০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক অর্থনীতিতে—ডিজিটাল মিশরের উত্থান ইউফোরিয়া’ সিজন ৩—জ্যাকব এলর্ডির ইঙ্গিতে ফের উচ্ছ্বাস” প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১২) স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর শেষ অধ্যায়—নেটফ্লিক্সের মহাকাব্যিক সিরিজের অন্তরালের গল্প ‘হোয়েন দে বার্নড দ্য বাটারফ্লাই’—নারী গোপন সমাজের ইতিহাস ও আগুনের শক্তি নিয়ে ওয়েন–ই লির নতুন উপন্যাস মেগান লাউ—দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষার্থী থেকে ‘হাউস অব ড্যান্সিং ওয়াটার’-এর আকাশচারী নায়িকা সুদানের জ্বালানি পুনর্গঠনে রাশিয়া—যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধারে মস্কো প্রধান অংশীদার হতে পারে আফগানিস্তানে মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান—আসক্তি, ধর্মীয় উপদেশ ও পুনর্বাসনের নতুন বাস্তবতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৩) অফিসে ফিরছে ওয়াই-টু-কে ফ্যাশন—জেন জেডের হাতে ড্রেস কোডের বদল

পাকিস্তানে বন্যা ত্রাণ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব: বিলাওয়াল-বনাম মেরিয়াম বিতর্কে নতুন অধ্যায়

রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায়

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যা ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি জোর দিয়ে বলেন, বন্যা দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম (বিআইএসপি)। অন্যদিকে পিএমএল-এন নেতা ও পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী মেরিয়াম নওয়াজ অভিযোগ করেছেন, পিপিপি এই দুর্যোগকে ‘রাজনীতির হাতিয়ার’ বানাচ্ছে।


বিলাওয়ালের বক্তব্য: কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে

করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিলাওয়াল বলেন, বন্যার কারণে পাকিস্তানের কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি ফেডারেল সরকারকে জলবায়ু জরুরি অবস্থা ও কৃষি জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রভাবিত অঞ্চলের কৃষকদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ করতে হবে এবং ছোট কৃষকদের সহায়তায় সিন্ধু প্রাদেশিক সরকার ‘বেনজির হারি কার্ড’ চালু করেছে। এর মাধ্যমে ১ থেকে ২৫ একর জমির মালিক কৃষকরা ভর্তুকি ও সার সহায়তা পাবেন।

বিলাওয়াল সতর্ক করে বলেন, সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে দেশকে গম আমদানি করতে হবে, যা অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। তাই স্থানীয় কৃষিকে সহায়তা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।


ক্ষতির মাত্রা ও কেন্দ্রীয় ভূমিকার দাবি

বিলাওয়াল জানান, বন্যার ক্ষতি শুধু সিন্ধু নয়, পাঞ্জাব—বিশেষত দক্ষিণ পাঞ্জাবে—ঐতিহাসিক মাত্রায় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গিলগিট-বালতিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। বিআইএসপি’র ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোই একমাত্র কার্যকর উপায়। কোভিড মহামারিতেও একইভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিলাওয়ালের মতে, শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, “আপনি যদি ১০০ টাকা খরচ করেন, তা হলে ২০০ টাকা খরচ করা যেত। ১০০ জনকে সহায়তা দিলে ২০০ জনকেও দেওয়া যেত।” তিনি সমালোচনা করে বলেন, ফেডারেল সরকার আগেভাগে বৈশ্বিক আবেদন করলে আইএমএফের শর্ত শিথিল করার ব্যাপারেও দরকষাকষি শক্তিশালী হতো।


মেরিয়ামের পাল্টা অভিযোগ: ‘সরলীকৃত সমাধান’

দিনের শেষে ডেরা গাজী খানে এক অনুষ্ঠানে পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী মেরিয়াম নওয়াজ বলেন, “পিপিপি আমাদের মিত্র, কিন্তু তারা পাঞ্জাবের বন্যাকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছে।”

তিনি পিপিপিকে উদ্দেশ করে বলেন, “সিন্ধুতে এমন দুর্যোগ হলে পাঞ্জাব অবশ্যই পাশে দাঁড়াত। তাই দয়া করে এভাবে রাজনীতি করবেন না।”

বিআইএসপি’র প্রসঙ্গে মেরিয়াম জানান, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাত্র ১০ হাজার রুপি দেওয়া হয়, যা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি ঘোষণা দেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য তিনি ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত সহায়তা দেবেন।

মেরিয়ামের মতে, যারা ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসল হারিয়েছে, তারা ১০ হাজার রুপিতে কীভাবে পুনর্গঠন করবে? তাই তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণ ও ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।


আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রসঙ্গে মেরিয়ামের অবস্থান

আন্তর্জাতিক সাহায্য না চাওয়ার সমালোচনার জবাবে মেরিয়াম বলেন, “আমি নওয়াজ শরিফের মেয়ে; আমি ভিক্ষা চাইব না। কতদিন পাকিস্তান বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে হাত পেতে থাকবে?”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, এনএফসি (ন্যাশনাল ফিনান্স কমিশন) কোটি কোটি রুপি প্রদেশগুলোকে দেয়, কিন্তু এই অর্থ কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে?


