কিংবদন্তি স্টুডিওর নতুন যাত্রা
লন্ডনের টিন প্যান অ্যালির বিখ্যাত রিজেন্ট সাউন্ডস রেকর্ডিং স্টুডিও আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। একসময় এই স্টুডিওতে রেকর্ড করেছিলেন জিমি হেন্ড্রিক্স, ডেভিড বাউই, দ্য রোলিং স্টোনস ও আরও বহু খ্যাতনামা শিল্পী। ষাট ও সত্তরের দশকে যে স্টুডিও রক অ্যান্ড রোলের কেন্দ্রস্থল ছিল, বহু বছর নীরব থাকার পর সেখানে শুরু হয়েছে কোটি কোটি পাউন্ডের বিনিয়োগ। নতুনভাবে সাজিয়ে এটিকে রক, জ্যাজ ও ব্লুজ প্রেমীদের জন্য স্মৃতিচিহ্নে ভরা এক ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সংরক্ষিত ইতিহাস ও প্রদর্শনী
স্টুডিওর আসল দেয়াল, মেঝের টালি ও রেকর্ডিং যন্ত্রাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাইটে খুঁজে পাওয়া নানা স্মারক সামগ্রী নিয়ে আয়োজন হবে প্রদর্শনী। টিন প্যান অ্যালি বা ডেনমার্ক স্ট্রিট বহু দশক ধরে সঙ্গীত প্রকাশক, বাদ্যযন্ত্রের দোকান ও গীতিকারদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রদর্শিত হবে টি-বোন ওয়াকারের ১৯৪৯ সালের কিংবদন্তি গিবসন গিটারটি, যা পঞ্চাশের দশকের রক বিপ্লবের সূচনা করে এবং চাক বেরি, বিবি কিং থেকে কিথ রিচার্ডস পর্যন্ত অসংখ্য শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
দোকানের সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ
একই ভবনের রিজেন্ট সাউন্ডস গিটার শপও নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। আগের তুলনায় চার গুণ বড় জায়গায় এখন মানুষ সাউন্ডপ্রুফ বুথে বসে যন্ত্র বাজিয়ে দেখতে পারবেন। প্রায় ছয় মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগে দোকানটি চালু হচ্ছে বৃহস্পতিবার, তবে স্টুডিওর সংস্কারকাজ সম্পূর্ণ হতে আরও এক বছর লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্য বিটলস থেকে রোলিং স্টোনস
১৯৬৭ সালে দ্য বিটলস তাদের বিখ্যাত অ্যালবাম সার্জেন্ট পেপারস লোনলি হার্টস ক্লাব ব্যান্ড-এর গুরুত্বপূর্ণ গান ‘ফিক্সিং আ হোল’ এই স্টুডিওতে রেকর্ড করেছিল। পল ম্যাককার্টনি পরে স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, একদিন এক ব্যক্তি নিজেকে যিশু খ্রিস্ট দাবি করে দরজায় হাজির হন। মজার ছলে তাকে ভেতরে আসতেও দেওয়া হয়। দ্য রোলিং স্টোনস তাদের প্রথম হিট গান ‘নট ফেড অ্যাওয়ে’ এখানে রেকর্ড করেছিল। কিথ রিচার্ডস পরে বলেছিলেন, “আমরা দুই-ট্র্যাক রিভক্স দিয়ে একটা ঘরে রেকর্ড করতাম, যার দেয়াল মোড়া ছিল ডিমের কার্টনে।”
দ্য কিংক্স, জেনেসিস ও দ্য ঈগলসও এই স্টুডিওতে রেকর্ড করেছে, যা একটি প্রজন্মের সঙ্গীতের ধরণ বদলে দেয়।
পবিত্র ভূমি হিসেবে সঙ্গীত ঐতিহ্য
স্টুডিওর সহ মালিক প্যাট্রিক রাস বললেন, “এটি আসলেই পবিত্র ভূমি। এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন হেন্ড্রিক্স, এখানেই বাজিয়েছেন দ্য রোলিং স্টোনস ও ডেভিড বাউই।” রাস নিজে আবিষ্কারক হিসেবে সম্পদ গড়েছেন, তিনি তৈরি করেছিলেন বিশ্বের প্রথম তিন-দিকের পানির কল ও নিরাপদ অনলাইন ডাউনলোড প্রযুক্তি। তার বিনিয়োগে রয়েছে নিকনের সঙ্গে সহযোগিতা, যেখানে যন্ত্রগুলো অতুলনীয়ভাবে স্ক্যান করে তাদের প্রামাণিকতা যাচাই করা যাবে।
এই সপ্তাহে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হচ্ছে টনি বেকনের নতুন বই ‘ইলেকট্রিক ব্লুজ!’ টি-বোন ওয়াকার অ্যান্ড দ্য গিটার দ্যাট স্টার্টেড ইট অল। বেকনের মতে, রিজেন্ট সাউন্ডস রকপ্রেমীদের কাছে একদিন তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্বজুড়ে ভক্তদের আকর্ষণ
রাস জানালেন, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি দল দোকানের সামনে ছবি তোলে, সারা পৃথিবী থেকে মানুষ আসে—এটি এক প্রকার আচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহ মালিক ক্রিসপিন ওয়েইর বলেন, “স্টুডিওটি ছিল সস্তা, কিন্তু দারুণ সাউন্ড দিত। অন্য স্টুডিওতে তিন-চার গুণ দাম দিতে হতো।” ডিজিটাল যুগে যখন বহু স্টুডিও বন্ধ হয়ে যায়, এখন আবার মানুষ একসঙ্গে বসে রেকর্ড করার আকর্ষণ অনুভব করছে।
অ্যানালগ যুগে ফেরা
রিজেন্ট সাউন্ডস আবার অ্যানালগ্ স্টুডিও হিসেবে চালু হবে। সেই পুরনো যন্ত্রপাতিই ব্যবহার হবে, যেগুলো দিয়ে হেন্ড্রিক্সসহ অন্যরা রেকর্ড করেছিলেন, তবে এবার আর ছাদের ডিমের কার্টন থাকবে না।