ফ্যাশনে বিপ্লবী পরিবর্তন
শত শত ডিজাইনারের নাম আমাদের পোশাক ও কল্পনায় থাকলেও অল্প কিছু মানুষই বাস্তবে আমাদের পোশাকের ধরণ বদলাতে পেরেছেন। বেশিরভাগ ডিজাইনার পরিচিত ছকের ভেতরেই রদবদল করেন। কিন্তু যাঁরা স্থায়ীভাবে ফ্যাশনের অভিধান বদলান, তাঁরাই ইতিহাসে স্থান করে নেন। ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের “নিউ লুক”, কোকো শ্যানেলের “কার্ডিগান স্যুট” আর “লিটল ব্ল্যাক ড্রেস”, কিংবা ইভ সাঁ লরাঁর “সাফারি স্যুট” ও “স্মোকিং জ্যাকেট”—এসব ছিল একেকটি মাইলফলক।
জর্জিও আরমানি, যিনি গত বৃহস্পতিবার ৯১ বছর বয়সে মারা গেলেন, তাঁদের কাতারেই স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি নির্বাহী থেকে সেলিব্রিটির পোশাকের ছক পাল্টে দিয়েছিলেন।
স্যুটের ছন্দ বদলে দেওয়া
আরমানি স্যুটের কাট ঢিলে করে প্রমাণ করেছিলেন, শক্তি প্রকাশ মানে সবসময় আগ্রাসন নয়। তিনি ১৯৭৫ সালে “গ্রেইজ” শব্দ চালু করেন—ধূসর আর বেইজের মিশ্রণ, যা তাঁর স্বাক্ষর রঙে পরিণত হয়। পাশাপাশি মিনিমালিজমে ঝলমল যোগ করে তারকার গ্ল্যামারকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেন।
এই সব পরিবর্তন এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে আজ সেগুলো স্বাভাবিক মনে হয়। এটাই প্রমাণ করে তিনি কত বড় রূপকার ছিলেন।
আরমানির নীরব শক্তি
আরমানির পোশাক ছিল একই সঙ্গে বর্ম আর ইউনিফর্ম, কিন্তু কখনোই আক্রমণাত্মক নয়। সেগুলো থেকে আসত নিয়ন্ত্রিত প্রশান্তি ও স্বাধীনতা। আরমানি সবসময় ইমেজ ও পরিবেশের নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়েছেন—এটাই তাঁর পরিচিতি ও প্রতিশ্রুতির অংশ।
তাঁর নকশা যেমন ছিল শান্ত, তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর কর্তৃত্বও প্রকাশ করত। অসুস্থ হয়ে প্যারিস যাওয়া সম্ভব না হলেও গত জুলাইয়ে তিনি ইমেইলে লিখেছিলেন: “আমি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ফিটিং থেকে শুরু করে সিকোয়েন্স ও মেকআপ—সব কিছুর তদারকি করেছি। যা দেখা যাবে, সবই আমার অনুমোদিত।”

ফ্যাশনের সাম্রাজ্য
আরমানির এই একাগ্রতা তাঁকে শুধু ইতালির অন্যতম ধনী ব্যক্তিতেই পরিণত করেনি, বরং জাতীয় সাফল্যের প্রতীক বানিয়েছে। তাঁর নাম হয়ে উঠেছে ইতালিয়ান স্টাইলের বিশ্বদূত।
তিনি শুধু পোশাক নয়, বরং মেকআপ, সুগন্ধি থেকে শুরু করে পুরো পরিবেশকেও ছুঁয়ে গিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন অ্যাভিনিউতে খোলা আরমানি স্টোর, রেস্তোরাঁ ও অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং তার প্রমাণ। মিলানে তাঁর নিজস্ব আরমানি থিয়েট্রোতে নিয়মিত শো হতো, যা ছিল তাঁর বৃহৎ সাম্রাজ্যের অংশ।
সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতা
তবে সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক সময় তিনি নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতেন। নতুন কিছু চেষ্টা করলে—যেমন ঝুলওলা প্যান্ট, হ্যারেম প্যান্ট, ব্লুমার বা লেডি গাগার অদ্ভুত পোশাক—তা সবসময় স্বতঃস্ফূর্ত লাগত না।
তাঁর ছিল অদ্ভুত টুপি ও অতিরিক্ত রোগা মডেলের প্রতি ঝোঁক। তবে সমতল জুতোর প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রমাণ করেছে দূরদৃষ্টি।
২০১৪ সালে ভোগ সম্পাদক আনা উইনটুর তাঁর শোতে না আসায় তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখান, বলেন: “আপনি যদি দাঁতের ডাক্তার দেখাতে যান আর তিনি সহকারীর কাছে পাঠিয়ে দেন, কেমন লাগবে?” পরে অবশ্য তাঁদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার প্রবণতা
অনেকে কিনতে চাইলে তিনি কখনোই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি। সারাজীবন তিনি একক শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি “জর্জিও আরমানি ফাউন্ডেশন” গঠন করেন যাতে তাঁর মৃত্যুর অন্তত পাঁচ বছর পর পর্যন্ত কোম্পানি বিক্রি বা পাবলিক অফার না করা যায়।
নিজের শেষ দিকের ইমেইলে তিনি লিখেছিলেন: “যতদূর এসেছি, তা আমার কঠোর মনোযোগ আর সবকিছুর প্রতি আবেগী নিয়ন্ত্রণের জন্য।” এটি তাঁর আত্মসচেতন স্বীকারোক্তি এবং কার্যত একটি শোকগাথা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















