অংশীদারিত্বের পুনঃনিশ্চিতকরণ
যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে তাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই অংশীদারিত্বের মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান, অভিন্ন মূল্যবোধ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি।
এই সম্পর্কের মূল চুক্তি হলো কমপ্যাক্ট অব ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন (COFA)। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রকে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের একক অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং অন্য কোনো দেশের সামরিক বাহিনীকে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও প্রদান করা হয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডার অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারো মজুরো সফরে যান। এ সময় দুই দেশ COFA চুক্তির বাস্তবায়ন উদযাপন করে এবং একাধিক নতুন উদ্যোগের ঘোষণা দেয়।
নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে সহায়তা
আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সংসদ ভবন (নিটিজেলা) পুনর্নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র ১৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে।
এই প্রকল্পে তাইওয়ানও আর্থিক সহায়তা দেবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা এই বিপর্যয় থেকে দেশটিকে পুনরুদ্ধারে পাশে থাকবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: ন্যাশনাল গার্ডের সম্পৃক্ততা
মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট মিলে নতুন স্টেট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম (SPP) চালু করবে। এর আওতায় মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে গুয়াম ও নেব্রাস্কার ন্যাশনাল গার্ড যৌথভাবে কাজ করবে।
তাদের মূল দায়িত্ব হবে:
- সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা
- মাদক প্রতিরোধ অভিযান
- সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা
এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
সীমান্ত সুরক্ষা ও মৎস্যসম্পদ রক্ষা
দুই দেশ এনহ্যান্সড শিপরাইডার এগ্রিমেন্ট সম্পন্ন করতে চলেছে। এর লক্ষ্য হলো:
- অবৈধ, অনিবন্ধিত এবং অনিয়ন্ত্রিত (IUU) মাছ ধরা প্রতিরোধ
- মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (EEZ) সুরক্ষিত রাখা
- আন্তঃসংস্থার প্রশিক্ষণ এবং মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা
এছাড়া সীমান্তে চোরাচালান রোধে যুক্তরাষ্ট্র উন্নতমানের পোর্ট স্ক্যানার সরবরাহ করবে।
অবকাঠামো ও জননিরাপত্তা উন্নয়ন
নিটিজেলা ভবনের অগ্নিকাণ্ডের পর নিরাপত্তা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে:
- আধুনিক ফায়ার ট্রাক সরবরাহ করবে
- ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার বিদ্যমান সরঞ্জাম মেরামত ও উদ্ধারকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করবে
- ইউএস ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (USTDA) গুরুত্বপূর্ণ ডেলাপ ডক উন্নয়নে প্রাথমিক প্রকল্প অর্থায়ন অনুমোদন করেছে
এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করবে।
পরিবহন ও সংযোগ জোরদার
তাইওয়ান এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ৮.৩ মিলিয়ন ডলার দেবে। এ অর্থ ব্যয় হবে:
- এয়ার মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পুরনো বিমান বহর পরিবর্তন
- কোয়াজালেইন অ্যাটলসহ অন্যান্য দ্বীপে দুর্যোগ মোকাবিলা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন
এটি দেশের ভৌগোলিক বিস্তৃত এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমের গতি বাড়াবে।
COFA চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন
COFA চুক্তির নতুন সংস্করণ ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের পথে। সাম্প্রতিক সময়ে:
- মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের নাগরিকদের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড বণ্টন অনুমোদিত হয়েছে
- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে
- ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা অনুদান এবং ট্রাস্ট ফান্ড বণ্টনের পরিকল্পনা করা হয়েছে
এর লক্ষ্য হলো দুই দেশের জনগণের জন্য টেকসই সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
স্বাস্থ্যসেবা ও দুর্যোগ মোকাবিলা
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা চিকিৎসা ও প্রকৌশল মহড়া চালাবে। এর মাধ্যমে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মানুষের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ উন্নত হবে।
এছাড়া COFA-এর আওতায় মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ প্রস্তুতি মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
আইন প্রয়োগ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবিস্ফোরিত গোলা অপসারণ
- মাদকবিরোধী তদন্তে সহায়তার জন্য ড্রাগ টেস্টিং কিট সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র
- পুলিশের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবিস্ফোরিত গোলা (UXO) শনাক্তকরণ ও প্রশিক্ষণ অর্থায়ন করবে
- ইতোমধ্যে মালোএলাপ, উওতজে ও জলুইট অ্যাটল থেকে সফলভাবে UXO অপসারণ করা হয়েছে
- মিলি অ্যাটল এলাকায় ২০২৬ সালে পরবর্তী অভিযান চলবে
উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর
১৭-১৮ সেপ্টেম্বর, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ পালাউ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ সফর করেন।
পালাউতে তিনি রাষ্ট্রপতি সুরাঙ্গেল হুইপস জুনিয়র এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার নিয়ে বৈঠক করেন।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে তিনি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সংসদ ভবন পুনর্নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেন এবং একটি আধুনিক ফায়ার ট্রাক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়া তিনি অবৈধ মাছ ধরা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, যা সাউথ প্যাসিফিক টুনা চুক্তির অধীনে চলমান সহযোগিতার অংশ।
সারসংক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের এই চুক্তি শুধুমাত্র সামরিক সম্পর্ক নয়, বরং অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং অবকাঠামো উন্নয়নেও বড় অবদান রাখবে।
নতুন উদ্যোগগুলো দুই দেশের জনগণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ও আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।