ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা
ছুটি কাটাতে গিয়ে অচেনা শহরের ভিড়ভাট্টা পেরিয়ে হঠাৎ যদি পাওয়া যায় এমন একটি জায়গা, যেখানে স্থানীয়রা আপনাকে ঘরের মতো অভ্যর্থনা জানায়—এমন অভিজ্ঞতা ভ্রমণকারীদের জন্য অনন্য আনন্দের। কফিশপের বারিস্তা যখন মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়ে আপনার অর্ডার মনে রাখে, তখন এলাকা হয়ে ওঠে ভ্রমণের বিশেষ অংশ।
এই আনন্দটাকেই সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ গাইড টাইম আউট প্রতিবছর প্রকাশ করে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পাড়া বা এলাকার তালিকা। ২০২৫ সালের শীর্ষ তালিকার প্রথম স্থান দখল করেছে জাপানের রাজধানী টোকিওর জিমবুচো।
বইপ্রেমীদের স্বর্গ জিমবুচো
টাইম আউট জিমবুচোকে বর্ণনা করেছে ‘বইপ্রেমীদের স্বর্গ’ হিসেবে। এখানে রয়েছে প্রায় ১৩০টি পুরোনো বইয়ের দোকান। এর মধ্যে ইসেইডো বুকসেলার্স এবং কিতাজাওয়া বুকস্টোর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দিনভর বই ঘোরার পাশাপাশি কফিশপ সংস্কৃতি আর সুস্বাদু কারি হাউস জিমবুচোকে দিয়েছে ভিন্ন পরিচিতি।
তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া
টাইম আউটের বিশ্বব্যাপী সম্পাদক ও লেখকরা প্রতিবছর এই তালিকার জন্য মনোনয়ন দেন। পরে সংস্কৃতি, কমিউনিটি, বসবাসযোগ্যতা, খাবার-দাবার এবং সময়োপযোগী বৈশিষ্ট্যসহ নানা মানদণ্ডে এসব জায়গাকে মূল্যায়ন করা হয়।
টাইম আউটের ভ্রমণ সম্পাদক গ্রেস বিয়ার্ড বলেন, ‘এই তালিকার সবচেয়ে বড় বার্তা হলো—আমাদের এলাকাগুলো স্থানীয় কমিউনিটির দ্বারা গড়ে উঠছে এবং তাদের জন্যই টিকে আছে। অনেক কম পরিচিত জায়গা স্থানীয়দের কাছে ভীষণ প্রিয় এবং পর্যটকদেরও এগুলোতে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’
দ্বিতীয় স্থানে বোরগারহাউট, অ্যান্টওয়ার্প
বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরের বোরগারহাউট পেয়েছে দ্বিতীয় স্থান। একে বলা হয় শহরের সৃজনশীল হৃদয়। এখানে রয়েছে অসংখ্য গ্যালারি ও খাবারের দোকান। ক্যাফে জোসে আর পিজ্জা গ্যালারি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। প্রতিবছর চারবার অনুষ্ঠিত বোরগার নকটার্ন উৎসবের সময় পুরো এলাকাই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
তৃতীয় স্থানে ব্রাজিলের বার্রা ফুন্ডা
সাও পাওলোর পশ্চিমে অবস্থিত বার্রা ফুন্ডা পেয়েছে তৃতীয় স্থান। শিল্প-সংস্কৃতির আবহ আর পুরোনো শিল্পাঞ্চলের ইতিহাস একে করেছে বিশেষ আকর্ষণীয়। নতুন খোলা বার আগুয়া ই বিসকুইতো-তে ককটেল মিস না করার পরামর্শ দিয়েছে টাইম আউট।
লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েল চতুর্থ স্থানে
লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বের ক্যাম্বারওয়েল চতুর্থ স্থানে এসেছে। এটি তারুণ্যের উদ্দীপনা, স্বাধীন চেতনা আর বহুসাংস্কৃতিক আবহের জন্য পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা আনা প্রেস্টন বলেন, ‘দশ বছর ধরে এখানে বাস করছি। সবসময় জানতাম এটি একটি বিশেষ জায়গা। এখন সেটি স্বীকৃতি পাওয়া আনন্দের।’
ক্যাম্বারওয়েলের সাউথ লন্ডন গ্যালারি এবং অন্যান্য শিল্পকেন্দ্র এর বৈশিষ্ট্যকে আলাদা করে তোলে। পাশাপাশি স্থানীয় ক্যাফে, রেস্তোরাঁ আর পাব একে ভ্রমণকারীদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।
শিকাগোর অ্যাভনডেল পঞ্চম স্থানে
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ স্থানটি পেয়েছে শিকাগোর অ্যাভনডেল, যা রয়েছে তালিকার পঞ্চম স্থানে। এখানে রয়েছে ওয়াইন বার, ওয়েলনেস স্টুডিও, সঙ্গীত ভেন্যু এবং ভিন্নধর্মী ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অ্যাভনডেল বোল নামের রেট্রো বোলিং এলি ও কনসাইনমেন্ট লাউঞ্জ নামের বার বিশেষভাবে আলোচিত।
অ্যাভনডেল বোলের ব্যবস্থাপনা অংশীদার জেফ উইলসন বলেন, ‘আমাদের এলাকার ছোট ব্যবসাগুলো বিশ্বব্যাপী এই তালিকায় স্থান পাওয়ায় বোঝা যায়, এখানেই অসাধারণ সব কিছু ঘটছে।’
তালিকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এলাকা
২০২৫ সালের তালিকায় মোট ৩৯টি এলাকা জায়গা পেয়েছে। এর মধ্যে অনেক নতুন এলাকা রয়েছে, আবার কয়েকটি পুরোনো জায়গা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো তালিকায় এসেছে। যেমন, পর্তুগালের লিসবনের আঞ্জোস এবার রয়েছে ১২ নম্বরে, যা ২০২১ সালে ছিল ৩৪ নম্বরে।
টাইম আউটের মতে, কোনো কোনো এলাকা কয়েক বছর আগে তালিকায় জায়গা পেয়ে এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের উত্থান দেখছে, আবার কিছু জায়গা এখনো বিকাশের শীর্ষে রয়েছে।
২০২৫ সালের শীর্ষ ১০ এলাকা
১. জিমবুচো, টোকিও, জাপান
২. বোরগারহাউট, অ্যান্টওয়ার্প, বেলজিয়াম
৩. বার্রা ফুন্ডা, সাও পাওলো, ব্রাজিল
৪. ক্যাম্বারওয়েল, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
৫. অ্যাভনডেল, শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র
৬. মুল্লে-দং, সিওল, দক্ষিণ কোরিয়া
৭. মেনিলমঁতাঁ, প্যারিস, ফ্রান্স
৮. নাকাতসু, ওসাকা, জাপান
৯. ভাল্লিলা, হেলসিঙ্কি, ফিনল্যান্ড
১০. লাবোন, আক্রা, ঘানা