় সংবাদ




















