আস্থা ভোটের ঘোষণা এবং সংকটের সূচনা
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু আগামী মাসে আস্থা ভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্যবসায়ী মহল। ৮ সেপ্টেম্বরের ভোটে বিরোধী দলগুলো সরকারকে পতনের মুখে ঠেলে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। হঠাৎ করা এ ঘোষণা ইউরোজোনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
জনগণের আস্থা হারানো ও নতুন নির্বাচনের দাবি
বাইরুর ঘোষণার পরপরই করা জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফরাসি নাগরিক নতুন জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে। এতে রাজনীতির প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তার ঝুঁকি স্পষ্ট হয়েছে।
ব্যবসায়ী মহলের উদ্বেগ
দেশটির বৃহত্তম খুচরা প্রতিষ্ঠান ক্যারিফোরের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্দ্রে বম্পার্ড বলেন, “রাষ্ট্রের কার্যক্রমের সঙ্গেই আমাদের মনোবল জড়িত। এখনকার মতো অনিশ্চয়তা যত বাড়ে, ভোক্তারা কেনাকাটা স্থগিত করে এবং অর্থনীতির ওপর বড় আঘাত আসে।”
তিনি জানান, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফরাসি অর্থনীতি ০.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা মূলত ভোক্তা ব্যয়ের কারণে সম্ভব হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “শুধুমাত্র ভোগব্যয়ই প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, যা মন্দার ঝুঁকি তৈরি করছে।”
মেদেফ নিয়োগকর্তা সংগঠনের প্রধান প্যাট্রিক মার্টিনও এ পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যারা মনে করেন অর্থনীতি নিয়ে খেলা করা যায়, তারা আমাদের বিশাল ঝুঁকির মুখে ফেলছেন।”
বাজেট ও রাজনৈতিক কৌশল
বাইরু ২০২৬ সালের বাজেট সংকোচনের পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধীদের সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাব এড়াতেই আস্থা ভোটের ঘোষণা দেন। কিন্তু উল্টো বিরোধী দলগুলো এখনই তাকে সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা স্বীকার করছে যে ঘাটতি ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি, তবে বাইরুর প্রস্তাবিত পথ তারা মানতে রাজি নয়।
বাইরুর পরিকল্পনায় রয়েছে ৪৪ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয়, যার মধ্যে দুটি সরকারি ছুটি বাতিল ও সরকারি ব্যয় স্থগিতের প্রস্তাব রয়েছে। তবে এই ঘোষণা বাজারে বড় ধাক্কা দেয় এবং ফরাসি ও ইতালির ১০ বছরের বন্ডের সুদে ব্যবধান দ্রুত কমে আসে।
ম্যাক্রোঁর অবস্থান
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যার মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত, বারবার জানিয়েছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না বা নতুন সংসদ নির্বাচন ডাকবেন না। যদিও বিরোধী দল এবং বিপুল সংখ্যক ফরাসি নাগরিক নতুন নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।
জরিপে দেখা গেছে, ৫৬ থেকে ৬৯ শতাংশ মানুষ নতুন সংসদ নির্বাচন চান। টোলুনা হ্যারিস ইন্টারঅ্যাক্টিভ-এর জরিপে ৪১ শতাংশ মানুষ চেয়েছেন, কট্টরপন্থী ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি দল ক্ষমতায় আসুক। তবে একইসঙ্গে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা এ দলের প্রধানমন্ত্রী চান না।
অন্যদিকে এলাবের জরিপে ৬৭ শতাংশ জানিয়েছেন, বাইরু আস্থা ভোটে হেরে গেলে ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ করা উচিত। একই ফলাফল এসেছে আইফপ-এর জরিপেও।
সরকারি মুখপাত্র সোফি প্রিমাস জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ম্যাক্রোঁ সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা করেননি। বরং তিনি বাইরুর কৌশলকেই সমর্থন করেছেন।
প্রতিবাদ ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি
রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর নতুন বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে, যা বামপন্থী দল ও কিছু শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থন পাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন প্রধানমন্ত্রী আসুক বা আগাম নির্বাচন হোক—দুই অবস্থাতেই ফ্রান্সকে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হবে।
২০১৭ সালে ম্যাক্রোঁ রাজনীতি ও অর্থনীতিকে আধুনিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তবে ধারাবাহিক সংকট—বিক্ষোভ, কোভিড-১৯ মহামারী ও মুদ্রাস্ফীতি—তার সেই পরিকল্পনা ব্যাহত করেছে। এখন নতুন রাজনৈতিক সংকট ফ্রান্সের অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে আবারও কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ফরাসি রাজনৈতিক সংকট বড় অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করছে: ব্যবসায়ী মহলের সতর্কতা
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০২:১২:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 33
জনপ্রিয় সংবাদ




