পাকিস্তানের দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দল বন্যা ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে স্পষ্টতই ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। বিলাওয়াল ভুট্টো বিআইএসপিকে একমাত্র কার্যকর উপায় হিসেবে দেখছেন, আর মেরিয়াম নওয়াজ এটিকে অপর্যাপ্ত সমাধান আখ্যা দিয়ে বৃহত্তর ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সমন্বয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক অর্থনীতিতে—ডিজিটাল মিশরের উত্থান

পাকিস্তানে বন্যা ত্রাণ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব: বিলাওয়াল-বনাম মেরিয়াম বিতর্কে নতুন অধ্যায়

০৪:০৩:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায়

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যা ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি জোর দিয়ে বলেন, বন্যা দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম (বিআইএসপি)। অন্যদিকে পিএমএল-এন নেতা ও পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী মেরিয়াম নওয়াজ অভিযোগ করেছেন, পিপিপি এই দুর্যোগকে ‘রাজনীতির হাতিয়ার’ বানাচ্ছে।


বিলাওয়ালের বক্তব্য: কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে

করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিলাওয়াল বলেন, বন্যার কারণে পাকিস্তানের কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি ফেডারেল সরকারকে জলবায়ু জরুরি অবস্থা ও কৃষি জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রভাবিত অঞ্চলের কৃষকদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ করতে হবে এবং ছোট কৃষকদের সহায়তায় সিন্ধু প্রাদেশিক সরকার ‘বেনজির হারি কার্ড’ চালু করেছে। এর মাধ্যমে ১ থেকে ২৫ একর জমির মালিক কৃষকরা ভর্তুকি ও সার সহায়তা পাবেন।

বিলাওয়াল সতর্ক করে বলেন, সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে দেশকে গম আমদানি করতে হবে, যা অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। তাই স্থানীয় কৃষিকে সহায়তা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।


ক্ষতির মাত্রা ও কেন্দ্রীয় ভূমিকার দাবি

বিলাওয়াল জানান, বন্যার ক্ষতি শুধু সিন্ধু নয়, পাঞ্জাব—বিশেষত দক্ষিণ পাঞ্জাবে—ঐতিহাসিক মাত্রায় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গিলগিট-বালতিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। বিআইএসপি’র ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোই একমাত্র কার্যকর উপায়। কোভিড মহামারিতেও একইভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিলাওয়ালের মতে, শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, “আপনি যদি ১০০ টাকা খরচ করেন, তা হলে ২০০ টাকা খরচ করা যেত। ১০০ জনকে সহায়তা দিলে ২০০ জনকেও দেওয়া যেত।” তিনি সমালোচনা করে বলেন, ফেডারেল সরকার আগেভাগে বৈশ্বিক আবেদন করলে আইএমএফের শর্ত শিথিল করার ব্যাপারেও দরকষাকষি শক্তিশালী হতো।


মেরিয়ামের পাল্টা অভিযোগ: ‘সরলীকৃত সমাধান’

দিনের শেষে ডেরা গাজী খানে এক অনুষ্ঠানে পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী মেরিয়াম নওয়াজ বলেন, “পিপিপি আমাদের মিত্র, কিন্তু তারা পাঞ্জাবের বন্যাকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছে।”

তিনি পিপিপিকে উদ্দেশ করে বলেন, “সিন্ধুতে এমন দুর্যোগ হলে পাঞ্জাব অবশ্যই পাশে দাঁড়াত। তাই দয়া করে এভাবে রাজনীতি করবেন না।”

বিআইএসপি’র প্রসঙ্গে মেরিয়াম জানান, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাত্র ১০ হাজার রুপি দেওয়া হয়, যা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি ঘোষণা দেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য তিনি ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত সহায়তা দেবেন।

মেরিয়ামের মতে, যারা ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসল হারিয়েছে, তারা ১০ হাজার রুপিতে কীভাবে পুনর্গঠন করবে? তাই তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণ ও ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।


আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রসঙ্গে মেরিয়ামের অবস্থান

আন্তর্জাতিক সাহায্য না চাওয়ার সমালোচনার জবাবে মেরিয়াম বলেন, “আমি নওয়াজ শরিফের মেয়ে; আমি ভিক্ষা চাইব না। কতদিন পাকিস্তান বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে হাত পেতে থাকবে?”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, এনএফসি (ন্যাশনাল ফিনান্স কমিশন) কোটি কোটি রুপি প্রদেশগুলোকে দেয়, কিন্তু এই অর্থ কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে?


পাকিস্তানের দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দল বন্যা ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে স্পষ্টতই ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। বিলাওয়াল ভুট্টো বিআইএসপিকে একমাত্র কার্যকর উপায় হিসেবে দেখছেন, আর মেরিয়াম নওয়াজ এটিকে অপর্যাপ্ত সমাধান আখ্যা দিয়ে বৃহত্তর ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সমন্বয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।