শোক ও বাস্তবতা
আমি চার্লি কার্কের পরিবারের জন্য শোকাহত। তার চিন্তাভাবনার সঙ্গে আমি প্রায় কিছুতেই একমত ছিলাম না, কিন্তু তারও বেঁচে থাকার অধিকার ছিল। কাজের সফরে গিয়ে নিরাপদে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানের কাছে ফেরা তার অধিকার ছিল—যেমনটি আমারই রাজ্য অ্যারিজোনায় থাকা একজন নাগরিকের হওয়া উচিত।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সাবেক আইনসভা স্পিকার মেলিসা হর্টম্যানেরও নিরাপদে স্বামী ও কুকুরসহ নিজের বাড়িতে থাকার অধিকার ছিল। কিন্তু গত জুনে এক রাতে তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও রাজনৈতিক প্রচার চালানোর অধিকার ছিল, হত্যাচেষ্টার ভয়ে নয়। গত গ্রীষ্মেই তার ওপর দুইবার হামলার চেষ্টা হয়েছিল।
আমারও অধিকার ছিল ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচনী এলাকার মানুষদের সঙ্গে নিরাপদে সাক্ষাৎ করার। কিন্তু সেদিন আমি প্রায় নিহত হতে বসেছিলাম। ওই ঘটনায় ১৮ জনকে গুলি করা হয় এবং ছয়জন নিহত হন।
আমাদের গল্প ভিন্ন হলেও মিল একটি জায়গায়—যারা আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল, তাদের হাতে বন্দুক ছিল।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা
রাজনৈতিক সহিংসতা এবং রাজনৈতিক বক্তৃতার সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়ে আমাদের অবশ্যই কথা বলতে হবে। সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও আমাদের সৎভাবে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু বারবার যে সমস্যাটি আমাদের সামনে আসে, সেটি হচ্ছে বন্দুক সহিংসতা। এ বিষয়ে সরাসরি পদক্ষেপ না নিলে আমরা মূল সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি না।
শিশু থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা পর্যন্ত—কেউই এই ঝুঁকির বাইরে নয়। সম্প্রতি মিনেসোটার একটি গির্জায় প্রার্থনার সময় শিশুদেরও গুলি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের অতিরিক্ততা
আমেরিকায় এখন মানুষের চেয়ে বন্দুকের সংখ্যা বেশি। কিছু অঙ্গরাজ্য ব্যাকগ্রাউন্ড চেক, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অস্ত্র ব্যবহার ঠেকানো, নিরাপদে অস্ত্র সংরক্ষণের মতো আইন করেছে। এগুলো বন্দুক অপরাধ কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু ইউটাহের মতো অঙ্গরাজ্যগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সেখানে বন্দুক সহিংসতায় প্রতি ২০ ঘণ্টায় একজন মারা যান। ২০১৪ সালের পর থেকে সেখানে বন্দুক-সম্পর্কিত মৃত্যুর হার ৪৫% বেড়েছে, আর দুই দশকে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। চার্লি কার্কও ইউটাহেই নিহত হন। তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই আবার কলোরাডোর একটি স্কুলে দুই শিক্ষার্থীকে গুলি করা হয়।
জনমত ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা
আমেরিকানদের বিশাল অংশই এই সহিংসতা বন্ধ করতে চান। জরিপ বলছে—
- রিপাবলিকান ভোটারের ৯০% চান আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করা হোক,
- ৯২% চান সব বন্দুক বিক্রির আগে ব্যাকগ্রাউন্ড চেক,
- ৮০% চান ভূতুড়ে (ট্র্যাক করা যায় না এমন) বন্দুক রাস্তায় না থাকুক,
- ৭৮% চান বন্দুক রাখার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হোক।
অর্থাৎ জনগণ অনেক বেশি একতাবদ্ধ, কিন্তু ওয়াশিংটনের রাজনীতিবিদরা এ বিষয়ে একমত হতে ব্যর্থ।
কংগ্রেসকে সরাসরি আহ্বান
গুলিতে আহত হওয়ার কারণে আমার জন্য কথা বলা কঠিন। কিন্তু এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলো দেখে কংগ্রেসের প্রতি আমার বার্তা স্পষ্ট: শুধু প্রার্থনা করবেন না, কিছু করুন।
মানুষ প্রতিনিধিদের ভোট দেয় তাদের কাছ থেকে কার্যকর আইন আশা করে, শুধু প্রার্থনা শোনার জন্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ করার মতো নীতিমালা এখনই করা সম্ভব—বন্দুক বিক্রির ফাঁকফোকর বন্ধ, সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচি চালু, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা, অবৈধভাবে কাজ করা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তি—এসব দ্বিদলীয় সমর্থনও পেয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা: আমেরিকানদের জীবনকে বন্দুকশিল্পের অর্থের চেয়ে অগ্রাধিকার দিন।
ব্যক্তিগত ক্ষতি ও সার্বজনীন শিক্ষা
যে দিন আমাকে গুলি করা হয়, সে দিন আমার রিপাবলিকান বন্ধু বিচারক জন রোল নিহত হন। আমরা সবকিছুতে একমত ছিলাম না, কিন্তু একসাথে কাজ করতাম। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মাত্র নয় বছর বয়সী ক্রিস্টিনা টেইলর গ্রিন, যিনি সদ্য ক্লাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের পরিবার কখনোই আর পূর্ণ হবে না। যেমন চার্লি কার্কের পরিবারও আর হবে না।
ওয়াশিংটনের সহকর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান—সাহস দেখান, ভয় নয়। দেশের প্রতি আনুগত্য দেখান, দলীয় স্বার্থ নয়। আপনারা জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা করতে পারেন তা হলো—তাদের নিরাপদ রাখা নিশ্চিত করা।