০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
একীভূত আইনি চুক্তির মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক বিচার চীনের জলসীমায় স্টারলিংক ব্যবহার: বিদেশি জাহাজকে জরিমানা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪২) সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্থির আবহাওয়া: বৃষ্টি ও দুর্ঘটনায় দুবাই–শারজাহজুড়ে সন্ধ্যায় তীব্র যানজট অসম্ভবকে সম্ভব মনে করা অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, পঞ্চান্নেও ব্যস্ত ও আত্মবিশ্বাসী জীবন যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি

১ লাখ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রা

ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসার জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০ লাখ) ফি চালু করার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভারতীয়রা। এই অর্থ দিতে হবে সেইসব মার্কিন কোম্পানিকে, যারা বিদেশি প্রযুক্তি দক্ষ কর্মীদের স্পনসর করে।

ভিসা কোটা অপরিবর্তিতকিন্তু চাপ বাড়বে

বর্তমান লটারি ব্যবস্থায় প্রতিবছর ৮৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয়দের দখলে। এরপর আসে চীন, প্রায় ১১-১২ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ লাখ ভারতীয় এই ভিসায় কাজ করছেন, বেশিরভাগই প্রযুক্তি খাতে।

আগে ভিসা ফি ছিল গড়ে ২১৫ ডলার, বিশেষ ক্ষেত্রে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত। এখন ১ লাখ ডলার মানে ২০ থেকে ১০০ গুণ বেশি, যা নতুন আবেদন প্রক্রিয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে।

আয়ের চেয়ে বেশি ফি

এই ফি অনেক ক্ষেত্রেই একজন নতুন এইচ-১বি ভিসাধারীর বার্ষিক বেতনের চেয়েও বেশি। গড় বেতনের ৮০ শতাংশের সমান এই ফি কার্যত পুরো প্রোগ্রামকে ধ্বংস করবে।

সামাজিক প্রভাব

এই ভিসা ভারতীয়দের জন্য আমেরিকায় উন্নত জীবনের দরজা খুলেছে। পরিবারসহ হিসাব করলে ভারতীয়-আমেরিকান জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের সঙ্গে এই ভিসার যোগ রয়েছে। আজকের দিনে তারা যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক শিক্ষিত ও উচ্চ আয়ের অভিবাসী গোষ্ঠী।

ভারতের কোম্পানিগুলোও দীর্ঘদিন ধরে তাদের নবীন ও মধ্যম পর্যায়ের প্রকৌশলীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে এই ভিসা ব্যবহার করেছে। ইনফোসিস, টিসিএস, উইপ্রোসহ বড় প্রতিষ্ঠান যেমন ভরসা করেছে, তেমনি অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটও ভারতীয় তরুণদের আনার জন্য এটি ব্যবহার করেছে।

মার্কিন সরকারের যুক্তি

মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, “ট্রেইনি পাঠানো আর সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ দিতে হলে আমেরিকানদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” তার দাবি, এভাবে “উচ্চ আয়ের কর্মী” আনা সম্ভব হবে, যেখানে আগের নীতিতে “নিম্ন আয়ের কর্মীরা আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিত।”

জরুরি নির্দেশনা

ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ভিসাধারী ও তাদের পরিবার যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকেন, তবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরতে হবে, নইলে আটকে পড়ার ঝুঁকি আছে।

প্রযুক্তি খাতের প্রতিক্রিয়া

এলন মাস্কসহ উদ্যোক্তারা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পর্যাপ্ত দক্ষ লোক নেই। তাই এই ভিসা টার্গেট করা মার্কিন প্রযুক্তি খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে।

২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসনে সর্বাধিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, প্রায় ৪ লাখ। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ছিল নবায়ন। অথচ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে বাতিলের হার পৌঁছেছিল ২৪ শতাংশে।

ভারতের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ভারতে বিষয়টি রাজনৈতিক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কোনো শক্তি নেই।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, “বাহুবল প্রদর্শন, স্লোগান, কনসার্ট আর ‘মোদি, মোদি’ ধ্বনি বিদেশনীতি নয়।” তিনি এই ভিসা ফি-কে ব্যঙ্গ করে মোদির জন্মদিনে ট্রাম্পের দেওয়া “উপহার” আখ্যা দিয়েছেন।

সম্ভাব্য সুযোগ

কিছু প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবসায়ী মনে করছেন, এতে ভারত থেকে প্রতিভা চলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে, কিংবা যারা গিয়েছিলেন তারা ফিরে আসতে পারেন। তবে সেটি বাস্তবে কতটা ঘটবে, তা সময়ই বলবে।

মোদির প্রতিক্রিয়া

মোদী সরাসরি ভিসা ফি প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। তবে বারবার “আত্মনির্ভর ভারত”-এর কথা বলেছেন। গুজরাটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বিদেশ নির্ভরতা। এই শত্রুকেই একসঙ্গে পরাজিত করতে হবে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

একীভূত আইনি চুক্তির মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক বিচার

১ লাখ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রা

০৮:৫৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসার জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০ লাখ) ফি চালু করার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভারতীয়রা। এই অর্থ দিতে হবে সেইসব মার্কিন কোম্পানিকে, যারা বিদেশি প্রযুক্তি দক্ষ কর্মীদের স্পনসর করে।

ভিসা কোটা অপরিবর্তিতকিন্তু চাপ বাড়বে

বর্তমান লটারি ব্যবস্থায় প্রতিবছর ৮৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয়দের দখলে। এরপর আসে চীন, প্রায় ১১-১২ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ লাখ ভারতীয় এই ভিসায় কাজ করছেন, বেশিরভাগই প্রযুক্তি খাতে।

আগে ভিসা ফি ছিল গড়ে ২১৫ ডলার, বিশেষ ক্ষেত্রে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত। এখন ১ লাখ ডলার মানে ২০ থেকে ১০০ গুণ বেশি, যা নতুন আবেদন প্রক্রিয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে।

আয়ের চেয়ে বেশি ফি

এই ফি অনেক ক্ষেত্রেই একজন নতুন এইচ-১বি ভিসাধারীর বার্ষিক বেতনের চেয়েও বেশি। গড় বেতনের ৮০ শতাংশের সমান এই ফি কার্যত পুরো প্রোগ্রামকে ধ্বংস করবে।

সামাজিক প্রভাব

এই ভিসা ভারতীয়দের জন্য আমেরিকায় উন্নত জীবনের দরজা খুলেছে। পরিবারসহ হিসাব করলে ভারতীয়-আমেরিকান জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের সঙ্গে এই ভিসার যোগ রয়েছে। আজকের দিনে তারা যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক শিক্ষিত ও উচ্চ আয়ের অভিবাসী গোষ্ঠী।

ভারতের কোম্পানিগুলোও দীর্ঘদিন ধরে তাদের নবীন ও মধ্যম পর্যায়ের প্রকৌশলীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে এই ভিসা ব্যবহার করেছে। ইনফোসিস, টিসিএস, উইপ্রোসহ বড় প্রতিষ্ঠান যেমন ভরসা করেছে, তেমনি অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটও ভারতীয় তরুণদের আনার জন্য এটি ব্যবহার করেছে।

মার্কিন সরকারের যুক্তি

মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, “ট্রেইনি পাঠানো আর সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ দিতে হলে আমেরিকানদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” তার দাবি, এভাবে “উচ্চ আয়ের কর্মী” আনা সম্ভব হবে, যেখানে আগের নীতিতে “নিম্ন আয়ের কর্মীরা আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিত।”

জরুরি নির্দেশনা

ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ভিসাধারী ও তাদের পরিবার যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকেন, তবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরতে হবে, নইলে আটকে পড়ার ঝুঁকি আছে।

প্রযুক্তি খাতের প্রতিক্রিয়া

এলন মাস্কসহ উদ্যোক্তারা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পর্যাপ্ত দক্ষ লোক নেই। তাই এই ভিসা টার্গেট করা মার্কিন প্রযুক্তি খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে।

২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসনে সর্বাধিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, প্রায় ৪ লাখ। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ছিল নবায়ন। অথচ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে বাতিলের হার পৌঁছেছিল ২৪ শতাংশে।

ভারতের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ভারতে বিষয়টি রাজনৈতিক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কোনো শক্তি নেই।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, “বাহুবল প্রদর্শন, স্লোগান, কনসার্ট আর ‘মোদি, মোদি’ ধ্বনি বিদেশনীতি নয়।” তিনি এই ভিসা ফি-কে ব্যঙ্গ করে মোদির জন্মদিনে ট্রাম্পের দেওয়া “উপহার” আখ্যা দিয়েছেন।

সম্ভাব্য সুযোগ

কিছু প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবসায়ী মনে করছেন, এতে ভারত থেকে প্রতিভা চলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে, কিংবা যারা গিয়েছিলেন তারা ফিরে আসতে পারেন। তবে সেটি বাস্তবে কতটা ঘটবে, তা সময়ই বলবে।

মোদির প্রতিক্রিয়া

মোদী সরাসরি ভিসা ফি প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। তবে বারবার “আত্মনির্ভর ভারত”-এর কথা বলেছেন। গুজরাটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বিদেশ নির্ভরতা। এই শত্রুকেই একসঙ্গে পরাজিত করতে হবে।”